জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং বার্ষিক পরীক্ষায় কেউ ফেল, কেউ জিপিএ-৫ না পাওয়ার অভিমানে মোট নয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে ছয়জন ছাত্রী, তিনজন ছাত্র। সবাই ফল প্রকাশের দিন গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সময় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
তাদের মধ্যে পাবনায় এক ছাত্রী, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় এক ছাত্র ও এক ছাত্রী, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় দুই ছাত্রী, বরিশালে এক ছাত্রী, নেত্রকোনায় এক ছাত্র, রাজবাড়ীতে এক ছাত্রী ও রাজধানীর লালবাগে একজন ছাত্র রয়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাকা : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ফেল করায় রাজধানীর লালবাগে একটি বাসায় তুষার (১৪) নামের এক স্কুলছাত্র আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তুষারের মামা জাকির হোসেন জানান, তুষারের বাবার নাম মজিবর রহমান। লালবাগ থানার বিপরীত পাশে মসজিদ গলির ষষ্ঠ তলার বাসার তৃতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত তুষার। লালবাগের এ কে ইন্টার গার্ডেন স্কুল থেকে এবার সে জেএসসি পরীক্ষা দেয়। আজ (মঙ্গলবার) তার রেজাল্ট দিয়েছে। তবে ফেল করেছে সে। এ রেজাল্ট দেখার পর থেকেই মন খারাপ ছিল তার। পরে সবার অগোচরে বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেয় সে। স্বজনরা দেখতে পেয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
পাবনা : পাবনায় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অকৃতকার্য (ফেল) হওয়ায় ফাঁস দিয়ে মুসলিমা খাতুন (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী অত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের আশুতোষপুর গ্রামের মন্ডলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। মুসলিমা ওই গ্রামের মো. মহিত সরদারের মেয়ে। সে আশুতোষপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছিম আহম্মেদ জানান, স্কুলছাত্রী মুসলিমা খাতুন জেএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় লজ্জায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে স্বজনরা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
দিনাজপুর : পরপর তিনবার জেএসসি পরীক্ষায় ফেল ও ফলাফল খারাপ হওয়ায় অভিমান করে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় সাগর মূর্মু (১৬) ও তাপসি তিগ্যা (১৪) নামে দুই শিক্ষার্থী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিরামপুর উপজেলার খাঁনপুর ইউনিয়নের ঘোড়াপাতা গ্রাম এবং একই উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের চৌঘুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিরামপুর থানা পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাপসি তিগ্যা একই উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের চৌঘুরী গ্রামের নরেশ তির্গার মেয়ে এবং স্থানীয় কাটলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ শ্রেণির ছাত্রী।
সাগর মূর্মু খাঁনপুর ইউনিয়নের ঘোড়াপাতা গ্রামের অগাষ্টাটিনি’র ছেলে। তাপসি তিগ্যা এবার কাটলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২.৭৯ গ্রেডে উর্ত্তীণ হয়েছিল। সাগর মূর্মু ফুলবাড়ি বাসুদেবপুর মডেল স্কুলের জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
বিরামপুর থানা পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, উপজেলার খাঁনপুর ইউনিয়নের ঘোড়াপাতা গ্রামে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এক যুবকের লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে সাগর মূর্মুর লাশ উদ্ধার করে। তার পরিবারের দাবি, সে জেএসসি পরীক্ষায় পর পর তিনবার ফেল করার কারণে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
অপরদিকে, স্থানীয় কাটলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, জেএসসি পরীক্ষায় ওই ছাত্রীর ফল খারাপ হয়। বাড়িতে কেউ না থাকায় ওই ছাত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সন্ধ্যায় তার মা-বাবা বাড়িতে এসে মেয়েকে না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়।
শরীয়তপুর : জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ফেল করায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ফাতেমা আক্তার (১৪) নামে এক পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে নিজ বাসায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। সদ্য প্রকাশিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় গণিতে ফেল করায় আত্মহত্যা করেছে ফাতেমা।
ফাতেমা আক্তার উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের মিত্রসেনপট্টি গ্রামের মোস্তফা খাঁ ও নাজমা বেগম দম্পতির মেয়ে। এবার ইদিলপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল সে। মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে অংকে ফেল করে ফাতেমা।
অন্যদিকে একই উপজেলায় বার্ষিক পরীক্ষায় তিন বিষয়ে ফেল করায় সামিয়া আক্তার (১১) নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজ ঘরে ওড়নায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।
সামিয়া আক্তার উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের হাজী সাদিম আলী বেপারী কান্দি গ্রামের সিরাজ মালতের মেয়ে। সে একই গ্রামের ৭৮নং বেপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গোসাইরহাট থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আলাওলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ৭৮নং বেপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। সামিয়া তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। এ খবর তাদের বাড়িতে জানাজানির পর তার মা তাকে রাগ করায় সে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা যায়।
গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলছাত্রী ফাতেমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সে গত বছরও জেএসসিতে একই বিষয়ে ফেল করেছিল। এ বছরও একই বিষয়ে ফেল করল সে। পরে জানতে পেরেছি সামিয়া নামে আরেক শিশু আত্মহত্যা করেছে। শিশুটি ফেল করায় মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেছে বলে জানতে পেরেছি।
বরিশাল : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পাওয়ায় বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাহিদা আক্তার (১৬) আত্মহত্যা করেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর ) দুপুর ১টার দিকে নিজ বাসায় ফাঁস লাগিয়ে সে আত্মহত্যা করে। সাহিদা বরিশাল নগরীর কাউনিয়া প্রথমগলি এলাকার রফিকুল ইসলাম শাহিনের মেয়ে। সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার সে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি আজিমুল করিম স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, সাহিদা মেধাবী ছাত্রী ছিল। সাহিদা আশা করেছিল জেএসসিতে জিপিএ-৫ পাবে। সেভাবেই সে পড়ালেখা করেছিল। তবে দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফলাফল জানতে পারে সে শুধু , ‘এ’ পেয়ে পাস করেছে। এতে সাহিদা ভেঙে পরে। কাঁদতে থাকে। একপর্যায়ে বাসার সকলের অগোচরে রুমের দরজা লাগিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দেয় সাহিদা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাহিদাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসি আজিমুল করিম জানান, ময়নাতদন্তের জন্য সাহিদার মৃতদেহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নেত্রকোনা : পরীক্ষার ফল খারাপ করায় নেত্রকোণার কলমাকান্দায় রুদ্র সরকার আলয় (১২) নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রুদ্র কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও চা বিক্রেতা রাখাল সরকারের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালযের বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার ফল খারাপ করায় মন খারাপ করে বাড়িতে ফেরে রুদ্র। বাড়িতে গিয়ে সরাসরি নিজের রুমে চলে যায় সে। সন্ধ্যা পরও ঘর থেকে না বের হওয়ায় তার চাচি ডাকাডাকি শুরু করেন। কোনো উত্তর না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখেন আড়ার সঙ্গে ফাঁস নিয়ে ঝুলে আছে রুদ্র। তার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন। দ্রুত রুদ্রকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কলমাকান্দা থানা পুলিশের ওসি মো. মাজহারুল করিম বলেন, খবর পেয়ে সোমবার রাতেই লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নেত্রকোণা মর্গে পাঠানো হবে।
রাজবাড়ী : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ফেল করায় মীম আক্তার (১৪) নামের এক স্কুুলছাত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়িতে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। মীম ওই গ্রামের নাহিদ শিকদারের মেয়ে এবং ইউনিয়নের চর জৌকুড়ী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের চর জৌকুড়ী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দেয় মীম। মঙ্গলবার পরীক্ষায় ফল বের হলে, এতে সে ফেল করেছে শুনে লজ্জায়, অভিমানে আত্মহত্যা করেছে।
রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ওসি স্বপন মজুমদার জানান, মীম নামে এক শিক্ষার্থীর ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সে জেএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে।
Development by: webnewsdesign.com