বাগেরহাটে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সস্তিতে নাই বাগেরহাটবাসী

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪ | ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাগেরহাটে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সস্তিতে নাই বাগেরহাটবাসী
apps

বাগেরহাটে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে নাভিশ্বাস উঠেছে। কাচাঁবাজারসহ চাল, তেল, ডাল, চিনি, আটা,ময়দার দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না সাধারন মানুষ। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের দামও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অধিকাংশ সবজি খামার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সবজি উৎপাদন কমেছে এবং মোকামে সরবরাহ কমেছে আশংকা জনক হারে। বিক্রেতারা পন্যের দাম হাকাচ্ছেন তাদের ইচ্ছে খুশিমত। সব মিলিয়ে নিত্য প্রয়াজনীয় পন্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধিতে মধ্য ও নিম্নবিত্তরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

বৃহস্পতিবার বিকালে (১১ জুলাই) বাগেরহাটের বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধুমাত্র পটল ও মিষ্টি-কুমড়া বাদে অন্য যেকোন সাধারন মানের সবজি কিনতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এর মধ্যে অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে কাচা ঝাল ও বেগুনের দাম, কাচা ঝালের কেজি ২৪০ টাকা , বেগুন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। এছাড়া করলা প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, কচুর গাটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ডেড়স বা ভেন্ডি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, বৈশাখ ৮০ টাকা, চাল-কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি পিস, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি পিস, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি, আলু প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, আমড়া ৬০ টাকা, পিয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২৫০ , ডাল ১৫০ টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি মানের মাছ কিনতে গেলেই ক্রেতাকে গুনতে হয় কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। রুই, কাতলা, মৃগেল মাছ আকার ভেদে ৩০০ থকে ৪৫০টাকা, পারশে মাছ আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঙ্গাশ ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ টাকা, ভেটকি মাছ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, আইর মাছ সাইজ অনুযায়ী ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাগেরহাটে ৩৫ বছর ধরে গরুর মাংস বিক্রেতা সোহেল শেখ বলেন, গরুর মাংসের দাম আগের দামেই বিক্রী হচ্ছে। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম না কমায় গরুর মাংসের ক্রেতা অনেক কমে গেছে। তিনি জানান, গরু কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৭৮০টাকা দরে বিক্রী করতে হচ্ছে।

বাগেরহাট বাজারের ডিম বিক্রেতা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, ডিমের হালি আগের থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছে। দুই তিন মাস আগে যে ডিম ৬০ টাকা হালি দরে বিক্রী হতো তা এখন ৫০ টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে। বাগেরহাট বাজারের মুরগী বিক্রেতা মোঃ মুকুল জানান, ব্রয়লারসহ মুরগীর দাম কিছুটা কমেছে। যে ব্রয়লার ২০০/২২০ টাকা দরে বিক্রী হতো তা এখন ১৬০/১৭০ টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে। এছাড়া সোনালী , কক, লেয়ার কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত কমেছে।

অন্যদিকে, চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, মসুর ডালসহ প্রায় সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উর্দ্ধোগতি। এসব পণ্যের বাড়তি দামের কারনে যেমন একদিকে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় পণ্য কম কিনছেন, তেমনি বিক্রেতাদেরও কেনাবেচা কমেছে।
বাগেরহাট বাজারের মুদি দোকানি সোবহান চৌধুরী বলেছেন, বাজারে সকল চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাল, চিনি, তেল, আটা, ময়দাসহ সবকিছুর দাম বাড়তি। দাম শুনে অনেকে পণ্য না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যেটা না নিলেই নয়, সেসব পণ্য এক কেজির জায়গায় আধা কেজি নিচ্ছেন। আগে যারা পুরো প্যাকেট নিতেন, তারা খোলা কিনছেন। দ্রব্যমূল্যের এই অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে আমাদেরও স্বস্তি নেই। আমাদের বিক্রী অনেক কমেছে।

শহরের রিক্সাচালক রফিক মিয়া জানান, রিক্সা চালিয়ে রোজ আয় করি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পাঁচজনের সংসার, মাছ, ডিম, গোস্ত তো খাওয়া ছেড়েছি অনেক আগেই, এখন সবজিরও যে দাম তাতে তো এক প্রকার না খেয়েই থাকার উপক্রম হয়েছে আমাদের জন্য।
ইজিবাইক চালক মোঃ আল আমিন হোসেন বলেন, আগে হাজার টাকার বাজার করলে সবজির সাথে কিছুটা হলেও মাছ অথবা গোস্ত কেনা সম্ভব হত। কিন্তু বর্তমানে সবজির যে দাম তাতে সবজি কিনতে গেলেই টাকা শেষ হয়ে যায়।

জুতা ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে, তাদের লেখাপড়ার খরচ দিতে হয়, বাড়িতে অসুস্থ্য বৃদ্ধ মা রয়েছেন। এর মধ্যে বাজার দরের যে অবস্থা! আগে তো অন্তত কম টাকায় সবজি কিনে পার করেছি কিন্তু বর্তমানে সবজিরও যে দাম তাতে পরিবারের অন্যান্য চাহিদা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মোঃ লোকমান হোসেন নামে এক সরকারী চাকরিজীবি জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের কোন সংগতি নেই। দিন দিন সবকিছুর দাম বেড়েই চলছে। তাই দ্রæত বাজার নিয়ন্ত্রনের দাবি জানান।
আখি নামে এক কর্মজীবি মহিলা জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পন্যের দাম আকাশ ছোয়া। যা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্য বিত্তরা চরম সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে।

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন তিনি বলেন, বাজারে দ্রব্য মূল্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলছে। খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়ৎদাররা স্বল্পদামে পন্য কিনে প্রতি কেজিতে ৮/১০ টাকা লাভে বিক্রী করছে। এটি বন্ধ হলে বাজার আরো নিয়ন্ত্রনে আসবে। তাছাড়া চাল, ডাল তেল চিনি মজুত করে দাম বাড়িয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রনে আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে জরিমানাও করা হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে দোকানে পন্য তালিকা টানিয়ে দিয়ে তালিকা অনুযায়ী বিক্রী করতে বলা হচ্ছে। অভিযোগ ছাড়াও জাতীয় ভোক্তা অধিকার দপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

Development by: webnewsdesign.com