মাধবপুরে দেখার কেউ নেই সার-সিন্ডিকেট’র ১৫ বছর অধিকাংশ ডিলার আওয়ামীলীগ ও একই পরিবারের

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ | ৮:৩১ অপরাহ্ণ

মাধবপুরে দেখার কেউ নেই সার-সিন্ডিকেট’র ১৫ বছর অধিকাংশ ডিলার আওয়ামীলীগ ও একই পরিবারের
apps

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সারের ডিলার নিয়োগ নীতিমালা-২০০৯ উপেক্ষা করে অনিয়মের মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ, একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির নামে ডিলারশিপ প্রদান, অনুমোদিত খুচরা বিক্রেতাদের সময়মতো ও প্রয়োজন মতো সার না দেওয়া এবং অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। অপর দিকে ওই ডিলারদের দিয়ে বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকারের কৃষি নীতিমালা বাস্তবায়নে শংকা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ সালে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর সভায় আওয়ামীলীগ নেতা উসমান খাঁন, বাঘাসুরা ইউনিয়নে তারই কর্মচারি কানু রায়, শাহজাহানপুর ইউনিয়নে ফান্স প্রবাসী যুবলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুছের মালিকাধীন রহমত ট্রের্ডাস, চৌমুহনী ইউনিয়নে মনির হোসেনের মালিকাধীন লালা ট্রের্ডাস, বহরা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ কর্মী রমজান মিয়া,

জগদিশপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা দিলীপ পাল নোয়াপাড়া ইউনিয়নে ইসলাম ট্রেডার্স, ছাতিয়াইন ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ নেতা চন্দন পাল, আন্দিউড়া ইউনিয়নে হাজী জালাল খাঁন, ধর্মঘর ইউনিয়নের তার ছেলে এমরান খাঁনকে বিসিআইসির সারের ডিলারশিপ নিয়োগ দেয় সরকার। এ ছাড়া সে সময়ে এসব এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে আরও ১০৮ জন খুচরা সার বিক্রেতাও নিয়োগ করা হয়। তৎকালে ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সারের ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়াও হয়েছিল বিশাল ঘাপলা। অভিযোগ রয়েছে-যে ১২জন সারের ডিলারশিপ নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের ছাড়া নিয়োগকালে আর কাউকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা তৎকালীন সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থক। ফলে ওই ১২জনই উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিসিআইসির সারের ডিলারশিপ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ওই ১২ ডিলারের মধ্যে আবার একই পরিবারের একাধিক ডিলারও রয়েছেন।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ এর ৩ ধারার ৩.২ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘নিজ মালিকানায় অথবা ভাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় বিক্রয় কেন্দ্রসহ কমপক্ষে ৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম থাকতে হবে। তা অধিকাংশ ডিলারের নেই। গত ১৫ বছর ধরে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কৃষি অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এক ডিলার একাধিক লাইসেন্সের অধীনে সার উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে বিক্রি করছে। ফলে এর প্রভাব পড়ে কৃষকদের মাঝে। এ ব্যাপারে চৌমুহনী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন আমরা সময় মতো সার না পাওয়ায় চড়া দামে বাহির থেকে কিনতে হয়।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার সমিতির মাধবপুরের সভাপতি এমরান খাঁন বলেন-কৃষি ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিভিন্ন যাচাই-বাচাই শেষে আমাদেরকে ২০০৯ সালে ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। খুচরা সার বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল অভিযোগ করে বলেন-সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ উপেক্ষা করে প্রায় সকল ডিলারই খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সার দেয় না। আবার যখন কৃষির মৌসুম তখন কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলাররা তাদের সার সরবরাহ করেন না। ওই সময়ে তারা বাইরে সার অনৈতিকভাবে বিক্রি করেন। ফলে কৃষির মৌসুমে জেলার বাইরে থেকে অধিক মূল্যে তাদের সার ক্রয় করতে হয়।

এতে পরিবহন খরচ করে মৌসুমে অনেক সময় ক্ষতির শিকার হন ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজিব সরকার বলেন-সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী একই পরিবারের সদস্যরা বিসিআইসি’র ডিলার হতে পারবে কি না তা স্পষ্ট করে লিখা নাই এবং অন্য দেশের নাগরিক দেশের ডিলার হতে পারে না। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা একেএম ফয়সল বলেন-সার বিক্রিতে বা অন্য কোনো বিষয়ে অনিয়মের বিষয়ে এখনই খোঁজ নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Development by: webnewsdesign.com