বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট এবং সবশেষ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধসহ নানা কারণে বছরের শুরু থেকেই অস্বস্তিতে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। একই সঙ্গে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দীর্ঘ দিন ফ্লোরে আটকে থাকায় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ তলানীতে গিয়ে ঠেকে। অনেক বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ শূন্যের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে বাজার ছেড়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলেও মার্জিন ঋণের কারণে মার্চেন্ট ব্যাংক বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউস থেকে ফোর্স সেল দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বাজার ধারাবাহিকভাবে সূচকের পতন হতে থাকে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। আস্থা সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী। তবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক এবং বাজারে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে সম্প্রতি আবারও সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তন আনে বিএসইসি। কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। এতে করে কারসাজি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারের মাধ্যমে বাজার থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়াও বিএসইসি একাধিক কারসাজির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত কল্পে অনিয়ম ও কারসাজি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাজার আগের অবস্থায় ফিরবে। আর এতে করে আস্থার সংকট কেটে যাবে। এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারী সাজিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটি অসাধু চক্র বাজারে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে খেলা করে। তাদের কারসাজি বন্ধে বিএসইসির মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে ভালো ভূমিকা রাখলে আস্থার সংকট কাটবে বলে তিনি মনে করেন। পুঁজিবাজারের আস্থার সংকট দূরীকরণের সুশাসনের বিকল্প নেই। কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে বিএসইসিকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কমিশন কাজও করে যাচ্ছে তবে বাজারে ভালো মানের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোম্পানিগুলোর ইপিএস এর ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠন করে পূর্বের মতো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবেন বলে আশা করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিগত চার বছরে পুঁজিবাজারের জন্য যে সকল নীতিমালা ও আইনকানুন, তৈরি হয়েছে তা সঠিক ভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই কমিশনের হাত ধরেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অতীতের সকল সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএসইসি। কেউ আইনের লঙ্ঘন করলে তদন্ত করে আইন অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার স্থিতিশীল কমিশন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপ্রকাশিত তথ্য প্রকাশ, শেয়ারদরের পূর্বাভাস কিংবা যেকোনো ধরনের অসত্য তথ্য ও গুজব প্রকাশ বা প্রচার আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে এ ধরনের ভুয়া ও অসত্য তথ্য বা গুজব প্রকাশ অথবা প্রচার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ এটা অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে বাজারে সূচক বাড়া বা কমা এটা ঠিক করা কমিশনের কাজ নয় বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, বিএসইসির কাজ হচ্ছে বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা। স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে বলেও তিনি মনে করেন। এদিকে রোববার বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ পান। তার এই নিয়োগের দিন পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। রোববার ডিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক ৯৭ পয়েন্ট এবং সিএসইর সূচক ১৮৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। এদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় বাজারে লেনদেনও বাড়ে। বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বেই আগামীতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে বলেও মনে করছেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
Development by: webnewsdesign.com