ঘটনাবহুল বছর ছিল ২০১৯। বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন আর বছরের শেষ মুহূর্তে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ছিল সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। সদ্য শেষ হওয়া বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। তবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আরেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট-২০১৯’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির ৯টি খাতে বাংলাদেশের নাজুক দশার চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯টি খাতেই পিছিয়েছে বলে জানানো হয়।
যে ৯ খাতে পিছিয়েছে বাংলাদেশ:
১. নিরাপত্তা, দুর্নীতি ও বাকস্বাধীনতা: ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সংঘবদ্ধ অপরাধ, খুন, সন্ত্রাস ও পুলিশের ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতার ইস্যুতে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। পুলিশের ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। এছাড়া বিচারিক স্বাধীনতা বা বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তলানিতে আছে বাংলাদেশ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তথা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চার ধাপ পিছিয়ে ১২৩তম অবস্থানে নেমেছে।
২. সেবাখাত: আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে সেবাখাতেও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। যোগাযোগ অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির মতো সেবাখাতগুলোর অবকাঠামো পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০’রও নিচে। এরমধ্যে সড়ক ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। অবনমন হয়েছে পানি ব্যবস্থাপনায়ও। নিরাপদ পানির সূচকে ১১৬তম অবস্থান থেকে ১২৪তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ।
৩. তথ্য-প্রযুক্তি খাত: ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট-২০১৯’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে মোবাইল, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ১৪১টি দেশের মধ্যে ৬ ধাপ পিছিয়ে ১০৮ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ।
৪. সামষ্টিক অর্থনীতি: প্রতিবেদনে মুদ্রাস্ফীতি ও ঋণের নানা দিক বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ৭ ধাপ পিছিয়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৫তম স্থানে। আগের বছর ২০১৮ সালে মুদ্রাস্ফীতিতে ১০৫ ও ঋণের বৈচিত্র্য সূচকে ৮০তম অবস্থানে থাকলেও তা নেমে ১১৪ ও ৮৩তম অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
৫. গ্র্যাজুয়েটদের মান ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান: মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যেটুকু দক্ষতা প্রয়োজন তার কতটুকু তারা অর্জন করতে পারে- এমন সূচকে ২ ধাপ পিছিয়ে ১২৩তম অবস্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
একটি দেশের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মুখস্থবিদ্যা নাকি উদ্ভাবনী ও ক্রিটিক্যাল চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করেন- এমন প্রশ্নে ৮ ধাপ পিছিয়ে ১১৫তম অবস্থানে বাংলাদেশ। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
৬. নিয়োগ, বরখাস্ত ও শ্রমিক অধিকার: প্রতিবেদনে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও নমনীয়তার বিষয়গুলোকে শ্রমবাজারের আওতায় এনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেখানে ৬ ধাপ পিছিয়ে ২০১৯ সালে ১২১তম স্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। সহজেই শ্রমিকদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে পিছিয়েছে ২৫ ধাপ। আর শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে ১৭ ধাপ পিছিয়ে ১০৯তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
৭. ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা: বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অর্থসংস্থান, উদ্যোক্তাদের জন্য মূলধনের প্রাপ্যতা, বিমা সুবিধা ও ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা সূচকে ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে ৩ ধাপ পিছিয়ে ১২৯তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। যেখানে আফ্রিকার দেশ মালি বা ঘানাও আছে বাংলাদেশের উপরে।
৮. ব্যবসায় নানা মাত্রিকতা: নতুন কোনও ব্যবসা শুরু কিংবা ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার সূচকে ১ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০।
৯. উদ্ভাবনী খাত: দক্ষ কর্মী, স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণের দৌড়ে আগের বছরের তুলনায় ৩ ধাপ পিছিয়ে ২০১৯ সালে ১০৫তম অবস্থানে নেমেছে বাংলাদেশ। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুবিধা ও বরাদ্দে ৫ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম।
Development by: webnewsdesign.com