নতুন সবজি হিসেবে ক্যাপসিকামের চাষ বেড়েছে ভোলার চরাঞ্চলগুলোতে। কম খরচে বেশি লাভ করা যায় বলে এই সবজির আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। এই জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে প্রায় দুইশ চাষি বিচ্ছিন্নভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। তারা মনে করছেন, সরকারি আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলে ক্যাপসিকাম চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এ বছর ভোলায় ১৪ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আবাদ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ভোলা সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও দৌলতখান উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকামের আবাদ হচ্ছে।
চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝেরচরে প্রায় ছয় বছর আগে মনির পাঠান নামে এক কৃষক প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। পরীক্ষামূলকভাবে তিনি ১০ শতাংশ জমিতে চাষ করে লাভবান হন। পরের বছর আরেকটু বড় পরিসরে তিনি ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। সে বছরও তিনি সফল হন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য চাষিরাও ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
কৃষকরা বলছেন, মাঝেরচরে বর্তমানে প্রায় দুইশ জন ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। এই ফসলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। এ কারণে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। ফলনের সময়ও কম। ফলে অল্প সময়েই আবাদের টাকা তুলে আনা সম্ভব হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। পাইকারি বাজারে দামও মিলছে ভালো।
কৃষকরা জানান, শীতকালীন সবজি ক্যাপসিকামের গাছ লাগাতে হয় অক্টোবর-নভেম্বরে। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ক্যাপসিকাম সংগ্রহ শুরু করা যায়। কোনো কোনো গাছে চার মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায় এই সবজি। অর্থাৎ ক্যাপসিকামের আবাদ শুরুর পর চার মাসের মধ্যেই ফলনের টাকা তুলে আনা সম্ভব। আর ক্যাপসিকাম বিক্রি করে খরচের তুলনায় প্রায় তিন গুণ টাকা তুলে আনা যায় বলে জানিয়েছেন তারা।
মাঝেরচরের মো. হান্নান এ বছর প্রায় দুই একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন তিনি। এখনো ক্ষেতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম রয়েছে, তা আরও বিক্রি করে আরও প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় হতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।
একই এলাকার চাষি হাসেম কেরানী সারাবাংলাকে জানান, এই বিদেশি সবজি চাষ করে অনেক লাভ হয় শুনে তিনি এবারই প্রথম তিন একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, বীজ, সার, ওষুধ ও চুক্তিতে জমি নিতে তার প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আবাদের তিন মাসের মাথায় তিনি প্রায় সাত লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, আরও প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারবেন।
পাইকারি ব্যবসায়ী হাসেম জানান, আমরা সরাসরি ক্ষেত থেকে ক্যাপসিকাম কিনে ঢাকার পাইকারি বাজারে বিক্রি করি। দেশের বাজারে ক্যাপসিকামের চাহিদা অনেক। দামও ভালো। প্রতি কেজি দেড় থেকে দুইশ টাকায় বিক্রি হয়। এই সবজি চাষ করে অনেক কৃষক তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলেছেন। আমরা সবজির ব্যাপারি যারা, তারাও ক্যাপসিকাম থেকে ভালো লাভ পাচ্ছি।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, নতুন সবজি হলেও ক্যাপসিকাম নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন। তারা মাঠ পর্যায়ে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা সময়োপযোগী সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন। যে কারণে প্রতিবছরের মতো এ বছরও ক্যাপসিকামের ব্যাপক ফলন হয়েছে। পাশাপাশি এ বছর ক্ষেতে পোকার আক্রমণ না হওয়ায় ফলন আরও বেশি হয়েছে। কৃষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হবে বলে আমরা আশা করছি।
Development by: webnewsdesign.com