থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

সোমবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৪ | ২:৫৭ অপরাহ্ণ

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
apps

থ্যালাসেমিয়া বিশেষ এক রক্তরোগ এবং এ রোগটি বংশগত। সাধারণত জিনগত ত্রুটির কারণে প্রোটিনগুলোর উৎপাদন কমে যায়। আর এতে শরীরে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন স্বাভাবিক না থাকায় দেখা দেয় থ্যালাসেমিয়া রোগ। যেভাবে সংক্রমিত হয়: যদি বাবা-মায়ের কেউ একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তা হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ। বাবা-মা দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সেক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণের, ৫০ শতাংশ আশঙ্কা থাকে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার আর বাকি ২৫ শতাংশ আশঙ্কা থাকে সম্পূর্ণ সুস্থ শিশু হিসেবে জন্মগ্রহণের।

থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত বিষয় দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। যিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ- শুধু তিনি থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করেন তার শরীরে। থ্যালাসেমিয়ার বাহক আগে থেকে চিহ্নিত করে দুজন থ্যালাসেমিয়ার বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে পারলে থ্যালাসেমিয়া রোগের বোঝা অনেকাংশে কমানো যায়।

আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক মোটেই কম নয়। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতাও আশানুরূপ নয়। সমস্যা তখনই হয়, যখন বাহক হিসেবে চিহ্নিত করার পর কাউন্সিলিং করা হয় বাবা-মাকে। সব বোঝানোর পর যখন বলা হয়, বিয়ের আগে অবশ্যই ছেলে বা মেয়ের হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিস করে জেনে নিতে হবে ছেলে বা মেয়ে এ রোগের বাহক কিনা! কারণ দুজনেই বাহক হলে তাদের সন্তানদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া হতে পারে।

ভেবে দেখুন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটি কতটা সম্ভব? একজন বাহক মেয়ের বিয়ের সময় হলে পাত্রপক্ষকে যখন বলা হবে যে, তার এ পরীক্ষা করা দরকার, সেও বাহক কিনা এটা জানার জন্য, পরিস্থিতিটা কি হবে? কিছু বোঝার আগেই মেয়ে অসুস্থ! এটা সেটা বলে কত অপবাদ দিয়ে বিয়ে তো ভেঙে দেবেই, সঙ্গে আরও কত কী! এই ভয়ে বাবা-মা ব্যাপারটা গোপন রাখেন। ফলে রোগের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ছেলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

আমরা নিজেদের যতই শিক্ষিত বলে দাবি করি না কেন, আজও আমাদের মধ্যে অনেক ব্যাপারেই কুসংস্কার, গোঁড়ামি প্রচলিত আছে। এজন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তাও প্রয়োচন। সরকার যদি আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করে দেয় যে, বিয়ের আগে প্রত্যেক ছেলেমেয়ের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস করতে হবে, তা হলে ব্যাপারটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।

মানুষ জানতে পারবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক মানে রোগ নয়। সে সম্পূর্ণ সুস্থ। শুধু দুজন বাহক বিয়ে করলে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া রোগ হতে পারে। আর সন্তানদের কারও এই রোগ হলে কি কি সমস্যা হতে পারে, সেটি আপামর জনতা জানতে পারলে তারা সতর্ক থাকতে পারবেন। এ লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি জেলায় জেলায় হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিসের পরীক্ষার উপকরণ ও নিশ্চিত করতে হবে। চাইলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যার বড় প্রমাণ সরকারের উচ্চ প্রোগ্রাম। শুধু দরকার সমন্বিত সচেতনতা ও যথাসময়ে যথা উদ্যোগ। লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারি অধ্যাপক

Development by: webnewsdesign.com