দেহের অন্যতম চালিকা শক্তি হল ব্রেন বা মস্তিস্ক । এটি মানব দেহের সবচেয়ে জটিল এবং অন্যতম বৃহত্তম অঙ্গ। সমগ্র দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো এখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় ।তাই আপনার দৈনিন্দন খাদ্যভাস কেমন তার উপর নির্ভর করবে ব্রেন নামক মেশিনটি কেমন পারফর্ম করবে । কারণ আপনি যে খাবারগুলো খান সেগুলি আপনার মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । হঠাৎ,করে কোনকিছু ভুলে যাওয়া,কোন কিছু শুনলেন কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর সেটি মনে করতে পারছেন না অথবা কাঊকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ডেকেছেন কিন্তু সে আসার পর আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি মনে করতে পারলেন না,অথবা আজকাল কোন কাজে ঠিক আগের মতো মনোযোগ দিতে পারছেন না । এমন অবস্থা যদি আপনার হয়,তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য ।
সুতরাং,জেনে নিন খাদ্য তালিকায় নিয়মিত কি রাখবেন আপনার ব্রেন পারফরমেন্স ভালো রাখার জন্য ?
নীচের এই খাবার গুলো দৈনিন্দন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে আপনার ব্রেনের পারফর্মেন্স হবে দুর্দান্ত ।
ফ্যাটি ফিশ বা তৈলাক্ত মাছ
মস্তিষ্কের জন্য সুপার ফুড গুলো আলোচনা করতে গেলে সবার প্রথমেই আসে ফ্যাটি ফিশ বা তৈলাক্ত মাছের কথা । তৈলাক্ত মাছের মধ্যে রয়েছে বোয়াল,রুই, স্যালমন,ট্রাউট,টুনা এবং সারডিন মাছ ।এই মাছ গুলো,ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উৎস হিসাবে সমৃদ্ধ ।জেনে অবাক হবেন যে,আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ % ই ফ্যাট দিয়ে তৈরী এবং যার অর্ধেক ফ্যাট হল ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড।
মস্তিস্ক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডকে, ব্রেন এবং নার্ভ সেল তৈরীর কাজে ব্যবহার করে।এই ফ্যাট গুলো লারনিং এবং মেমোরি পাওয়ার এর জন্য অপরিহার্য । এছাড়া ওমেগা-৩ বয়সের কারনে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া এবং অ্যালজেইমার ডিজিস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ।তৈলাক্ত মাছ সমূহ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের উৎকৃষ্ট উৎস
গাঢ় সবুজ রঙের শাক এবং পালং
গাঢ় সবুজ রঙের শাক বা পালংশাক,স্বাদে যেমন অতুলনীয় তেমনি মস্তিস্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুনে ভরপুর।পালংশাক এবং অনান্য গাড় সবুজ রঙের শাকে অন্যান্য ভিটামিন এবং মিনারেলস এর পাশাপাশি মস্তিষ্কের অন্যতম জালানি ভিটামিন-কে,রয়েছেপ্রচুর পরিমানে।
“ফেডারেশন অব আমেরিকান সোসাইটিস” এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় থাকলে ১ সারভিং গাড় সবুজ রঙের শাক প্রাপ্ত বয়স্কদের স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া কমাতে সাহায্য করে ।
গাড় বা পাতা যুক্ত সবুজ শাক সবজিতে উচ্চ মাত্রায় ফোলেট এবং ভিটামিন বি ১২ থাকে যা ডিমেন্সিয়া থেকে মস্তিস্ককে রক্ষা করে । দেহে উচ্চ মাত্রার হোমোসিস্টিনের উপস্থিথির কারনে অ্যালজেইমার রোগের ঝুঁকি দিগুণ বেড়ে যায় । দেহে হোমোসিস্টিন নামক অ্যামিনো এসিডের বেড়ে যাওয়ার কারন হিসাবে দেহে ফোলেট,ভিটামিন বি-১২এবং বি-৬ এর অভাবের সম্পর্ক রয়েছে।
নারকেল তেল
স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উপস্থিতির কারনে এখনো রান্নার তেল হিসাবে নারকেল তেল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নারকেল তেল অতুলনীয় ।
“বিবিএ” ক্লিনিক এর এক গবেষণা অনুসারে নারকেল তেলের মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস এর মাঝে উচ্চ ঘনত্ত রয়েছে যা কিটোন হিসাবে ভাঙ্গে এবং এই কিটোন ব্রেনের যে সেল রয়েছে তার ফুয়েল হিসাবে ব্যবহিত হয় ।তাহলে এখন থেকে মাঝে মাঝেই অল্প করে হলেও ব্যবহার করুন নারকেল তেল।
ডিমের কুসুম
কি ডিমের কুসুমের কথা শুনেই ভড়কে গেলেন ? ভাবছেন আপনার কোলেস্টেরল লেভেল এর কি হবে? তবে আপনার জন্য রয়েছে সুখবর,গবেষণায় দেখা গেছে যে দেহের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে ডিমের কুসুমের কোন প্রভাব নেই।ডিমেরকুসুমেরয়েছেকোলিনযা গর্ভের শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।সুতরাং আস্ত ডিম খান টেনশন ছাড়া।
কিশমিশ
শুকনো কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বোরন । “ইউএসডিএ” এর এক দল গবেষক তাদের গবেষণায় লক্ষ্য করেছেন যে প্রতিদিন ২-৩ মিলিগ্রাম কিশমিশ গ্রহনে কাজের প্রতি মনোযোগ এবং মনে রাখার ক্ষমটা প্রায় ১০ গুন বৃদ্ধি পায়।শুধু তাই না কিশমিশ খেলে রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণে থাকে ।তাই মনোযোগ আর মনে রাখার ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য বড় ছোট সবার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কিছুটা হলেও কিশমিশ রাখুন ।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
খাটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সত্যিকার অর্থে ব্রেন ফুড বলে বিবেচিত । শক্তিশালী,অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট,পলিফেনলস এই তেলে পাওয়া যায় । প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অন্তর্ভুক্ত করলে শুধুমাত্র শেখার ক্ষমটা বৃদ্ধি পায় তা নয়।বরং,বয়স এবং রোগের কারনে যে মস্তিষ্কের যে,পরিবর্তণ গুলো হয় তাওকমায় ।এছাড়া,খাটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল “অ্যামিলয়েড বিটা ডিরাইভড ডিফিউজিবল লিগান্ডস”(এডিডিএল) প্রোটিন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে যা ব্রেনের জন্য বিষাক্ত এবং অ্যালজেইমার কে প্ররোচিত করে ।তবে রান্নার তেল হিসাবে অলিভ অয়েল ভালো বিকল্প নয়।কারণ,অলিভ অয়েল হাইড্রোজিনেজড এবং উচ্চ তাপমাত্রায় ডিকম্পসড হওয়া শুরু করে। তাই, অলিভ অয়েল কক্ষ তাপমাত্রায় ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো ।
হলুদ
হলুদ যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এই কথাটা প্রাচীন কাল থেকেই প্রমানিত ।আমাদের দেশে রান্নায় হলুদের ব্যবহার ও নতুন নয় । হলুদে কারকিউমিন নামক যে রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে তা প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম ।হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দেহে এন্টিওক্সিডান্ট এর লেভেল বৃদ্ধি এবং মস্তিস্কে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ।
ডার্ক চকোলেট
আপনি যদি চকোলেটপ্রেমী হোন,তবে আপনার জন্য সুখবর।চকোলেটের ফ্লাভোনয়েড,পলিফেনলস এবং এন্টিঅক্সিডান্ট ব্রেন পাওয়ার এর জন্য ভীষণ ভালো ।তাই এখন চকোলেট খান নিশ্চিন্তে তবে খেয়াল রাখবেন মিষ্টি নয় আপনাকে খেতে হবেডার্কচকোলেট ।
ব্রকলি
ব্রকলি ভিটামিন কে এর খুব ভালো উৎস । ভিটামিন কে,কগনিটিভ ফাংশন এবং ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী হিসাবে পরিচিত।ব্রকলিতে উচ্চ পরিমানে গ্লুকোসিনোলেটস নামক যৌগ রয়েছে যা নিউরোট্রান্সমিটার,অ্যাসিটোকলিন এর ভাঙ্গন হ্রাস করতে সহায়তা করে। এই অ্যাসিটোকোলিন আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্রের কাজ যথাযথ ভাবে সম্পাদন করতে এবংআমাদের স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখতে সহায়তা করে।
সুতরাং,উপরের খাবার গুলো খান এবং ব্রেনকে সচল রাখুন।
Development by: webnewsdesign.com