ডা. মো. আরমান হোসেন রনি
বর্তমানে অনেক রোগীর ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের রোগীদের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশংকা শতকরা ২৫.১ ভাগ। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অন্ধত্বের প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। এ রোগে সাধারণত দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করা হলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের তুলনায় টাইপ-১ ডায়াবেটিসে রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশংকা বেশি। যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস রয়েছে ৩০ বছর পর তাদের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশংকা শতকরা ৯০ ভাগ।
* কার ঝুঁকি বেশি
▶ দীর্ঘ সময় ধরে ডায়াবেটিসে ভোগা : ৩০ বছর বয়সের আগে যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তাদের রোগ হওয়ার ১০ বছর পর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশংকা শতকরা ৫০ ভাগ থাকলেও রোগ হওয়ার ৩০ বছর পর এর আশংকা বেড়ে হয় শতকরা ৯০ ভাগ। ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার ৫ বছরের মধ্যে অথবা বয়োসন্ধিকালের আগে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিক হওয়ার আশংকা খুবই কম।
▶ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস : দীর্ঘ সময় ধরে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এর সুফল টাইপ-২সি এর চেয়ে টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীরাই বেশি পেয়ে থাকে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এইচবিএ-১সি টেস্ট-এর মান ৬-৭ শতাংশের মধ্যে রাখা বাঞ্ছনীয়। ডায়াবেটিক রোগীদের এইচবিএ-১সি টেস্টের মান ১ শতাংশও কমিয়ে আনতে পারলে ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের ছোট ছোট রক্তনালিতে যে জটিলতা হয় তা প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।
▶ গর্ভাবস্থা : গর্ভাবস্থার সঙ্গেও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশংকা খুঁজে পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে রেটিনোপ্যাথি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
▶ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ : সাধারণত টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চরক্তচাপও থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চরক্তচাপ ১৪০/৮০ মিলিমিটার পারদের নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
এছাড়াও যাদের কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপান করেন, যাদের রক্তে চর্বি বেশি, ছানি অপারেশন, স্থূলতা ও রক্তশূন্যতায় যারা ভোগেন তারাও ঝুঁকিতে থাকেন।
* প্রতিরোধে যা করবেন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চরক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, রক্তে চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুষম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করা, দুশ্চিন্ত না করা ও নিয়মিত ওষুধ সেবন করাই উত্তম প্রতিরোধ।
* মনে রাখবেন
ডায়াবেটিসের স্থায়িত্বকাল রেটিনাপ্যাথির তীব্রতা ও চোখের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে। সময়মতো ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করতে পারলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা কমে যায়। ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সি সব ডায়াবেটিক রোগী, যাদের এক বছরের বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিস আছে এবং ৩০ বছরের বেশি বয়সের ডায়াবেটিক রোগীদের বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের দ্বারা চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা জরুরি। লেখক: কনসালটেন্ট (চক্ষু), দীন মোহাম্মদ আই হসপিটাল, সোবাহানবাগ, ঢাকা।
Development by: webnewsdesign.com