সন্তান ছেলে না মেয়ে- এটি সনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন কয়েকজন নারী আইনজীবী।
তারা বলছেন, অনাগত সন্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত ও ঘরে ঘরে মায়েদের কান্না থামাতেই এই লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছেন।
এ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা করে আলোচনায় থাকা মেধাবী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। তার সাথে আছেন মেধাবী দৃঢ় প্রত্যয়ী কয়েকজন আইনজীবী। তারা হলেন- অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন, অ্যাডভোকেট লিমা খাতুন কনা, অ্যাডভোকেট স্মৃতিয়ারা মিরা, অ্যাডভোকেট বদরুন্নাহার, অ্যাডভোকেট রুমানা আলম, অ্যাডভোকেট নিশাত ফারজানা, অ্যাডভোকেট মুনমুন নাহার, অ্যাডভোকেট মাহবুবা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রোকসানা শিরিন, অ্যাডভোকেট তামান্না সুলতানা ও অ্যাডভোকেট মিনা রানী দে।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ও তার সহকর্মী আইনজীবীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আদালত ইতিমধ্যেই গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে রুল জারি করেছেন। রুলে পেটের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নীতিমালা করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, আমাদের দেশে এখনও অধিকাংশ মানুষ প্রথম ছেলে সন্তান প্রত্যাশা করে। এমনকি মায়েরাও প্রথম সন্তান ছেলে হোক এটা চায়। ফলে পরীক্ষার মাধমে যখন জানতে পারে অনাগত সন্তান মেয়ে, তখন গর্ভবতী নারী মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। হতাশায় ভোগেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য দ্বারা শারিরিক নির্যাতনেরও শিকার হন। এতে গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির সন্মুখীন হয়। এ কারণে লিঙ্গ পরিচয় সনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা রোধ করা জরুরি।
তিনি বলেন, ভারত, চীন অনাগত সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা বন্ধে নীতিমালা করেছে। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করেছেন। এটা অবশ্যই আমাদের আইনি লড়াইয়ের প্রাথমিক বিজয়। আশা করছি, চূড়ান্ত রুল শুনানিতেও সন্তান ছেলে না মেয়ে তা সনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধের প্রয়োজনীয়তা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হবো।
রিটকারী এ আইনজীবী আরো বলেন, আইনজীবী বন্ধুদের এ লড়াইয়ে পাশে পেয়েছি। তারা সবাই সহযোগিতা করছেন।
উল্লেখ্য, ৩ ফেব্রুয়ারি অনাগত শিশুদের লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
গত ২৬ জানুয়ারি পেটের শিশুদের লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
গত ১ ডিসেম্বর গর্ভবতী নারী ও অনাগত সন্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেটের শিশুদের লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, গর্ভবতী মা ও শিশুর কল্যাণের জন্য, বা অনাগত সন্তানের সুস্থতা জানতে তারা যেকোনো পরীক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু শুধু পেটে থাকা সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানার উদ্দেশ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা বা ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য নয়। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় এ রিট দায়ের করা হয়।
Development by: webnewsdesign.com