যেকোন দেশের বাণিজ্য এবং শিল্পখাত অন্য এক বা একাধিক দেশের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে। দেখা যায় যে, সরাসরি পণ্য আমদানি বা রপ্তানির জন্য না হলেও পণ্যের কাঁচামালের জন্য এই নির্ভরতাটা তৈরি হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নির্ভরতার সবচেয়ে বড় জায়গাটা হলো চীন। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে যেসব পণ্যের দরকার হয় সেগুলো তো বটেই, রপ্তানিপণ্যেরও প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামালের যোগান দেয় চীন। করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বাংলাদেশের এই পরম নির্ভরতার জায়গা চীন এখন একেবারেই একঘরে হয়ে পড়েছে। চীন থেকে পণ্য আমদানি একপ্রকার বন্ধই বলা চলে। এ অবস্থায় চরম সংকটের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশও। কারণ যেকোনো পণ্যের দামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কাঁচামাল। সেই কাঁচামালের যোগানই বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে বাড়তে পারে বেশকিছু পণ্যের দাম।
ওষুধ: করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে ওষুধ তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আর সপ্তাহখানেক যদি এ অবস্থা চলে তাহলে ইউরোপের কোনো দেশ বা অন্য কোথাও থেকে আনতে হবে এসব কাঁচামাল। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ হবে দ্বিগুণের বেশি। যার প্রভাব পড়বে ওষুধের দামের ওপর।
গার্মেন্টস পণ্য: বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত এত এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সস্তা শ্রমবাজার। পাশাপাশি চীন থেকে আসা সস্তা কাঁচামালও আমাদের গার্মেন্টস খাত এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বোতাম, সুতা থেকে শুরু করে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের ৯৯ শতাংশ কাঁচামাল এবং মেশিনারিজ আছে চীন থেকে। বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজার এবং বৈশ্বিক এবং আন্তর্জাতিক নানা চাপের কারণে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের একটা খারাপ সময় চলছে। এমন পরিস্থিতে চীন থেকে কাঁচামাল আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে এই খাতে।
ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য: আমাদের দেশের ইলেক্ট্রনিক্স যত পণ্য আছে, এগুলোর প্রায় সবগুলোরই যন্ত্রাংশ আসে চীন থেকে। এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইলেক্টনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের টিভি, ফ্রিজসহ যাবতীয় সকল পণ্যের যন্ত্রাংশ চীন থেকে আনা হয়। এরপর দেশের কারখানায় টিভি ফ্রিজের বিভিন্ন অংশ জুড়ে ব্যবহার উপযোগী পণ্যে রূপ দেওয়া হয়। চীন থেকে এই যন্ত্রাংশ আসা বন্ধ থাকায় তারাও বড় সংকটের আশংকা করছে। বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক্স বাজারের ৬০ শতাংশেরই দখল এই ওয়ালটনের হাতে। একই অবস্থা দেশের অন্য ব্র্যান্ডগুলোরও। মাসখানেক চীন থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকলে টিভি ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খেলনা: বাংলাদেশের খেলানার বাজারের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে চীন। চীন থেকে যদি এই খেলনা আসাও মাসখানেক বন্ধ থাকে তাহলে কাঁদতে হবে শিশুদেরও। কারণ তিন চারগুণ বেশি দামে বাবা-মা হয়তো চাওয়া মাত্রই তাদের আর খেলনা কিনে দেবে না।
ফার্নিচার: বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্নিচারের বাজারও চীন নির্ভর হয়ে পড়েছে। চীন থেকে আসা ফার্নিচার অনেক সস্তা এবং টেকসই হওয়ায় ক্রেতাদের মাঝে চীনা ফার্নিচারের চাহিদা বেশি। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি থেকে চীন থেকে ফার্নিচার আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থা আরো দু’এক সপ্তাহ স্থায়ী হলে দেশের ফার্নিচারের বাজারেও যে ঝড় উঠবে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
Development by: webnewsdesign.com