করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর এর ভয়াবহতা আঁচ করা কষ্টকর নয়। কিন্তু এ ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় তা নিয়ে রয়েছে মতবিরোধ। গবেষকরা এখনও সঠিকভাবে বলতে পারছেন না যে, শুধুমাত্র বাতাসের মাধ্যমেই এ ভাইরাস ছড়ায় নাকি অন্য কোনো ভাবে। করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে দেয়া পরামর্শ তালিকায় বার বার হাত ধোয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এ বিষয়টিকে বিবেচনা করে সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক ব্যবহারকারীদের মোবাইল ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলেছেন।
গবেষক দলের মতে, সংক্রমণ এড়াতে চাইলে ঘন ঘন হাত ধোয়া ভালো। সেই সঙ্গে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীও নিরাপদ রাখতে হবে। আর নিত্য ব্যবহার সামগ্রীর মধ্যে মোবাইল ফোন সবচেয়ে বেশি অপরিচ্ছন্ন থাকে বলে এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে ব্যবহারকারীরা। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন করোনাভাইরাস থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিজের মোবাইলফোনটি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা মাস্ক পরার চেয়েও কার্যকর হতে পারে। গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের চার চিকিৎসক কোলেন থমাস, জুডি চেন, থাম হো মেং এবং লিম পিন পিন দেশটির জনসাধারণকে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করে একটি বার্তা দিলে তা মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু চার চিকিৎসকের ওই বার্তা নাচক করে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় কি না তা এখনও প্রমাণিত নয়। ফলে মাস্ক ব্যবহার করেই যে করোনাভাইরাসের বিপদ থেকে দূরে থাকা যাবে- সে নিশ্চয়তা নেই। বরং সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে হাতের মোবাইলফোনটিকেই তালিকায় সবার আগে রাখছেন সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল সেবার পরিচালক কেনেথ ম্যাক। এর আগে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, টয়লেটের কমোডে বসায় জায়গাটির চেয়েও মোবাইল ফোনের গায়ে বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া যায়, কারণ মানুষ নিয়মিত টয়লেট পরিষ্কার করলেও দিনের বড় একটি সময় হাতে রাখা মোবাইল ফোনটির পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবে না।
এদিকে ভয়াবহ থেকে অধিকতর ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে প্রাণঘাতি করোনা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধুমাত্র চীনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার চার জনে। চীনে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ হাজার ৯৭৭ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ হাজার ৩৭৬ জন। চীনের সকল প্রদেশে শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস। নিহতদের বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের। প্রদেশটির উহান শহর থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। সংক্রমণ ঠেকাতে হাসপাতাল নির্মাণ, করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট আবিষ্কারে সরকারি অনুমোদনসহ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আতঙ্কে জনমানবশূন্য ভৌতিক এলাকায় পরিণত হয়েছে চীনের একেকটি গ্রাম ও শহর। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। উহান শহরে স্টেডিয়াম, কনফারেন্স সেন্টারসহ কয়েকটি ভেন্যুকে অস্থায়ী হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবেলায় শুরু থেকে তাদের অবহেলা ও দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছে চীন। হুবেই প্রদেশের রাস্তা-ঘাট, অলি-গলিতে ওষুধ ছিটাচ্ছে প্রশাসন। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন মেডিকেল স্টাফরা। যাদেরকে সন্দেহ হচ্ছে তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথ গবেষণা চালিয়ে প্রাথমিক প্রতিষেধক তৈরি করেছেন। যেটি ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে প্রথমিক ধাপে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এটি যদি করোনা সারাতে কার্যকরীও হয় তবুও বেশ কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ২৭টি দেশে শনাক্ত হয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com