কেমন ছিল দেশের ফুটবল সালাউদ্দিনের আমলে

সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

কেমন ছিল দেশের ফুটবল সালাউদ্দিনের আমলে
apps

বাফুফে সভাপতির চেয়ার আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। চারদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলেও কাজী সালাউদ্দিন ছিলেন নির্ভার। পদত্যাগের দাবিতে বাফুফের সামনে আন্দোলন-মানববন্ধন হলেও ‘গদি’ টিকিয়ে রাখতে আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক এই ফুটবলার। কিন্তু শনিবার হঠাৎ ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বাফুফেতে ১৬ বছরের পথচলা থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন।

আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন। এবারও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। ২০০৮ সাল থেকে চার মেয়াদে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ চেয়ারে বসা এই কর্তার নির্বাচন না করার ঘোষণা কিছুটা হলেও চমকজাগানিয়া। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘চার মেয়াদে দায়িত্বে ছিলাম। সেজন্য নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। কারণ এমন সুযোগ আমার জীবনে এসেছে। এখন বাফুফের যে নির্বাচন আসছে, ২৬ অক্টেবর; আমি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। এটা আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

অর্থাৎ, এই মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাফুফেতে সালাউদ্দিন-রাজত্বের অবসান হচ্ছে। ২০০৮ সালে আমিন আহমেদ চৌধুরীকে ৬২-৪৯ ভোটে হারিয়ে প্রথমবার বাফুফে সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে চেয়ার টিকিয়ে রাখেন বিনা প্রতদ্বন্দ্বিতায় জিতে।

তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়লেও সেবার কামরুল আশরাফ খানকে হারিয়ে তৃতীয়বার বাফুফে সভাপতির পদে বসেন সালাউদ্দিন। ২০২০ সালে চতুর্থ দফায় নির্বাচনে দাঁড়ান সাবেক এই ফুটবলার। সেবার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক ফুটবলার বাদল রায় ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। ওই নির্বাচনে ৯৪ ভোট পেয়ে সিংহাসন ধরে রাখেন সালাউদ্দিন।

ফুটবলার হিসেবে তিনি যেমন জনপ্রিয় ও সফল ছিলেন, ফুটবল-কর্তা হিসেবে তিনি ততটাই ব্যর্থ ও সমালোচিত। তার আমলে দেশের ফুটবল কেবল নিচের দিকেই গিয়েছে। জাতীয় ফুটবল দল, বিশেষ করে ছেলেদের ফুটবলের কথা ধরলে কেবল ব্যর্থতার চিত্রই সামনে আসবে।

প্রথম দফায় সালাউদ্দিন সভাপতির চেয়ারে বসেন ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর মে মাসে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ছিল ১৮০ নম্বরে। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪তে। এই হিসাব দেখলে হয়তো মনে হবে, ১৬ বছরে মাত্র ৪ ধাপ নিচে নেমেছে বাংলাদেশ। কিন্তু র‌্যাঙ্কিংয়ের অতীত ইতিহাস বলবে অন্য কথা। একটা সময় ২০০ ছুঁই ছুঁই হয়েছিল বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং। ২০১৭ সালে ছিল ১৯৭ নম্বরে!

র‌্যাঙ্কিংয়ের হিসাবেই আসলে স্পষ্ট ছেলেদের ফুটবল কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট করতে বাংলাদেশ দলের সাফল্য-ব্যর্থতার চিত্রে তাকানো যাক। একসময় সালাউদ্দিন জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ দূরের কথা, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও লাল-সবুজ দলের অবস্থা শোচনীয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ ডাকা হয় যে প্রতিযোগিতাটিকে, সেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ!

সালাউদ্দিনের ১৬ বছরে আটবার সাফ খেলেছে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ সাফল্য সেমিফাইনাল- ২০০৯ ও ২০২৩ সালে। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে পাঁচবার।

এবার মোট ম্যাচের দিকে তাকানো যাক। সেখানেও ফুটে উঠবে হতাশার ছবি। ২০০৮ সালে সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাল পর্যন্ত, সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ও প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে বাংলাদেশ দল খেলেছে ১২৮ ম্যাচ। বলার অপেক্ষা রাখে না এখানে হারের সংখ্যাই বেশি। ৬১ ম্যাচে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। ড্র করেছে ৩৪ ম্যাচে। আর জিতেছে ৩৩ ম্যাচ। সালাউদ্দিনের ১৬ বছরের হিসাব কষলে প্রতি বছরে জয় মাত্র দুই ম্যাচে!

ছেলেদের ফুটবলে এই হাহাকারের গল্প শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মেয়েদের ফুটবল কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে। কারণ সালাউদ্দিনের আমলে নারী ফুটবলে বেশ কিছু সাফল্য এসেছে বাংলাদেশে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। খেলেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেও সাফল্য আছে। তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য নিশ্চিতভাবেই মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। ২০২২ সালে নেপালের আসরে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল সাবিনা খাতুনরা।

মেয়েদের এই সাফল্যে যদি সালাউদ্দিন প্রশংসা কুড়ান। তাহলে অবশ্যই ছেলেদের ফুটবলের ব্যর্থতার দায় তার ওপরই বর্তায়। দিনে দিনে সময় তো কম হয়নি, কেটে গেছে ১৬টি বছর। সভাপতি সালাউদ্দিনের এই সময়কালে দেশের ফুটবলে আলোর চেয়ে অন্ধকারই বেশি!

Development by: webnewsdesign.com