আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে উদযাপন করা হয় সারাবিশ্বে। এই দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, প্রিয় বন্ধুদের মাঝে বন্ধুত্ব, মমতা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে নানা আয়োজনে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে।
বসন্তের মাতাল হাওয়ায় আজ উদ্দাম ভেসে যাবে প্রেম পিয়াসী তরুণ-তরুণী, ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। মনের যতো বাসনা, যতো অব্যক্ত কথা ডালাপালা মেলে ছড়িয়ে পড়বে বসন্তের মধুর হাওয়ায়। কপোত-কপোতী পরস্পরকে নিবেদন করবে মনের যতো কথা, জানাবে ভালোবাসা। এই দিনে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভালবাসার মানুষদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে।
এছাড়া মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল এমএমএসে প্রেমবার্তা অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে ছোট ছোট কথায় গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের সোপান। ভালোবাসার মানুষকে ফুল, চিঠি, কার্ড, গহনা, চকোলেট, পারফিউম, টেডি অথবা বই ইত্যাদি প্রিয়জনকে উপহার প্রদান করে দিনটি উদযাপন করে অনেকে।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসে এখন থেকে কয়েক বছর আগ পর্যন্তও বিশ্ব ব্যাপী ঘটা করে পালন করা হতো না। এই দিবসটি যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বর্তমানে এই দিবসটি বিশ্ব ব্যাপী দেশে দেশে আনন্দ উন্মাদনার সাথে পালন করা হয়।
ভালোবাসার গল্পটি শুরু হয়েছিল সেই ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে। প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীদের প্রতি ছিলেন ভীষণ সদয়। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো।
একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন বুঝতেপেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল।
ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মানুষেরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে আসছে। তারপর এই ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্র“য়ারিকে।
গ্রিক ও রোমান উপকথার মতই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে আরো গল্প-কাহিনী ছড়িয়ে আছে ভুবনজুড়ে। এরপর উনিশ শতকেই উত্তর আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালিত হয় ব্রিটিশ অভিবাসীদের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক হারে ভ্যালেন্টাইন’স কার্ড বিনিময় শুরু হয় ১৮৪৭ সালে ম্যাসাসুয়েটসের অরকেস্টারে।
বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে বসন্ত ঋতুর ক্ষণগণনা শুরু হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে, যার একদিন পরেই ভালোবাসা দিবসটি। তবে এবার অধিবর্ষ হওয়ার কারণে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন। অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুন এক সাথে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। একদিন আগে পরে এই দুইটি দিন উদযাপিত হওয়ায় আমাদের দেশের যুবক-যুবতীদের উৎসব সংস্কৃতিতে মহোৎসবের রূপ পেয়েছে এই দিবসটি।
শুধু তারুণ্যই নয়, প্রৌঢ় থেকে শুরু করে শিশু, কিশোর, মধ্যবয়সীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এর আবহ। এ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চারুকলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর, সংসদ ভবন চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূল, চন্দ্রিমা উদ্যান মুখরিত থাকবে সারা দিন। ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়’ বহু বছর আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই ভালোবাসার অর্থ খুঁজেছিলেন। কারণ, ভালোবাসার অর্থ যে গভীর দ্যোতনাময়। এই অর্থটি বুঝতে এবং বুঝাতে আপনিও ভালেন্টাইন’স পঞ্জিকার সাতটি দিন উদযাপন করতে পারেন আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে। তাহলে কি শুধু একটি দিন বা একটি সপ্তাহ ভালোবাসার জন্য? অবশ্যই নয়। ভালোবাসা সারা বছরের, সারা দিনের। তাই ভালোবাসার মানুষটির বা মানুষগুলোর সাথেই থাকুন, তাদের সাথেই উপভোগ করতে পারেন নববসন্তের প্রকৃতি।
Development by: webnewsdesign.com