আর মাত্র একদিন পর আসছে বসন্ত

বসন্ত রঙে রঙিন হোক বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১:২৩ অপরাহ্ণ

বসন্ত রঙে রঙিন হোক বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
বসন্ত
apps

 

 

বসন্তের আগমণীবার্তায় বলে দিচ্ছে ঐ বুঝি বেজে উঠলো শীতের বিদায়ী ঘন্টা। কবিগুরু রবী ঠাকুরের  কন্ঠে এই দিন প্রবাহিত হয়েছিল ‘আহা, আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে, কত পাখি গায়… তারি সাথে তালে তাল মিলিয়ে বাউল সম্রাট বাউল শাহ আব্দুল করিম গেয়ে ছিলেন বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…। বইতে শুরু করেছে বসন্তের হাওয়া সেই সাথে বিদায়ী ঘন্টা বেজে উঠেছে শীতবাবু। নতুন ঋতুর আগমনী টের পাওয়া যাচ্ছে আর মাত্র একদিন পর ফাল্গুনের প্রথম দিন ঋতুরাজকে বরণ করে নেয় বাঙালী।

প্রকৃতিতে বসন্তের আমেজ। চারদিকে সবুজের হাতছানি, পাখির কিচিরমিচির ডাক আর রঙিন সব ফুলের আগমনে বসন্ত যেন এক স্বর্গীয় রূপ দেয় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে। প্রকৃতি যেন নতুন রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়। গাছে গাছে নতুন পাতা, রঙিন ফুল নতুন ভাবে সাজে এ দেশের সবুজ জনপদে। আমরা সবাই কি জানি বসন্তে কী কী ফুল আমাদের প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে ফুটিয়ে তোলে? আজ কথা হোক বসন্তের কিছু ফুল নিয়ে।
বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস- এবার দুই-ই মিলেমিশে একাকার। দুই উৎসবের উদযাপন একদিনে, তাই আনন্দ যেন একটু বেশি-ই! ইটপাথরের নগরে বসন্তের রূপ-রস মনের মতো ধরা না দিলেও নগরের মানুষ ঠিকই উদযাপন করবে দিনটি। বসন্ত আর ভালোবাসাকে একইসঙ্গে বরণ করার আনন্দে নগরের অলি-গলিতে বেজে উঠবে সুর, ‘আহা আজি এ বসন্তে’/‘বসন্ত এসে গেছে’/‘মনের রঙ লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে’।

এতো আনন্দের বহিঃপ্রকাশ সাজ-পোশাকে না থেকে পারে! বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে নিজেকে রাঙানোর কৌশলও তো জানা চাই।

সাজে থাকুক প্রকৃতির ছোঁয়া

সময়ের সঙ্গে সাজ পোশাকেও আসে পরিবর্তন। একসময় হলুদ রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ ফুল- এটাই ছিল পহেলা ফাল্গুনের সাজ। কিন্তু ফ্যাশনে পরিবর্তন এসেছে। এখন সবুজ, বাসন্তী, লাল এই রঙগুলোও পহেলা ফাল্গুনে বেশ চলছে। অন্যদিকে, ভালোবাসার রং নাকি লাল। লাল, নীল পোশাক পরে ভালোবাসা দিবস উদযাপন নগরের চিরচেনা রূপ। এবার যেহেতু ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন ১৪ ফেব্রুয়ারিতে, ফলে সাজ-পোশাকে একই সঙ্গে ফাগুন ও ভালোবাসার রঙের ছোঁয়া থাকছে। শুধু হলুদ, লাল, সবুজ বা মেরুনই নয়, অনেকেই এই দিনে বেছে নেবে সাদা, নীল, কালো, নেভি ব্লু, ঘিয়ে রঙের পোশাক।

ফ্যাশন হাউজগুলো দিনটি উপলক্ষে তরুণ-তরুণীদের জন্য নানা ডিজাইনের পোশাক এনেছে। হলুদ পোশাকে প্রাধান্য থাকলেও অন্যান্য রঙের পোশাকও এসেছে বাজারে। তবে একটা কথা না বললেই নয়, শীতের বৈরি ভাব কাটিয়ে প্রকৃতি এখন নতুনভাবে সেজে ওঠেছে। প্রকৃতিতে আছে হলুদ আর বাসন্তী রঙের ছোঁয়া। তাই প্রকৃতির রঙে পোশাক পরতে আগ্রহী হন অনেকেই। গাঁদা, রঙিন ফুল ও পাতার ব্যবহার এই দিনের সাজে বেশ মানিয়ে যায়। অর্থাৎ প্রকৃতির উপাদানগুলোই হতে পারে ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের সাজের প্রধান অনুষঙ্গ।

পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস- দুই উৎসব উদযাপন নিয়ে কথা হচ্ছিল গীতিস বিউটি পার্লারের সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ সাবাবা বিল্লাহ’র সঙ্গে। দুই উৎসব একইদিনে হওয়াতে এবারের সাজপোশাক কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস দুটোর মেলবন্ধন করা যায় সাধারণত লাল রঙে। তাছাড়া ফাল্গুনের সকালে হলুদ পরা যেতেই পারে। হলুদ শাড়ি ও গাঁদা ফুল বেশ মানিয়ে যাবে। এই সাজের সঙ্গে মেকআপ অবশ্যই স্নিগ্ধ হতে হবে। বেশি মেকআপ একেবারেই ভালো লাগবে না। চুল খোলা কিংবা বাঁধা- দুটোই রাখা যায়। এটা একেকজনের স্বাচ্ছন্দ্য ও পছন্দের ওপর নির্ভর করে। আর রাতের সাজটা হতে পারে জমকালো। রাতে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে মেকআপও ভারী হওয়া চাই।’
পাশ্চাত্যের ভালোবাসা দিবসের ফ্যাশনের একটি দিক আমরা অনুসরণ করতে পারি বলে মন্তব্য করেন সাবাবা বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘পাশ্চাত্যে ভালোবাসা দিবসে সাদা, গোলাপি ও লাল রঙের পোশাক পরতে দেখা যায়। যাদের প্রেমিক বা প্রেমিকা নেই তারা পরেন সাদা। গোলাপি পোশাক তারাই পরেন, যারা কাউকে পছন্দ করেন। আর লাল রঙের পোশাক পরা মানে সঙ্গী থাকা এবং কারো সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা।’ এভাবেও ভালোবাসা দিবসে পোশাকের রঙ নির্বাচন করা যায় বলে তিনি মনে করেন।

সাদা, গোলাপি এবং লাল রঙের পোশাক পরলে সাজ কেমন হবে সেই সম্পর্কেও ধারণা দিলেন সাবাবা বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সাদা পোশাক পরলে সাজটা অনেক জমকালো হবে। সাদা রঙ সবাইকে মানায়। গোলাপি রঙের সঙ্গে স্নিগ্ধ সাজ মানানসই। আর লাল রঙ সবাইকে বেশ মানিয়ে যায়’- এমনটাই মন্তব্য করেন তিনি।
বসন্তের সাজে থাকে বাঙালিয়ানা। সুতি কী খাদি শাড়ি, হাতে রেশমি চুড়ি, চোখে কাজল, কপালে টিপ, খোপায় রঙিন ফুল, গলায় মালা- বাঙালি মেয়ের সাজের এই চিরচেনা রূপ দেখা যায় বসন্তে। কেউ কেউ বেণী করে চুলে ছড়াতে পারেন রজনী গন্ধার সুবাস। আবার অনেকে চুল খোলা রেখে মাথায় হেডপিস পরতেও পছন্দ করেন। শুধু শাড়িই না, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, টপসও মন্দ লাগবে না এদিনে। এই পোশাকগুলোর সঙ্গে পছন্দমতো ডিজাইনের প্যান্ট কিনতে পারেন।

পোশাকে প্রকৃতির ছোঁয়া রাখতে অনেকেই ফ্লোরাল মোটিফের শাড়ি বা কামিজ পছন্দ করেন। এমব্রয়ডারি, হ্যান্ড পেইন্ট ও স্ক্রিন প্রিন্টে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবারের ১৪ ফেব্রুয়ারির পোশাকের ফ্লোরাল মোটিফগুলো।

পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে শিশুদের জন্যও বাজারে নানা রং ও ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। তবে শিশুদের আরামের ব্যাপারটি মাথায় রেখে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। এখন শীতের প্রকোপ নেই, তবে শীত একেবারেই বিদায় নেয়নি। তাই হালকা শীতের উপযোগি পোশাক পরাতে হবে। পোশাক ঢিলেঢালা হলেই শিশুরা পরে আরামবোধ করবে।

ছেলেদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে পাঞ্জাবি। ফ্যাশন হাউজগুলোতে পাঞ্জাবির পাশাপাশি নতুন ধরনের কিছু শার্টও পাওয়া যাচ্ছে। তবে শার্ট কিছুটা কম চলে এদিনে। ছেলেদের অধিকাংশ পোশাকই সুতি ধরনের, তবে কিছু ভিসকাস ও লিলেন কাপড়েরও পোশাকও চোখে পড়বে।
এবার ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে ছেলেদের সাজ-পোশাক কেমন হবে জানতে চেয়েছিলাম সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ সাবাবা বিল্লাহ’র কাছে। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের জন্য এদিন পাঞ্জাবিই সেরা। সকালে পাঞ্জাবি পরলে বেশ ভালো মানাবে। চাইলে ছেলেরা চুলে জেল লাগাতে পারেন। রাতের সাজে ফরমাল পোশাকেই ভালো লাগবে তাদের।’

ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন- দুই উৎসবই বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। উৎসব উদযাপনের ঢঙে পরিবর্তন এলেও উৎসবের মাহাত্ম একই রয়ে গেছে। বসন্তের রঙে সকলের ভালোবাসা থাকুক অমলিন।

Development by: webnewsdesign.com