অভিষেকে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২০ | ৭:০৪ অপরাহ্ণ

অভিষেকে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক
apps

রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে সোমবার মধ্য প্রদেশের হয়ে উত্তর প্রদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার রবি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সুদীর্ঘ ইতিহাসে অভিষেকে প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিকের প্রথম নজির এটিই।
ইন্দোরে ম্যাচের প্রথম দিনে রবির দল মধ্য প্রদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ২৩০ রানে। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নামে উত্তর প্রদেশ। দিনের শেষের আগের ওভারে বোলিং পান রবি। ওভারের তৃতীয় বলে ফিরিয়ে দেন ওপেনার আরইয়ান জুইয়ালকে, উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন কিপার। পরের দুই বলে বোল্ড অঙ্কিত রাজপুত ও সামির রিজভি।
অভিষেকে হ্যাটট্রিক এমনিতে খুব বিরল নয়। রবির আগে ১৮ বোলার পেয়েছেন এই স্বাদ। ভারতেরই আছে আরও ৭ জন। তবে তারা কেউই পারেননি রবির মতো প্রথম ওভারে টানা তিন বলে উইকেট নিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাইসি ফিলিপ অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তবে সেটি ছিল তার পঞ্চম ম্যাচ। নিজের প্রথম চার ম্যাচে বোলিং করেননি এই লেগ স্পিনার। প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিকে রবিই একমেবাদ্বিতীয়ম।
মজার ব্যাপার হলো, রবি যে দলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন, সেই উত্তের প্রদেশেই তার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেটার হিসেবে এগিয়ে চলা। লক্ষ্ণৌর স্পোর্টস কলেজ থেকে উঠে এসেছেন তিনি, যে কলেজ থেকে এসে ভারতের তারকা হয়ে উঠেছেন সুরেশ রায়না ও রুদ্র প্রতাপ সিং। তবে চোটের সঙ্গে লড়াই করতে করতে রবি ছিটকে যান পথ থেকে।
২০১০ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত চোটের কারণে প্রায় মাঠেই থাকতে পারেননি রবি। হ্যাটট্রিকের দিনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেই দিনগুলির দিকে ফিরে তাকালেন এই পেসার।
আমি অনুভব করছিলাম, আমার ক্যারিয়ার পথ হারাচ্ছে। জানতাম না ভাগ্য আমাকে কোন দিকে নিয়ে যাবে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আমার সতীর্থদের দেখছিলাম এগিয়ে যেতে, মনে মনে ভাবছিলাম, ‘আমরা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি, ওরা পরের ধাপে চলে গেছে, আমি কোথাও নেই।’ এরপর আমি উজ্জীবিত হই, লেগে থাকি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, উত্তর প্রদেশে সুযোগ মিলছিল না।
নিজ প্রদেশে হতাশ হয়ে ২০১৬ সালে পাড়ি জমান মধ্য প্রদেশে। মোরেনা জেলার ট্রায়ালে টিকে চেষ্টা করেন আস্তে আস্তে এগিয়ে চলার। মধ্য প্রদেশের রঞ্জি দলে তিন বছর ঘাম ঝরিয়েছেন নেট বোলার হিসেবে। অপেক্ষা করেছেন সুযোগের।
জীবিকার তাগিদে রেলওয়েতে কাজ করছিলেন। ক্রিকেটে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে এক পর্যায়ে সেই চাকরিও ছেড়ে দেন। তার পরিবার সেটি ভালোভাবে নেয়নি, তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে নিত্য। রবি চালিয়ে গেছেন লড়াই।
অবশেষে এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর পেলেন রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকের সুযোগ। মধ্য প্রদেশের নেটে যখন তিন বছর ধরে বোলিং করেছেন, রাজ্য দলের সিনিয়ররা তাকে বলে গেছেন, পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করে রাখতে, সময় এলে যেন প্রথম সুযোগেই বাজিমাত করতে পারেন। রবিও জানতেন, দ্বিতীয় সুযোগ আর মিলতে নাও পারে।
তাই বলে প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক! রবি যা করলেন, সেটিকে বলা যায় রূপকথা।

Development by: webnewsdesign.com