এবার দাম বাড়ছে পিঁয়াজের শুল্ক ছাড়েও কমেনি পাঁচ পণ্যের মূল্য

লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১:১৯ অপরাহ্ণ

লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের
apps

লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দামে। হুহু করে দাম বাড়ছে পিঁয়াজের। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল, তেল, চিনি, পিঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছে। কেবল ডিমের দাম কিছুটা কমলেও বাকি পাঁচ পণ্যে কোনো প্রভাব নেই বাজারে। কমার বদলে উল্টো বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। যাতে সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে পিঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। দেশি পিঁয়াজ প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি পিঁয়াজ মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পিঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার ৫ সেপ্টেম্বর আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। আগের তুলনায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির পরও ফের দেশের বাজারে পিঁয়াজের দাম বাড়ছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্্েরডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। গত বছর এ সময়ে দাম ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া আমদানি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। আর গত বছর এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকায়। এক মাস আগেও এর দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। গত বছর এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া আমদানি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১৪ টাকা। গত বছর এ সময়ে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড় দেওয়ার পর ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। তার পরও দেশের বাজারে পিঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসছে না। উল্টো আরও বাড়ছে। বাজারে তদারকি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পিঁয়াজের বাজার অস্থির করছেন। চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে গত ৮ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে জাতীয় বাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুল্ক কমানোর পর বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়; যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, বিদ্যমান রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। তবে বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। খুচরায় প্রতি কেজি আটাশ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৪ টাকা। অথচ সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকায়। আর ৫ টাকা বেড়ে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা কেজি। এ ছাড়া নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৬-৮২ টাকায়। ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে তা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সে সময় বাজারে কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমলেও বর্তমানে আবার দাম বেড়ে সে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

ডিমের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৭ সেপ্টেম্বর আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ডিমের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বাজারে এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১৮০ টাকা। পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপণীয় ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপণীয় ৫ শতাংশ মূসক অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআর। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন, পাম ও পরিশোধিত পাম, সয়াবিন তেল আমদানির ক্ষেত্রে মূসক ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৬ টাকা। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ছিল ১৪৬ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকা দামে। এ ছাড়া রাজধানীর বাজারে এখনো চড়া দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৯০ থেকে ২০০ এবং সোনালি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম খুচরায় প্রতি ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি ২৪০ এবং আমদানি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ২২০ টাকা।

রাজধানীর বাজারে শীতকালীন সবজি আসা শুরু হওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি মুখি কচু কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৮০, বেগুন ৪০ টাকা কমে ৮০ থেকে ১০০, করলা ৭০ থেকে ৮০, কাঁকরোল ১০০, পটোল ৫০ থেকে ৬০, ঢ্যাঁড়শ ৮০, বরবটি ১০০, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০, ধুন্দল ৮০, চিচিঙ্গা ৭০, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০, ঝিঙ্গা ১০০, শসা ৫০ থেকে ৮০, কাঁচা মরিচ ২০০ এবং প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামিল চৌধুরী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নিত্যপণ্যের দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। দেশে পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে দামের ব্যবধান অনেক। স্বাভাবিকভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশ্বের কোনো দেশেই এর চেয়ে বেশি পার্থক্য থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে সিন্ডিকেট করে এ ব্যবধান বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Development by: webnewsdesign.com