বর্তমানে কম্পিউটিংয়ের চাহিদা আলাদা হয়ে গেছে। স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলো প্রতি বছর নতুন নতুন পারফরম্যান্সসমৃদ্ধ ফোন বাজারে নিয়ে আসছে, আর ফাস্ট পারফরম্যানস আরো বেটার ফিচার পাওয়ার লক্ষ্যে অনেকে প্রতি বছর নতুন ফোন ক্রয় করছে।
আর পুরাতন ফোনগুলোকে হয় বিক্রি বা কাউকে উপহার দিয়ে দেন কিংবা নষ্ট করে ফেলেন, কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার পুরাতন স্মার্টফোন দিয়ে আপনি আরো প্রোডাক্টিভ হতে পারবেন? পুরাতন মোবাইল বিক্রি করে দেওয়াও অনেক ভালো অপশন, কেননা এতে নতুন ফোনটি কেনার অনেকটা সাপোর্ট পেয়ে যাবেন, কিন্তু এ লেখায় পুরাতন স্মার্টফোনের কিছু ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো আপনার কম্পিউটিং লাইফ বা সাধারণ জীবনকে আরেকটু সহজ করতে সাহায্য করবে।
ইন্টারনেট
আপনার পুরাতন স্মার্টফোনটিকে ডেডিকেটেড ইন্টারনেট ব্রাউজিং করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। হতে পারে ফোনটিকে রান্না ঘরে রেখে দিলেন, এতে রান্নার রেসিপিও ইন্টারনেট থেকে দেখা হবে, আবার রান্নাও করা হবে, আপনি নিশ্চয় চাইবেন না রান্না করতে গিয়ে তেল বা তরকারির ঝোল নতুন ফোনটিতে এসে পড়ে! তাই পুরাতন ফোনকে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করার কাজে লাগাতে পারেন।
শুধু ইন্টারনেট ব্রাউজিং কেন, সঙ্গে এতে ভিওআইপি কল যেমন স্কাইপ, ডুয়ো বা যেকোনো ভিডিও চ্যাট অ্যাপের জন্য ডেডিকেটেড ভাবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার প্রাইমারি স্মার্টফোন কখনো ওয়াই-ফাইয়ের মধ্যে রাখেন আবার ব্যবহার শেষে ওয়াই-ফাই ডিস্কানেট করে দেন, যাতে ব্যাটারি সেভ করা সম্ভব হয়। কিন্তু পুরাতন ফোনে সর্বদা ওয়াই-ফাই কানেক্ট করে রাখলেও কি অসুবিধা? সেখানে তো ব্যাটারি সেভিং দরকারি না, এতে আপনার কখনোই কোনো কল আর মিস হবে না। ব্যাস, হয়ে গেল আপনার ডেডিকেটেড ইন্টারনেট কলিং মেশিন!
পোর্টেবল ওয়াই-ফাই রাউটার
এই কৌশলটি সকলের উপকারে আসবে। বর্তমানে অনেক জায়গাতে ৩জি সিগন্যাল তো পাওয়াই যায় না। গ্রামাঞ্চলে আরো দুরবস্থা! দুর্বল নেটওয়ার্ক আর দুর্বল ইন্টারনেট স্পিড থেকে বাঁচতে আপনার পুরাতন ফোনটিকে পোর্টেবল ওয়াই-ফাই রাউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
হতে পারে আপনার অন্য রুমে ভালো সেল সিগন্যাল পাওয়া যায়, কিংবা হতে পারে ফোনটি আলমারির ওপরে এমনকি ব্যালকুনিতে রেখে ভালো থ্রিজি সিগন্যাল পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পুরাতন ফোনটিকে যেখানে ভালো সিগন্যাল আসে সেখানে চার্জে লাগিয়ে সেট করে রাখুন, আর প্রাইমারি ফোনটি দিয়ে পুরাতন ফোন থেকে ওয়াই-ফাই হটস্পট নিয়ে আরামে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে থাকুন, আপনি যেখানেই যান, ইন্টারনেট সিগন্যালের আর সমস্যা হবে না। আপনি চাইলে পুরাতন ফোনটিকে সর্বদাই ওয়াই-ফাই রাউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, এতে প্রাইমারি ফোনের ব্যাটারি সেভিং সম্ভব হবে। সঙ্গে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপগুলোতেও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
ডেডিকেটেড মিউজিক প্লেয়ার
আপনি যদি আমার মতো মিউজিক প্রেমী হয়ে থাকেন, তো কেন পুরাতন ফোনটিকে একটি ডেডিকেটেড মিউজিক প্লেয়ার বানাবেন না? আমার ব্লুটুথ স্পিকার বা যেকোনো স্টেরিয়ো স্পিকারের সঙ্গে ফোনটিকে কানেক্ট করে সর্বদা মিউজিক উপভোগ করতে পারবেন। আলাদা কোনো ডিভিডি প্লেয়ার বা মিউজিক প্লেয়ারের প্রয়োজন পড়বে না। সঙ্গে আপনি ইউটিউব ভিডিও ও স্ট্রিম করতে পারেন, সেগুলোকে স্পিকারে প্লে করতে পারেন। পছন্দের প্লে লিস্ট তৈরি করে রাখতে পারেন, যাতে মিউজিক প্লেয়ার শুধু আপনার পছন্দের গানগুলোই প্লে করে। আলাদা প্লেয়ার থেকে স্মার্টফোনকেই প্লেয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অনেক স্বাধীনতা এবং উপকারিতা রয়েছে।
যেকোনো গান আপনি অনলাইন থেকেই সরাসরি স্ট্রিম করতে পারবেন কিংবা ডাউনলোড করতে পারবেন। যাই হোক, আপনি একজন মিউজিক প্রেমী হয়ে থাকলে, আপনাকে বলার দরকার নেই, আপনি এমনিতেই অনেক সুবিধা খুঁজে নিতে পারবেন।
কারের স্মার্ট স্ক্রিন
যাদের গাড়ি রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে পুরাতন স্মার্টফোন কারে লাগিয়ে নেওয়াতে। আপনার ফোন কারের জিপিএস হিসেবে কাজ করতে পারবে। জাস্ট গুগল ম্যাপ ওপেন করুন আর কোথায় যেতে চান দেখিয়ে দিন, কারের আলাদা জিপিএস সিস্টেম লাগানোর টাকা থেকে বেঁচে যাবেন। সঙ্গে প্রয়োজনীয় মেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইনইন করে রাখলে আপনার প্রয়োজনের ইমেইল নোটিফিকেশনগুলো সর্বদাই আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
তাছাড়া গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে আপনি পছন্দের রেস্টুরেন্ট, হোটেল, সবকিছু সার্চ করতে পারবেন। চাইলে কারের ডিফল্ট ব্লুটুথ মিউজিক প্লেয়ার হিসেবেও পুরাতন স্মার্টফোনকে সামনে রেখে দিতে পারেন, স্মার্টফোন ট্যাচ স্ক্রিন থাকার জন্য আপনি আরো সুবিধা পাবেন, নিজের জীবন আরো সহজ হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, কারে ফোন আটকানোর আগে অবশ্যই ফোনটি চার্জে লাগিয়ে দেবেন, অবশ্যই কার চার্জার ব্যবহার করতে পারেন, এতে ফোনটির ব্যাটারি কখনোই মৃত হবে না।
আপনি চাইলে ফোনটিকে কারের ড্যাশবোর্ডে সেট করে ড্যাশক্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্লে স্টোরে অনেক অ্যাপ রয়েছে যেগুলো আপনার পুরাতন ফোনটিকে একটি ড্যাশক্যামে পরিণত করে দেবে। কারের ড্যাশক্যামের জন্য অনেক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যেতে পারবেন। অনেক অ্যাপ আপনাকে অনলাইন ভিডিও সেভ করার স্পেস প্রদান করে, এতে ড্যাশক্যাম থেকে রেকর্ড হওয়া ভিডিওগুলো সরাসরি ক্লাউডে চলে যাবে এবং আপনি পরে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডার
আপনার বাসাতে হয়তো ডেডিকেটেড ওয়াই-ফাই রাউটার রয়েছে, কিন্তু ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে আপনার রুমটি যদি একটু দূরে হয় বা কতিপয় দেওয়াল থাকে, তো সিগন্যাল ড্রপিং প্রবলেম নতুন কিছু ব্যাপার নয়। সিগন্যাল প্রবলেম মানেই খারাপ ব্যান্ডউইথ রেট। আর কাজের সময় ইন্টারনেট ব্রাউজার লোডিং দেখিয়ে বসে থাকলে মেজাজ কেমন হতে পারে, সেটা বর্ণনা করার দরকার নেই।
যাই হোক, এক্ষেত্রে আপনার পুরাতন স্মার্টফোনটিকে ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। জাস্ট রাউটারের কিছু কাছে বা আপনার ঘরের বাইরে স্মার্টফোনটিকে সেট করুন, এবার fqrouter2 অ্যাপটি ইন্সটল করলেই আপনার পুরাতন স্মার্টফোনটি ওয়াই-ফাই সিগন্যাল রিপিটার হিসেবে কাজ করবে, আর অবশ্যই আপনি আগের চেয়ে বেটার সিগন্যাল পাবেন। এরকম অ্যাপ কাজ করানোর জন্য অবশ্যই আপনার ফোন রুট থাকা আবশ্যক।
ইউনিভার্সাল রিমোট কন্ট্রোল
আপনার পুরাতন ফোনটিতে যদি ইনফ্রারেড সেন্সর থাকে, তো এর চেয়ে ভালো আর প্রয়োজনীয় ব্যবহার আর কিছুই হতে পারে না। এসির জন্য আলাদা রিমোট, টিভির জন্য আলাদা রিমোট, ডিভিডি প্লেয়ারের জন্য আলাদা রিমোট, স্যাটেলাইট টিভি রিসিভারের আলাদা রিমোটের যুগ শেষ। আপনার স্মার্টফোনকে ইউনিভার্সাল রিমোট কন্ট্রোল বানিয়ে ফেলতে পারবেন।
প্লে স্টোরে বহু রিমোট কন্ট্রোল অ্যাপ রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি ফোনটি অল-ইন-ওয়ান রিমোট কন্ট্রোলে পরিণত হয়ে যাবে। এক রিমোট যেটাতে যেকোনো ডিভাইজ চলে, আবার রিমোটের বাটন নষ্ট হওয়ার ভয় নেয়, সঙ্গে রিমোটের ব্যাটারিও বদলানোর দরকার নেই।
Development by: webnewsdesign.com