নদীর গন্তব্য সমুদ্র। বাংলাদেশের শিয়রে হিমালয় আর বুক থেকে পায়ের পাতা অবধি সমুদ্রের নোনাজল ও ঢেঊয়ের তাণ্ডব। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বলতে বাংলার এই প্রান্ত থেকে ঐপ্রান্ত নির্দেশ করে। কিন্তু এই প্রান্ত সীমায় পুরো দেশ বেষ্টন করা যায় না। মানুষের হাতে গড়া মানচিত্রের মতো নদীর প্রবাহপথ সহজ নয়। চেনা ও জানার সুবিধার্থে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার পনেরোটি নদী নিয়ে এই পরিবেশনা।
নাফ..
খেয়ালী সমুদ্র কখনো কখনো স্থলভাগের দিকে উড়ে যেতে চায়। অনেকদূর থেকে উড়ে আসা গাঙচিল সমুদ্রের কোলে আরেক সামুদ্রিক আবাস খোঁজে। সমুদ্র, লবণ আর গাঙচিলের দুর্বার ইচ্ছে কখনো পুরন হয় কখনো হয় না। নীল, আমাজন, নাইজার, মারেডারলিং এমনই নদী যাদের খ্যাতি বিশ্বময়। আমাদের ভূখণ্ডে এমনই এক নদী আছে যাকে আমরা নদী বলে জানলেও এটি আদত সমুদ্রের বর্ধিত অংশ। সমুদ্র এখানে সমতলের দিকে হেঁটে এসেছে। জলের তীব্র লবনাক্ততা আর উজানে সুস্পষ্ট জলের উৎস না থাকার কারণে এই ধারণা আরও প্রাণ পায়। এই নদীর নাম নাফ। এই নদীর নাম নিরন্তর পাপ। এই নদী এক জলন্ত সাপ। এই নদী কেবলই বাড়ায় উত্তাপ।
অনেক গবেষক তাদের বইতে নাফ নদীকে আরাকানের পাহাড়ে উৎপন্ন নদী বলে ছেপে দিয়েছেন! কিন্তু তাদের বর্ণিত উৎসমুখে জলের কোন সঞ্চালন নেই। নাফের জন্ম কোন স্থলভাগে নয়। নাফ সমুদ্র থেকেই সমতলে উঠে এসেছে। সমুদ্র থেকে বাংলাদেশের টেকনাফ আর মায়ানমারের তুমব্রু এলাকা পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার নীল জলের নান্দনিক নিসর্গের নাম নাফ। এর গভীরতা কোথাও ১২০ মিটার কোথাও ৪০ মিটার। প্রস্থ স্থানবিশেষে ১.৬১ কিলোমিটার হতে ৩.২২ কিলোমিটার। জোয়ার ও ভাটার ১০০ ভাগ প্রভাবে তীব্র স্রোত আর প্রবাহ নিয়ে নাফ বয়ে চলে দোলায় দোলায়। বাঁকে বাঁকে নাফের রূপ লাবণ্য রাখাইন ছন্দ আর সামুদ্রিক ঘ্রাণ মাতিয়ে রাখে পর্যটকের চোখ মুখ মন ও মনন।
মাদক পাচারের ডায়মন্ড রুট হিসেবে চিহ্নিত এই নদীর আগাগোড়া। এর উপরে যুক্ত হয়েছে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার ভূমিপুত্ররা আজ এই নদীর তীরে আমাদের আশ্রয়প্রার্থী। নাফের উত্তাল জলপ্রবাহ পেরিয়ে দলে দলে চলে এসেছে আমাদের ভূখন্ডে। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের হৃদয় সমুদ্রের চেয়ে বিশাল আর প্রমত্ত নদীর চেয়েও বেশি কলকল। আমরা লক্ষ লক্ষ শরণার্থী আর লক্ষ লক্ষ ইয়াবা একসঙ্গেই গ্রহণ করতে পারি। নাফের এই পাপ আজকের নয়, নদীটিকে প্রথম অ্যাংলো-বার্মা যুদ্ধের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই স্পর্শকাতর জলভাগ বারবার রঞ্জিত হয়েছে। জোয়ার এলেই সব ধুয়ে মুছে আবার নতুন রক্তপাতের জন্য প্রস্তুত হয় নাফ।
মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাসাকা, লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু আর মাদক চোরাকারবারীদের কারণে এই নদী নিরাপদ নয় পর্যটকের কাছে। ছোট ছোট টিলা, সুশোভিত সমতল, পাহাড়ি খাড়ি আর দুর্দান্ত নীল স্বচ্ছজলের এই ভূস্বর্গ আমাদের অধরাই থেকে যাবে অনন্তকাল। শাহ পরীর দ্বীপ, জালিয়াদ্বীপ, দক্ষিণপাড়া ছাড়িয়ে এই নদীর সুন্দর ছড়িয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত। এরপর শুধুই সমুদ্র শুধুই জল…
বাঁকখালী
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নাম কে না জানে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নন্দনের এমন সুস্মিত সমন্বয় কোথাও মেলে কি ? একদিকে সমুদ্র আরেকদিকে পাহাড় ঝিরি ঝর্ণা বালুকারাশি। রাখাইন বালিকার অনাবিল হাসি। কক্সবাজার যেন প্যাকেটভর্তি অনন্ত সুন্দরের উপস্থাপন। কিন্তু এই পর্যটন নগর কোন নদীর তীরে অবস্থিত? এই প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে না প্রায়ই! বিশাল সমুদ্রের কাছে একটা নদী আমাদের অলক্ষেই চলে যেতে পারে। কর্ণফুলী, মাতামুহুরী আর সাঙ্গুর আরেকবোন বাঁকখালী আমাদের চিরচেনা নদী তালিকার বাইরেই পড়ে আছে অনন্তকাল। আজ সমুদ্র থেকে নদীর দিকে পাড়ি দেব। সোনাদিয়া দ্বীপ মহেশখালী আর কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে কক্সবাজার শহরের দিকে যাবার একটাই জলপথ। একপাশে খুরুশকুল আরেকপাশে নাজিরারটেক। পেছনেই কক্সবাজার বিমানবন্দর। এইপথ মাছ ধরা ট্রলার লবণের নাও আর যাত্রীবাহী স্পীডবোটের শব্দে সদামুখর। একপাশে ছোট ছোট টিলা আরেকপাশে সৈকতের ঝাউবন। মোহনায় সামান্য একচিলতে ম্যানগ্রোভ দেখে কেউ চমকে উঠতে পারে। এই বালুকাবেলায় গঙ্গালতার জঙ্গলে কে এমন করে কেওড়ার শ্বাসমূল রুইয়ে দিয়েছে ! এখানেই নন্দনের শেষ এরপর কেবল দখল আর হননের পালা। নদী এখানে এসে গণধর্ষণের শিকার। যে যেভাবে পেরেছে নদীর বুকে পিঠে মেরে দিয়েছে লালসার ধারালো ছুরি।
রামু এসে যেন কিছুটা হাঁফ ছেড়েছে নদী। রামুতে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ পেরিয়ে নদী চলে গেছে নাইক্ষংছড়ির দিকে। বাঁকখালীর জন্ম এর উজানে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি ঝিরি ঝর্ণা ও ছড়ার সম্মিলনে। ভারতে মাত্র দুই কিলোমিটার বয়ে সে চলে এসেছে আমাদের দেশে। পাহাড়, সমতল আর বিস্তীর্ণ খাড়িপথে বাংলাদেশে বাঁকখালী ৬৭ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর প্রশস্থতা গড়ে ৭৫ মিটার। গভীরতা রহস্যজনক। আপাত শান্ত নিরীহ এই নদীর গভীরতায় অসংখ্য মানুষের সলিল সমাধি হয়েছে।
১৮ শতকের শেষদিকে বার্মা আরাকান দখল করে। আরাকানের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের উপর চালায় নির্মম উৎপীড়ন ও নির্যাতন। তারা আশ্রয় নেয় বাঁকখালীর বাঁকে। এসময় ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নিপীড়িত নিগৃহীত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে পুনর্বাসন করেন। মূলত এই বাঁকখালি নদী ঘিরেই তাদের নতুন জীবনের শুরু। এরা সেই আশ্রয় ও পুনর্বাসন দেয়া কক্স সাহেবের সমাধিও গায়েব করে দিয়েছে। আর বাঁকখালি নদী তো ওদের কাছে ডালভাত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই নদীতে কাঠের জেটি নির্মিত হয়। গোলাবারুদ আর যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহ হত এই পথেই। এই পথে আরব বনিকেরা, পর্তুগীজ ওলন্দাজ আর হার্মাদ নামে খ্যাত আরাকান জলদস্যু আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহীনির জাহাজ বিক্রান্তসহ মিত্রবাহিনীর সদস্যগণ এই নদী হয়েই বাংলাদেশে অবতরণ করেন।
বাঁকখালী বাংলায় লিখে গুগলে সার্চ দিলে নদীর নামে যেসব অপকর্ম ও নির্যাতনের চিত্র ভেসে উঠবে তা লিখতে আমার রুচিতে বাঁধছে। মানুষ নদী হননের যে খেলায় মেতেছে তা সমুদ্রের দিকে ছুটে চলছে বাঁকখালী তার জলন্ত উদাহরণ।
সাঙ্গু
সমুদ্র থেকে উঠে আসা নাফের ঠিক মাথায় বান্দরবন জেলা । রুমা থানচি আর আলিকদম নিবিড় নিসর্গ ও নন্দনের জনপদ। পাশেই ভারতের দেবাশরা আর মায়ানমারের কাওয়াং। তিন তিনটি দেশের মাটির উত্তাপ ছুঁয়ে এক দুরন্ত নদীর জন্ম। এই নদীর নাম সাঙ্গু। কোথাও সাপের মতো কোথাও ফিতাকৃমির মতো আবার কোথাও কোথাও আপাত সরলরেখায় চালিত হয়েছে আমাদের আমাজন সাঙ্গু। ২৭০.৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী। প্রশস্ততা গড়ে ১৫০ মিটার গড় গভীরতা ১৫ মিটার। কর্ণফুলীর মোহনা থেকে ১৬.০৯ কিমি দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
সাঙ্গু নদীর প্রধান উপনদী ডলু সাতকানিয়া উপজেলার সমভূমি নিষ্কাশন করে উত্তরমুখে প্রবাহিত হয়ে আবার এই নদীতেই মিশেছে। পটিয়া সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত চান্দখালি নদীও এর ডানপাশে এসে মিলিত হয়েছে। আরও ভাটিতে এটি কুমিরাখালির সঙ্গে মিলিত হয়ে অবশেষে কুতুবদিয়া চ্যানেলে পড়েছে। এ নদীর পাহাড়ী ঢল প্রবল বেগে নিম্ন ঢালে নেমে আসে, ফলে নিম্ন অববাহিকার নদী তীর সংলগ্ন প¬াবনভূমি প্রায়শ: আকস্মিক বন্যায় প¬াবিত হয় এতে বিপুল পরিমাণে ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে থাকে। শীতকালে সাঙ্গু নদীর স্রোত অনেকাংশে ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। বর্ষায় তীব্র আকার ধারণ করে। সাঙ্গু নদীর দুই তীরের পাহাড়, বন, নদী ও ঝর্ণার সৌন্দর্যে যে কোনো পর্যটকই বিমোহিত হন। সাঙ্গু অপার মুগ্ধতার নদী। যে নদীর বাঁকে বাঁকে অজানা ও অদেখা সুন্দর লুকিয়ে আছে।
অপূর্ব এই নদীর দুইদিকে পাহাড়ের সারি। বর্ষায় পাহাড় বেয়ে নামে ছোট বড় অসংখ্য ছড়া। ছল ছল শব্দে ছড়ার চঞ্চল জল এসে মেশে নদীতে। পাহাড়ের ওপরে ভেসে বেড়ায় মেঘ। মনে হয়, ওই চূড়ায় উঠলেই বুঝি ছোঁয়া যাবে, ধরা যাবে, মেঘের মাঝে ভেসে বেড়ানো যাবে। সাঙ্গু নদীর আরেক নাম শঙ্খ। এই নদীর পাহাড়ি অংশের ঢলের শব্দের সাথে শাঁখের বিমোহিত স্বর ভেসে আসে তাই এর নাম শঙ্খ। তবে সাঙ্গু নামকরণের সাথে পাহাড়ি তান্ত্রিকের যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা যায়। সাঙ্গু স্থানীয় ভাষায় সমুদ্রে নিমজ্জ্বমান ঋষি। এই ধ্যানরত নদী আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলপ্রবাহ। ঋষি ক্ষেপে গেলে খবর আছে। পাহাড় সমুদ্র আর তিন দেশের মানুষের চোখে সবুজ আলো জেলে সাঙ্গু আমাদের অবহেলিত আমাজন। যার অনেকটাই আমাদের অদেখা ও অজানা।
কর্ণফুলী
কবে কার কান থেকে ফুল খুলে নদীর জলে পড়েছে- এই প্রশ্ন আমার নয় প্রিয়কবি কাজী নজরুল ইসলাম করেছেন একটি নদীর কাছে। সেই নদীর নাম কর্ণফুলী। কান থেকে ফুল খুলে পড়া একেবারে অবান্তর বলে উড়িয়েও দেয়া যায় না। আমাদের এমন অনেক লোকশ্রুতি রয়েছে যা আমাদের মুখে মুখে প্রবাহিত লোকসত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এসব মিথ্যে কল্পনা হতে হাজারগুণ উন্নত ও ঐতিহ্য জাগানিয়া।
ফুলপ্রেমি আরাকানের রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে তাঁরা এই নদীতে নৌবিহারে যান। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান। রাজপুত্রও রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হননি। রাজকন্যা ও রাজপুত্রের যুগল আত্মাহুতির করুণ কাহিনী থেকে নদীর নাম হয় কর্ণফুলী। মার্মা আদিবাসীদের কাছে নদীটির নাম কান্সা খিওং। কান্সা খিয়ং মানে কানের ফুল খোয়ানো । অতীতে এই কর্ণফুলী ছিল আরাকান মিজোরাম আর বাংলাদেশের যোগসূত্র। আরাকান রাজকন্যা আর আদিবাসী রাজপুত্রের কথা তো আগেই বলেছি, এবার মিজোরামের দিকে যাই। মিজোরামে কর্ণফুলীর নাম খাওৎলাং তুইপুই, এর বাংলা তরজমা হল প্রেমিক মারা দুষ্ট কন্যা !
কর্ণফুলী ভারতের মিজোরামের মমিত জেলার শৈতা গ্রাম (লুসাই পাহাড়) হতে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার ঠেগা নদীর মোহনা বা ঠেগামুখ হতে বড় হরিণার মুখ পর্যন্ত এই ৬ কিলোমিটার কর্ণফুলী ভারত বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ করেছে। এই ছয় কিলোমিটার নদীর ডান পাশে ভারত এবং বাম পাশে বাংলাদেশ।
এই প্রেমিক মারা দুষ্ট কন্যার উত্তাল তরঙ্গে বুকে হিম জাগানিয়া ভয় নিয়ে সাম্পান চালায় যারা তারাই তো প্রেমিক। যারা মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নেমে পড়ে এই নদীর স্রোতে এই নদীতটে তারাই তো নিরাভয়। অনেক প্রেমিক মরে যাবার পরও কর্ণফুলীর প্রেমিকের অভাব হয় না, হবে না। প্রিয়ার কানের ফুল জল থেকে তুলে আনতে পৃথিবীর অনাগত অনেক প্রেমিক জলে ঝাঁপ দেবে। কেউ না কেউ আসবেই ফুল নিয়ে, সে আপন হাতে ফুল গুঁজে দেবে প্রিয়ার কানে…
মাইনি
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় মাইনির উৎপত্তি। এরপর ১০৯ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে এনদী কাপ্তাই হ্রদে পড়েছে। মাইনির প্রশস্ততা গড়ে ৬৫ মিটার। গভীরতা ৫-৮ মিটার। টলটলে জলের স্বচ্ছতায় এই নদী এখনো জীবন্ত। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির নিসর্গ ও নান্দনিক আবহের অনেকখানি এই মাইনীর অবদান। এই নদীর স্বচ্ছতোয়া জলের ঝিলিকে অবারিত সবুজ আর উর্বরা দুইতীরের বিস্তীর্ণ আবাদভূমি। মাইনির পাহাড়ি নাম মা। জনশ্রুতি আছে, ত্রিপুরা জনজাতি জলের জন্য জলদেবতার প্রার্থনায় মিলিত হয়। তাঁদের দীর্ঘ প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে জলদেবতা এই নদীর বন্দোবস্ত করেন। প্রথম প্রবাহের সময় এক শিশু আনন্দে আপ্লুত হয়ে মাইনি শব্দ উচ্চারণ করেন। সেই থেকে নদীর এ নাম।
ছয়ের দশক পর্যন্ত মাইনি নদীর তীরবর্তী এলাকা ছিল রিজার্ভ। সাধারণ মানুষের বসতি তৈরির অনুমোদন ছিল না। ১৯৬০ কাপ্তাই বাঁধের কারণে উদ্বাস্তু হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁদের নিয়েই নদীর পাড়ে জনবসতির শুরু। জন্ম নেয় এক নতুন জনপদ দীঘিনালা। যার সম্পূর্ণ ভর নদীর উপরেই ছিল। উদ্বাস্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ বুকে নিয়ে মাইনি তাঁদের চোখে স্বপ্ন বুনে দিয়েছে। বীজ পুঁতে রাখলেই ফসল দিতে কার্পণ্য করেনি সে। চারা ফেলে রাখলেও অবলীলায় বৃক্ষ করে দিয়েছে এই নদীর মমতা।
দীঘিনালার প্রাণ। উড়ে উড়ে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছে কাপ্তাই লেক অবধি। আগেকার প্রমত্ত মাইনি এখন চোখে পড়ে না। বর্ষায় সে দুকুল ছাপিয়ে ফসল তলিয়ে নেয় ঠিকই। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময়ে সে বড় ম্রিয়মাণ জড়সড়। বাহারী ফসলের পরিবর্তে এই নদীর দুই তীরে এখন কেবল তামাক আর তামাক। তামাক চাষে দরকার প্রচুর পরিমান রাসায়নিক সার। আর কীটনাশক। সার আর কীটনাশক মিলে ভালো তামাক জন্মায় কিন্তু মরে যাচ্ছে মাইনির সকল মাছ আর জীব বৈচিত্র্য। তৃণ আর গুল্মের লাগাতার বিনাশ মাইনির গভীরতা কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদের পাহাড়ি কইন্না ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। দীঘিনালার লক্ষ লক্ষ তামাকের চুলায় নদীও বাস্পায়িত হয়ে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে।
পাহাড়ে ও সমতলে দুইদিকেই মাইনি নদী। সেতু না থাকায় অনেক ঘুর পথ পেরিয়ে এখানকার বিদ্যার্থীরা পড়তে যায়। পাহাড়ি অংশে দুর্ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। শত শত কৃষি ও কৃষকের গ্রামের নদী মাইনী। মাইনি নদী অনেক অভিসার ও প্রেমগাঁথার সরব সাক্ষী। কবিতা ও গল্পে এই নদীর কথা আছে কিন্তু এসব স্থানীয় ভাষায় লিখিত। প্রমিত পৃথিবী না এসব পড়তে জানে, না পারে বুঝতে।
চেঙ্গি
গ্রামে শ্যামবর্ণের এক মেয়ে ছিল। খোলা আকাশের নিচে, বিস্তীর্ণ সবুজের মাঝে বসে সে শুধু ভাবতো, যদি ঐ দূরপাহাড়ের গা ঘেঁষে ছুটতে থাকা নদীটাতে ঘুরে বেড়ানো যেতো মনের মানুষের সঙ্গে! তার সেই ভাবনা একদিন সত্যি হলো। সে মনের মানুষের দেখা পেয়েছিলো। গ্রামের মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা চুপিচুপি দেখা করতো, নদীর পাড় ধরে হাঁটতো। সেই মেয়েটির নাম ছিল চেঙ্গি। ত্রিপুরা রাজ্যের মেয়ে চেঙ্গি ভালবেসেছিল অন্য জাতিগোষ্ঠীর একজনকে। এই মন দেওয়া-নেওয়া ভাল চোখে দেখেনি তার পরিবার এবং সমাজ। চেঙ্গিকে তারা আটকাতে চেয়েছিল। কিন্তু ভালবাসাকে সে পরাস্ত হতে দেয়নি। ঝাঁপ দিয়েছিল এই নদীতে। ভালবাসার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলো। এর থেকে নদীর নাম হয়ে যায় চেঙ্গি। চেঙ্গি নদীকে চাকমা ভাষায় বলে ‘চেঙ্গে’ আর মারমা ভাষায় ‘চৈঙ্গি’। যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই নদীর বহমান স্রোত আর সরলতা সবাইকে কাছে টানে। পুরাণে অনেক গল্পই থাকে, তাতে কি! যে নদীর এত রূপ তাকে নিয়ে তো কল্প-কহিনী থাকারই কথা। চেঙ্গি তার সৌন্দর্য্য এখনো ধরে রেখেছে। দেশের পার্বত্য অঞ্চল খাগড়াছড়ির প্রধান নদী এটি। আকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে চেঙ্গি নদী তার গতিপথ তৈরি করেছে বহু যুগ ধরে।
রামগড় জালিয়াপাড়া হয়ে পাহাড়ি জনপদ মাটিরাঙ্গা। এখান থেকে একটু এগুলেই আলুটিলা পর্যটন মোটেল। ১৭৬০ ফিট উঁচুতে ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে নিচের দিকে তাকালে ঈদের চাঁদের মতো সরু ধবধবে স্ফটিক রেখার দেখা মিলবে। এই রেখাটিই চেঙ্গি। চারপাশ সবুজ বনে ঘেরা আর পিনপতন নিরবতা। বনের নির্জনতা শোনার মত প্রসন্ন আনন্দ মনে হয় আর নেই। এখানে প্রকৃতিই সবচেয়ে সুন্দর। পাখিরা মুক্ত-স্বাধীন, তারা বাসা বাঁধে নির্ভয়ে। ফুলেরা নীরবে কথা সেরে নেয় বনের ও জুমের নীরবতাকে মান্য করে। পাহাড়গুলোতে জুম চাষ নিত্য-নৈমিত্তিক।
এই নদীর উৎপত্তি চেঙ্গি ইউনিয়নের পাহাড় এবং টিলাসমুহের চুঁয়ানো জলধারা থেকে। পাথরে পরিশুদ্ধ স্নিগ্ধ জলের ধারা নিয়ে এর প্রশস্ততা ২৫ থেকে ৩৫ মিটারের মধ্যে। বাঁকে বাঁকে এই নদী গভীরতায় উঠানামা করেছে। বর্ষায় এর ভয়াবহতা জুম চাষিদের নির্ঘুম আর চিন্তাক্লিষ্ট করে রাখে। জলের তাণ্ডবে ভেঙ্গে দেয় সাজানো বাগান, নিশ্চিন্ত বসতি। এই নদীর বয়ে চলা পথ ৯৬ কিলোমিটার। মাঝে মাঝে যখন শুকনো জুমের ক্ষেতে আগুন ধরে যায়, এর লেলিহান শিখা দূর-দূরান্ত থেকে দেখা যায়। ঘুঁটঘুটে অন্ধকারে মনে হয় ঐ দূর পাহাড়ে কেউ মশাল জ্বেলে ডাকছে।
চেঙ্গি নদী তার রূপ বদলায় প্রতি মৌসুমে। শীতে সে কোমল মমতাময়ী আর বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে যেন সব গ্রাস করবে। তীরবর্তী মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। তারা ধান ফলায়, আখ ফলায়, ভূট্টা আর সবজির আবাদ করে। সরিষা আর তুলাও চাষ করে। কত পদের সবুজ সবজি নদীর পাড় ঘেঁষে! কি সুন্দর তার রং-রূপ-গন্ধ! চেঙ্গি নদীতে যখন পানি কম থাকে তখন অনেকদূর হেঁটে যাওয়া যায়। নানাজাতের পাখির সমাহার এই অঞ্চল জুড়ে। কি তার সুন্দর বাহারি রং! এদের মধ্যে আলতাপরি, ছোট কসাই, ছোট বসন্ত বৌরি, লাটরা, সবুজ বাঁশপাতি, সাদা খঞ্জন আরো কত নাম।
চেঙ্গির রূপে ও গুনে মুগ্ধ প্রেমিকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কিন্তু এই নদী নিয়ে ত্রিপুরা ভাষায় এবং চাকমা ভাষায় অনেক উপাখ্যান লেখা হলেও বাংলায় আসেনি তেমন কিছুই। নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে আমাদের ভাবনা এখনো দরিদ্রসীমায় অবস্থান করছে। খনিজ সম্পদের চেয়ে আমাদের দৃশ্যমান অজানা সম্পদ অনেক গুরুত্তের। দিন দিন এদিকে আমাদের চোখ সচল হচ্ছে।
মুহুরী
নদী তাঁর গতিপথ পাল্টায়। এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু কদিন পর পর প্রবাহ পাল্টানো মানেই অনেক বিপদ। এমন এক নদীর কথা বলছি এই নদীর প্রবাহ পথ পাল্টানোর মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নিয়ে বিরোধ হয়, তাও একবার দুইবার নয় বহুবার। নদীর নতুন প্রবাহ পথকে সীমানা দাবী করে দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্র বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। আমাদের এমন ত্রিশঙ্কু নদীও আছে। এই নদীর নাম মুহুরী।
মুহুরী ত্রিপুরার লুসাই পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং ফেনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। দেশের ভেতরে এই নদী চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলাকে বিভাজিত করেছে। নদীর দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭১ মিটার এবং গভীরতা গড়ে ১৫-২০ মিটার। বঙ্গোপসাগরে পতিত হবার আগে ফেনী জেলায় এই নদী খাড়া পাড় আর তীব্র খরস্রোতে জন্ম দিয়েছে আরেক ফেনায়িত নদী ফেনী। ত্রিপুরার ফসফরাস মিশ্রিত জলের সুতীব্র ধারা বঙ্গোপসাগরে পতিত হবার সময় সৃষ্ট জনপদের নাম ফেনী। মুহুরীর নামকরণ নিয়ে অনেক গল্প অনেক উপাখ্যান আছে। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন ত্রিপুরার পাহাড়ে উৎপন্ন তীব্র ঘ্রাণের মৌরির অপভ্রংশই মুহুরী। আবার কেউ কেউ বলেন দক্ষিণ ত্রিপুরার জমিদারের মুহুরী ফনিন্দ্রনাথ কূট কৌশলে নিজের নামে নদীর নামকরণ করে নিয়েছেন। তবে এই দুই ধারণাকে পাশ কাটিয়ে আরেক শ্রেণি বলেন, ক্রমাগত ঢেউয়ের মর্মর ধ্বনি স্থানীয় উচ্চারণে মুহুরি হয়ে গেছে!
মুহুরীর রূপ আর শব্দরাজির সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। গুণের তালিকায় তার বুকের ফসফরাস ফেনায় ফেনিল করে দেয় সমুদ্রসঙ্গমস্থল। সমুদ্রে মিশেও এই নদী অনেকদূর জানান দেয় তার অস্তিত্ব। অবারিত সবুজের চলন্ত কার্পেট পেরিয়ে মুহুরী পাহাড়ে ঈষৎ লাল মাটির মধ্যে স্বচ্ছ থেকে ঘোলাটে হয়ে গেছে। বিশেষ কোন ফলফলাদির নাম নেই এই নদীর দুইপাশে, তবে ত্রিপুরার বনাঞ্চল থেকে ভেসে আসা মৌরিফুলের ঘ্রাণে নেশা নেশা লাগে এই নদীর জলে। মুহুরী পাহাড় থেকে সমতলে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রসঙ্গম লাভ করেছে। বিরল শ্রেণির এই নদী আমাদের দেশে খুব কমই আছে। সমুদ্র সব নদীর ভাগ্যে থাকে না মুহুরী এদিক দিয়ে সমুদ্র পক্ষের …
সবশেষে ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিঙ্গের বাংলাদেশ সফরে মুহুরী নদীতে স্থায়ী সনাক্তকরণ চিহ্ন স্থাপনে সম্মত হয় দুই দেশ। মুহুরীর বয়ে চলা তাই কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হল। পাহাড়ি ঢলে মুহুরী কতোটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে তাও চিন্তার বিষয়। ভারত বিভিন্ন পয়েন্টে মুহুরীকে আটকে রেখেছে তবুও সে চলছে তার নিজস্ব গতিতে। ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবংকালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তেরী করে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয় মুহুরী সেচ প্রকল্প।
মুহুরীকে ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে ওঠে বিনোদন ও পিকনিক স্পট । শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে পর্যটক বেড়াতে আসে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি,বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নিচ থেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরীর জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং শত শত প্রজাতির অসংখ্য পাখির দেখা পাওয়া যায়। পাখির কলকাকলি আর পাহাড় হতে সমুদ্রগামী জলের নহর মুহুরী আজ বিপন্ন নদীর তালিকায়। কেননা ভারত এই নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে প্রাকৃতিক প্রবাহ আটকে দিয়েছে। কেবল ঢলের সময় তারা পানি ছেড়ে দেয় আর তলিয়ে যাই আমরা। মুহুরী এখন কেবল বিপন্ন নদীই নয় নিজের ঘরে দুধ কলা দিয়ে পোষা বিষাক্ত সাপ। মনোলোভা জলে এমন ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাস আমাদের বিস্মিত করে, করে বাকরুদ্ধও।
সিলোনিয়া
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এখান থেকে চট্টগ্রামের দিকে দেড় কিলোমিটার এগুলেই দেখা মিলবে সিলোনিয়া নদীর। মহাসড়কের অসংখ্য নদীর মধ্যে এই নদীকে আলাদাভাবে চেনার তেমন চিহ্ন নেই। কিন্তু সমুদ্রের কাছাকাছি এলে নদীর প্রেম বেড়ে যায় অনেকখানি। অনন্তকাল ধরে সে মহাসাগরের দিকে ছুটে যাবার ঠিকানা পায়। স্রোতের তীব্রতা আর প্রবাহের গভীরতা মিলে এ এক ভয়াল জলরাশি। যার সমুদ্র ভিন্ন গন্তব্য নেই।
সিলোনিয়া মহাসড়কের পূবদিকে কালিদহ ফাজিলপুর রেলসড়ক ধরে ভারত সীমান্ত ছুঁতে গেছে। এমন মনে হলেও আসলে তা নয়, এই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল হতে জন্ম নিয়ে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে ফুলগাজী, ফেনী সদর এবং ছাগলনাইয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মুহুরী নদীতে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে নদীটির দৈর্ঘ্য ৬১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। মালিপুর এলাকায় নদীর প্রস্থ ২৮ মিটার, গভীরতা ৭ মিটার।
সিলোনিয়া অববাহিকার আয়তন ৩০০ বর্গকিলোমিটার। এই নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে এবং বন্যাও হয়। এই নদীর তীরে বন্যা ব্যবস্থাপনা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বামপাশে ২১ কিলোমিটার তীরব্যাপী এবং ডানতীরে ৬ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন বাঁধের জন্য এই নদী প্রকৃতিপ্রেমি ও পর্যটকের কাছে আকর্ষনীয়। কালিদহ ফাজিলপুর পেরিয়ে সামনে এগুলে বন্ধুয়া দৌলতপুর। সীমান্তবর্তী বাংলাদেশী গ্রাম এখানে এসে নদী ভারত আর বাংলাদেশের সীমানা হয়েছে। সীমানার ওপারে ভারতের বারাইয়া। এখানে রয়েছে মহাপ্রভু গৌরাঙ্গের মন্দির। উপাসনা আর গভীর আরাধনার পাশে কুলকুল বয়ে চলছে শান্তধী সিলোনিয়া।
কখনো পাথুরে বাঁধ কখনো পেভমেন্ট কখনো খোলামেলা নদীর দুই তীরে সবুজের বর্ণিল উৎসব। বাঁকে বাঁকে মনোহর প্রকৃতি নেচে নেচে সমুদ্রগামী হয়েছে। সিলোনিয়া এক নৃত্যরতা নদী যার লক্ষ্য কেবল সমুদ্র ছুঁয়ে দেয়া। ঘন সবুজের ভেতর থেকে উঁকি দেয়া এই নদীর রূপমুগ্ধ প্রেমিকের সংখ্যা গননাতীত। সিলোন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বয়ে এসেছে বলে এর এমন নাম। যদিও এখনকার প্রবাহের সঙ্গে সিলন নামের কোন পাহাড়ের যোগসূত্র মেলে না। কিন্তু এর ধেয়ে আসা পাথর চুয়ানো ঈষৎ ঘোলাটে জলের পাকে যে একবার পড়ে তার সমুদ্র সাক্ষাৎ হতেই পারে।
সিলোনিয়া সমুদ্রের খুব কাছাকাছি এসে ফেনী ও মুহুরী নদীর সঙ্গে মিশে সমুদ্রগামী হয়েছে। সারাবছর অলস ভঙ্গিমায় বয়ে চললেও বর্ষায় সে এক ভয়াল তাণ্ডব। এই নদীর রুদ্ররূপ তখন বড়ই বীভৎস। যা হার মানায় অনেক বড় নদীর তীব্রতাকে। উজানে ভারত একের পর এক বাঁধ দিয়ে প্রবাহ আটকে রাখে এই নদীর। তাই বর্ষায় সে ক্ষ্যাপা চণ্ডীর মতো ফুঁসে ওঠে। খননের কথা বলে তার অঙ্গহানি করা ছাড়া আমরা আপাতত কিছুই করতে পারছি না। তাই সিলোনিয়া এখন সিলমারা নদীর তালিকায়। অল্প কিছুদিন পর সে বর্ষার নদী হবে আমাদের শখে বর্শাবিদ্ধ। পাউবো একটা নাম্বার দিয়ে রেখেছে তাঁকে। কিছুদিন পর এই নাম্বার ছাড়া সিলোনিয়া নামের কোন নদীর দেখাই মিলবে না। আমরা সমুদ্র হজম করা জাতি। নদী তো আমাদের জিহবায় নাস্তার চেয়েও কম।
ভুলুয়া
মিথিলার রাজা আদিশূরের বংশধর কর্তৃক তেরোশতকে ভুলুয়া রাজ্যের পত্তন। মেঘনা নদীর সান্নিধ্যহেতু ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ সোনারগাঁও থেকে ভুলুয়া আক্রমণ করেছিলেন। সতেরোশতকে মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুসহ আরাকানরাজ মুগল সাম্রাজ্যের বিস্তারের ক্ষেত্রে এক বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছিল এই ভুলুয়া। পরে অবশ্য মোঘলরা ভুলুয়া জয় করে এবং সেখানে সোনারগাঁও সরকারের অধীনে ভুলুয়া পরগনার প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়। আঠারো শতকে ইংরেজদের লবণ বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে ভুলুয়া বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। ভুলুয়া প্রথমে ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু নানারকম অসুবিধা এবং ভুলুয়ার লবণ ব্যবসায়ীদের অবস্থানগত কারণে উদ্ভূত প্রশাসনিক সমস্যার জন্য ১৮২২ সালে তা ত্রিপুরা থেকে বিযুক্ত হয় এবং পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের সন্নিহিত অঞ্চল নিয়ে একটি নতুন জেলা গঠিত হয়। পরবর্তীকালে এর প্রশাসনিক কেন্দ্র ভুলুয়া থেকে নোয়াখালীতে স্থানান্তর করা হয়।
সোনারগাঁ থেকে মেঘনার যে শাখানদী ভুলুয়াবন্দরে চলে এসেছে সেই নদীই ভুলুয়া। নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার বিকাশ সময়ে এই জলধারাই সমুদ্রগামী হয়ে পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের সাথে এই অঞ্চলের যোগাযোগ সেতু হিসেবে কাজ করত। সেই ভুলুয়া নদী আজ কোথাও কোথাও খাল, কোথাও কোথাও নালা আবার কোথাও বিলুপ্তির পথে। নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা এবং লক্ষ্মীপুরের কমলনগর রামগতির উপর দিয়ে মযে ভুলুয়া বয়ে যেত! তার দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার। প্রস্থ গড়ে ৮৫ মিটার আর গভীরতা ৫ থেকে ৫০ মিটার। বালুজ উপকুলের ঘোলাটে পানির প্রবাহ নিয়ে সাপের চলার ভঙ্গিতে এগিয়ে গেছে।
বাদাম সয়াবিন নারকেল আর সুপারীর ফলনে এই নদীর অবদান মাতৃস্তন্নের মতই। এককালের খরস্রোতা ভুলুয়া নদীর স্রোতের তীব্রতায় জেলেদের জাল ছিঁড়ে যেতো। তাই এই নদীকে জেলেরা জালছিঁড়া নদী বলেই ডাকতো। এক সময়ের প্রমত্ত জালছিঁড়া কালক্রমে দূষণ, ভরাট ও পলি জমে জমে মৃতনদীতে পরিণত হওয়ায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ভুমিদস্যুদের কারণে ভুলুয়ার অস্তিত্ব আজ বিলীনের পথে। দুই পাশ দখল হতে হতে বর্তমানে এটি খালে পরিণত হয়েছে।
এ নদীর ভাঙ্গনে নোয়াখালী পুরাতন শহর দু’বার তলিয়ে যায়। নোয়াখালীর পুরাতন শহরের পাশে ছিল এই নদী। শহরবাসী এ নদীর মনোরম দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়াত। তখন হাতিয়া ,চর জব্বার ও চর ক্লার্কের মানুষ এ নদী দিয়ে নোয়াখালী শহরে আসা যাওয়া করতো। এ নদীকে ঘিরে বয়স্করা এখনও অনেক স্মৃতির কথা বলেন। পুরাতন শহরের বড় মসজিদ এক রাতের মধ্যে নদীতে তলিয়ে গেল সেসব স্মৃতি এখন কেবল রোমন্থনের। এ নদীতেও ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। এখন আর জালছেঁড়া নদী নেই। নদী যেখানে ছিল এখন সেখানে বাড়িঘর ও পাকা সড়ক।
রাতাচোরার খাল আর সুইজের খাল এই নদীকে প্রবাহিত করলেও সুবর্ণচর, চরজুবিলি, চর আলগী, চর পোড়াগাছা, চরকাদিরা, চরমটুয়া, চরবাজ্ঞা, চর পানাউল্লা, জাহাজমারা, চর হাসান, চর রশিদসহ দুইজেলার চারটি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভুলুয়া ছিঁড়ে ছিঁড়ে মৃত পড়ে আছে। বালু আহরণ, তীর দখল, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, ব্রিজ পয়েন্টের অদূরদর্শিতা এই নদীকে মেরে ফেলেছে। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর এই উপকূলীয় নদীর দুরবস্থায় থমকে গেছে এখানকার সামগ্রিক পরিবেশ।গরমে বালু তেতে ওঠে। আশেপাশে জলের প্রবাহ না থাকলে এই তাপদাহ অসহ্য যন্ত্রণার। মেঘনার আশেপাশে বহমান কোন নদী না থাকায় এখানকার শুষ্কতা ও জলাবদ্ধতা দিন দিন বেড়েই চলছে। ভুলুয়া কিংবা জালছিঁড়া নদী থেকে খাল, খাল থেকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডাকাতিয়া
নদীর দুইদিক দুরকমের। যেখানে উৎপত্তি সেখানে একরকম। আবার যেখানে পতিত হয় সেখানে আরেকরকম। ডাকাতিয়া একদিকে পাহাড়ি কন্যা অন্যদিকে পদ্মা মেঘনার সঙ্গে উত্তাল ঘূর্ণিপাকে তৃতীয় সতীন। উৎসে সাপ আর মৃত্যুমুখে প্রবল দড়ি !
নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-লাকসাম-হাজিগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ-চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। ফরিদগঞ্জ হয়ে আরেকটি প্রবাহ রায়পুর ছুঁয়ে চলে গেছে লক্ষ্মীপুরের হাজিমারা পর্যন্ত।
চাঁদপুর শহরকে নতুন ও পুরান বাজার হিসেবে বিভাজিত করেছে এই নদী। এককালে ফরিদগঞ্জ রায়পুর পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করতো। এখন চাঁদপুরের মোহনা পেরিয়ে নৌ চলাচল প্রায় নিষিদ্ধ! ভয়াল ডাকাতিয়া এখন মাছের খামার। নানুপুর স্লুইচগেট থেকে হাজিমারার ডাকাতিয়া এখন মরা। কচুরীপানা আর মাছের ঘের ছাড়া নদীর কোন চিহ্নই নেই।
নোয়া খাল হতে আজকের নোয়াখালী যার উৎপত্তি এই ডাকাতিয়া থেকেই। কিন্তু প্রবাহ থেমে যাবার পর আজকের রূপ দেখে কোনভাবেই নদীর চিহ্ন খুজে পাবার জো নেই। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর অবিচ্ছেদ্য এই নদী এখন ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছে। ২০৭ কিলোমিটার বিস্তৃত এই নদী এখন আছে সামান্যই। এই নদী দিয়ে মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করতো। তাদের মাধ্যমে ডাকাতি হতো। ডাকাতির উপদ্রবের কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ডাকাতিয়া নদীর নামকরণ নিয়ে লোকমুখে আরেকটি লোকগল্প শোনা যায়, একসময় ডাকাতিয়া নদী তীব্র খরস্রোতা ছিল। ডাকাতিয়ার করালগ্রাসে নদীর দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিল সমাধিও ঘটেছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলেই এর নাম হয়েছে ডাকাতিয়া।
কানাইল..
জলের বাড়ি কই! কেউ বলে মাটির তলায় কেউ বলে পাহাড়ে। জল জানে না জলের বাড়ি আহারে ! সমুদ্রগামী জলের উৎস সমতলের ঠিক উপরেই। হিমালয়ের প্রতিবেশী বদ্বীপ বাংলাদেশ। তাই এখানকার নদীরা বরফ গলা অভিধা নিয়েই জন্ম নেয়। কিন্তু ত্রিপুরার পাহাড়ে বরফ হয় না। এইসব নিঝুম পাহাড়ি জনপদ পাথুরে মাটির চোয়ানি ভেঙ্গে স্ফটিক জলের তরঙ্গ নেমে আসে আমাদের সমতল কুমিল্লাধামে।
কুম্বি ইজ নিল্লাহ থেকে আজকের কুমিল্লাা হতে সভ্যতার সময় লেগেছে দেড় হাজার বছর। প্লাাইষ্টোসিন প্লেটের তলদেশ ক্ষয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এখানকার নদীরা সুনাব্য ও তীব্র স্রোতের জলপ্রবাহ বিরাজমান ছিল। তাই এই অঞ্চলের মানুষ ছিল ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ এবং প্রতিকুল সংগ্রামী। চোখের পলকে তলিয়ে যেতো সাজানো বসতি। যে সব নদীরা এমন বিপ্লবী ছিল তাঁদের মধ্যে গোমতী আর ডাকাতিয়া অগ্রগণ্য।
ডাকাতিয়ার তিনমেয়ের মধ্যে বড়টির নাম কানাইল। কুমিল্লা নোয়াখালীর সংযোগস্থল চোদ্দগ্রাম। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সংলগ্ন পাহাড়ি জনপদ থেকে নিচের সমতলে এই নয়নাভিরাম নদীবিধৌত জনাঞ্চল। কানাইল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার বালুজুরী হইতে ঘোলপাশা ইউনিয়ন হয়ে মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া হয়ে ছাতিয়ানীতে ডাকাতিয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এখনকার হিসেবে কানাইল ডাকাতিয়ার উপনদী। মূলত কানাইল ডাকাতিয়ার শাখা। উজানের ঢলে বদলে গেছে তাঁর জন্মদাগ। সে এখন মৃত নদীর তালিকায় ডুবে গেছে। ঘোলপাশা ইউনিয়নের আমানগন্ডায় এসে নদী এখানে কানাইল গাং নামে পরিচিতি পেয়েছে। সরকারি খরচে প্রতি বছর গাংটির পাড় বাঁধ ও খনন কার্য সম্পন্ন করা হয়। বেশ বাজেট আসে কানাইলের নামে। জানা গেছে খননে উত্তোলিত মাটি আর বালুর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়শই তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। নদীর তীরের একখণ্ড জমি কিনতে পারলেই কেল্লা ফতে। ধনুসাড়া গ্রামের আবুল খায়ের আর নুপুর ব্রিকসের জহিরুল খোদ সরকারের কাছেই বিক্রি করে কানাইলের মাটি। এই তালিকায় আমানগন্ডার মন্তাজ মিয়া গং বেশ আলোচিত।
এইসব ভুমিদস্যু আর মাটিচোর নদীর চিহ্নিত শত্রু। আর এদের সাথেই উঠবস করে আমাদের অর্থলিপ্সু ক্ষমতা। নদীর কোন আত্মীয় নেই রক্তের সম্পর্কের তাই কানাইলের মরে যাওয়া এক প্রকার নিয়তিই বটে। কানাইল মরে যাচ্ছে গুগোলে কানাইলের চিহ্ন পাওয়া যায় না। সরেজমিনে দেখতে গিয়ে যা দেখা যায় তা মৃত নদীর কঙ্কাল। গণধর্ষণের পর পড়ে থাকা বিবস শরীর। হু হু করে কান্না চলে আসে, চোখ ভিজে যায় জলে। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কানাইলের প্রশস্ততা ৭৫ থেকে ১২০ মিটার। বাঁকে বাঁকে চলতে থাকা ঝিলমিল জলের নহর কানাইলের গভীরতা ছিল অবাক করার মতো। কোথাও ৩০ মিটার কোথাও ২০ মিটার। সেসব বিগত সহস্রাব্দের কথা। আজকের দিনে কানাইল নামে ডাকাতিয়ার কোন মেয়ে নেই। চোদ্দগ্রামের প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে গেছে কানাইলের অন্তর্ধানের মধ্য দিয়ে।
দুইপারের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত থেকে ছোট ছোট বাগানের পল্লবিত গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে কানাইল আর কুলকুল করে বয়ে যাবে না। ত্রিপুরার পাহাড় থেকে ছোট ছোট পাথরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্নিগ্ধ জলের ধারা এখন আর আমাদের দেশে আসবে না। কানাইলের খেল এখন কেবল প্রকৃতিই দেখাতে পারে।
গোমতী
ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্বপ্রান্তীয় পার্বত্য অঞ্চল ডুমুর এক পাহাড়ি নদীর জন্মস্থান। অসংখ্য ছড়া আর ছোট ছোট ঝর্ণার জমাজল গৌরমতি নাম নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১৫০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। নেচে নেচে গেয়ে গেয়ে এই ফেনায়িত জলের প্রবাহ প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। গৌরমতি ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লায় এসে গোমতী হয়ে গেছে!
কুমিল্লা সদর উপজেলার কটক বাজারের কাছে আমাদের ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে। প্রবেশের পর এটি আঁকাবাঁকা প্রবাহপথে কুমিল্লা শহরের উত্তর প্রান্ত এবং ময়নামতীর পূর্বপ্রান্ত অতিক্রম করে বয়ে চলেছে। প্রবাহপথের উত্তর দিকে বুড়িচং উপজেলাকে ডানে রেখে এটি দেবিদ্বার উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ বাজারে পৌঁছেছে। ময়নামতি থেকে কোম্পানীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত নদীটির দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। কোম্পানীগঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে নদীটি শেষাবধি দাউদকান্দি উপজেলার শাপটা নামক স্থানে এসে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ এবং দাউদকান্দির মধ্যে নদীর দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ ভূখন্ডে গোমতী নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিমি। গোমতীর গুরুত্বপূর্ণ উপনদীসমূহের একটি ডাকাতিয়া এবং এর শাখা নদীর নাম বুড়ি।
গোমতী তীব্র স্রোতসম্পন্ন একটি পার্বত্য নদী। কুমিল্লায় এর প্রবাহ মাত্রা ১০০ থেকে ২০,০০০ কিউসেক পর্যন্ত উঠানামা করে। নদীটির বর্ষাকালীন গড় প্রশস্ততা ১০০ মিটার। এ সময় নদী কানায় কানায় পূর্ণ থাকে এবং স্রোতও হয় দ্রুতগতিসম্পন্ন। কিন্তু শীত মৌসুমে এর গতিধারা সংকীর্ণ হয়ে আসে এবং অধিকাংশ স্থানে হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বছরে নদীর পানির উচ্চতা পার্শ্ববর্তী এলাকার স্তর থেকে ১.৫ মিটারের উপরে বৃদ্ধি পায়। আকস্মিক বন্যা এ নদীর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং এ বন্যা মোটামুটি নিয়মিত বিরতিতে সংঘটিত হয়। এজন্য এ নদী একসময় ‘কুমিল্লা শহরের দুঃখ’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
এক সময় গোমতী নদীর মাছ কুমিল্লার চাহিদা মেটাতো। এই নদীতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। বোয়াল, শোল, কৈ, শিং, মাগুর, আইড়, টাকি, টেংরাসহ সকল দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যমাসে গোমতী নদীতে কোথাও কোথাও চর দেখা যায়। ড্রেজিং করা হয় না বলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের চারণক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক লীলাভূমি ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে শুভপুর, গাংচর, মোগলটুলী, চৌধুরীপাড়া ও কাপ্তানবাজার এলাকায় বহু আগে ৪টি রাস্তা নির্মাণ করে মূল নদী থেকে পুরাতন গোমতীকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। অন্যদিকে মূল গোমতী নদী বর্ষাকালে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলেও গ্রীষ্মকালে দেখা যায় উল্টো চিত্র। গোমতী নাব্যতা হারিয়েছে অনেক আগেই। দ্রুত ড্রেজিং করে নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরী হয়ে পড়েছে।
ঘুংঘুর
নদী খুঁজতে গিয়ে খাল পেয়েছি অনেকবার। দুঃখ নিয়ে ফিরে এসেছি। আবার কখনো একটা নালাকেই নদী ডেকে চলে এসেছি। এবারের কষ্ট আরও বড় । নদী খুঁজতে এসে লোকজনের সন্দেহে পড়ে গেলাম। কেউ এমন নদীর নামই শোনেনি! বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া কুমিল্লা সদরের পাগলী বড়রামপুর বাকশিমুল ঘুরে কোথাও নদীর দেখা মিলেনি। মানচিত্র এবং সরকারি রেকর্ডে ঘুংঘুর নদীর কথা আছে, বাস্তবে এই পুরো নদীই দখল হয়ে গেছে। অগনিত বাড়িঘর, দোকানপাট আর আবাদি জমির নিচে চাপা পড়ে গেছে নদী। কয়েকটি রুগ্ন নালা আর নর্দমায় হারিয়ে গেছে এককালের নন্দিত ঘুংঘুর।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রঘুনন্দন পাহাড়ছড়া থেকে সৃষ্ট কাঁকড়ি নদীর একটি ধারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ ধারাটির নাম ঘুংঘুর। ব্রাহ্মণপাড়া ও কসবার মাঝামাঝি পয়েন্ট দিয়ে এই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর বুড়িচং ও কুমিল্লা সদর হয়ে গোমতী নদীতে পতিত হত ঘুঙ্ঘুর। উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত এর গতিপথ ছিল ১১১ কিলোমিটার। একসময় পাগলীখালও নদী ছিল। এই পাগলী নদী ঘুঙ্ঘুর এর শাখানদী। বাকশিমুল আরেক শাখা।
এখনো বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় মরা ঘুংঘুর নদীর দুই পাড়ের ফসলি জমি। এ কারণে কুমিল্লা সদরের আমড়াতলী ও পাঁচথুবী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হয়। সদর এবং বুড়িচং এলাকার ঘুংঘুর নদীর প্রায় ১৭ কিলোমিটার অংশে শতাধিক বাড়িঘর, দোকানপাট ও জমিতে পরিণত হয়ে আছে।
ঘুংঘুর নদী এবং পাগলী, বড়রামপুর ও বাকশীমূলসহ সবকয়টি খাল দখল হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লার ৪ উপজেলার ২৫টি গ্রামের ফসলের মাঠ জলমগ্ন হয়ে থাকে। পাউবো কুমিল্লার পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জলাবদ্ধতা বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দেন। এতে বলা হয়ে, ঘুংঘুর নদী এবং পাগলী খাল দিয়ে ঢলের পানির সঙ্গে বালি-পলি এসে ঘুংঘুর নদী প্রায় সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। ঘুঙ্ঘুর নদীর নামকরণের সাথে পাহাড়ি ঢলের ঝুমুর ছন্দের অবিরাম নৃত্য জড়িত। ত্রিপুরার রঘুনন্দন পাহাড় ছড়ার কাকচক্ষু জল লাল মাটিতে এসে ঘোলা হয়ে যেতো আর ঘোলাজলের পরিণতি গিয়ে পড়তো কুমিল্লার দুঃখ গোমতীতে। গোমতী নদীকে ইচ্ছেমতন বাজিয়ে উতক্ত করতো আজকের এই ঘুঙ্ঘুর। তখন ছিল নদীর যৌবনকাল। সতেজ ঘাস আর তেলতেলে কচুরীপানা নিয়ে ঘুঙ্ঘুর আজ মরেই গেছে।
নদীর মৃত্যুর সঙ্গে মরে যায় অনেক জলজ অস্তিত্ব। মরে যায় প্লাবিত তীরভূমির অনন্তর পথপরিক্রমা। বদলে যায় সংস্কৃতি। মানুষ থেকে যায় মানুষে। মানবের মাঝে বিলীন হবার কিচ্ছু থাকে না কোথাও। ঘুঙ্ঘুর এখন কুমিল্লার নদী নয়, কেবলই স্মৃতির…
বিজলী
সালদানদী রেলষ্টেশন আর বিদ্যানগরের মাঝখান দিয়ে বিজলি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়রা এই নদীকে বিজনা অথবা বিজনী নদী বলেও ডাকে। কুল্লাপাথর সড়কের পাশ দিয়ে বিজলী চলে গেছে কুমিল্লা বিবাড়িয়া সড়কের মন্দভাগের দিকে। কসবা উপজেলা এই নদীর তীরে অবস্থিত। কসবা পেরিয়ে বিজলি পঞ্চগ্রাম মজলিশপুরের দিকে। এখানে এসে বিজলিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মজলিশপুর পেরিয়ে কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কের ধরখার সামনে বিজলি তিতাস নদীতে পতিত হয়।
বিজলী মানে বজ্রপাতের সময় আকাশে চমকানো আগুনের রেখা। শব্দের আগে এই রেখা আতঙ্কিত করে মানুষ, জীবজন্তু এবং প্রকৃতিকে। তেমনি বিজলী নদীও চোখের পলকে ডুবিয়ে দিতে পারে দুই পাড়ের জীবন ও জীবিকা। ত্রিপুরার পাহাড়ি পাথুরে মাটিতে জন্ম নিয়ে বিজলীর গতিতে এই নদী বাংলাদেশে ছুটে এসেছে। রাতের অন্ধকারে এই নদীর জলের চিকচিক প্রভা আকাশ থেকে বিজলির মতো দেখায়।
৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বিজলীর মাত্র ২০ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়েছে। বাকি ৫৩ কিলোমিটার ভারতে। ভারতের বিজলী ত্রিপুরার নিসর্গ হলেও বাংলাদেশ অংশে বিজলির প্রভায় খামতি দেখা দিয়েছে। সালদানদী আর তিতাসের মহিমায় ম্লান হয়ে গেছে বিজলির দ্যুতি। সীমান্তের খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে এই নদীর প্রতি আমাদের অবহেলা চরম রূপ ধারণ করেছে।
কসবা উপজেলা এলাকা থেকেই বিজলী মরে মরে সামনের দিকে এগিয়েছে। মজলিশপুরে এসে বিজলী লাপাত্তা হয়ে গেছে! গঙ্গাসাগরের পশ্চিমে ধরখারে এসে তিতাসে পড়া বিজলীর সাথে সালদানদীর বিজলীর কোন মিল নেই। মাঝখানের এই বিলুপ্ত অংশ আমাদের নদীখেকো চরিত্রের প্রতিফলন। বিজলীর প্রস্থ ২৫ মিটার। গভীরতা ৩ থেকে ৫ মিটারের মধ্যে। আর জ্যামিতিক প্রবাহে এই নদী সোজা পথে বয়ে যেতে চেয়েছে তার মোহনা তিতাসের দিকে। আগেকার জ্বলজ্বল করা জলের ঝিলিক হারিয়ে বিজলী এখন নালা রূপে পড়ে আছে মহাসড়কের পাশে। বছরের ৮ মাস এর নদী চরিত্র থাকে না। জোয়ার ভাটার প্রভাবমুক্ত এই নদীতে ভাঙ্গনের চিত্র দেখা যায় বর্ষায়। ত্রিপুরার ঢলের পানি বিজলীর গতিতে নেমে আসে আমাদের দেশে। মুহূর্তেই তলিয়ে যায় তীরবর্তী জনপদ, ফসলী জমি, সাজানো বাগান।
বাংলাদেশের পূর্বাংশে নদনদী এমনিতেই কম। একের পর এক নদীর মরে যাওয়া দেখছি প্রতিদিন। তীরদখল, বেপরোয়া বাঁধ নির্মাণ, অপরকল্পিত ব্রিজ আর নদীর প্রতি মমত্ববোধের অভাব বিজলীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি আমরাই …
তিতাস…
তিতাস নদীর নাম জানে না এমন বাঙালি খুব কমই আছে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ এই নদীকে প্রবাহিত করেছেন মানুষের মুখে মুখে অনুভবের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মেঘনার জ্যেষ্ঠকন্যা তিতাসের রূপ গুণ আর প্রবাহ পানকৌড়ির মতো অতলে ডুব দিয়ে দেখতে হয়। উপরিভাগের দৃশ্য অন্যসব নদীর মতোই তেমন কোন পার্থক্য চোখে পড়বে না। কিন্তু এ জলপাখির বুকের ভেতর লুকায়িত রত্নরাজি আবহমান বাংলার এক অনন্য পরিসম্পদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় এলাকায় মেঘনা নদী থেকে তিতাসের জন্ম। এখান থেকে ইংরেজি এম অক্ষরের আদলে এই নদী বিজয়নগর আখাউড়া জংশন হয়ে লালপুরে পুনরায় মেঘনা নদীতে পতিত হয়। চাতলপাড় হতে লালপুরের দূরত্ব মাত্র ১৬ মাইল, কিন্তু তিতাস নদীর দৈর্ঘ্য ১২৫ মাইল। উৎসের কাছাকাছি নিজের কাছে নিজের ফিরে আসার এমন অনন্য নদী পৃথিবীর কোথাও নেই।
দুইপাড়ের অনন্য সমতল ভুমি, সবুজ প্রকৃতি আর দোআঁশ পলিমাটির এই জনপদ এক উদাস বাউলের হেঁটে যাওয়া পথ। দুরন্ত পানকৌড়ি আর উচ্ছল কিশোরের উত্তাল লম্পঝম্প তিতাসের তীরে তীরে। মৃদু ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসে হৃদয় রাঙ্গিয়ে দেয়া সুমধুর গান। লোকগান আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ফিউশন তিতাসের প্রশান্ত জলধারা ঘিরেই। যেন এই নদীর তটরেখা ধরেই আমাদের প্রাণে সঙ্গীতের মূর্ছনা ফিরে এসেছে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ আমাদের সঙ্গীতের মূল ঘরানা এই নদীর জলেই সিক্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে আখাউড়ার দিকে এই নদীর চলে যাওয়া পথে বিচিত্র পাখপাখালির দেখা মেলে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা এড়িয়ে বৈঠাহাতে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে পানকৌড়ির ডুব সাঁতার। কত গভীরে যেতে পারে এই পাখি তা কেবল তার সঙ্গে গেলেই বুঝা যায়!
তিতাস নদীকে ঘিরে অনেক লোককথা বা কাহিনীর বিস্তার আছে। তবে এর সবগুলোর সঙ্গেই মেঘনার যোগসূত্র রয়েছে। বলা হয় মেঘনা নদী যৌবনকালে বয়ে যেতে যেতে এক ঋষির আস্তানা ভেঙ্গে দেয়। ঋষি আস্তানা হারিয়ে মেঘনার উপর ক্ষেপে শাপ দেয়, তোর এমন এক মেয়ে হবে কেউ তাকে নেবে না তোর কাছেই থাকবে বুড়ি হয়ে, যার তিতা স্বাদে কেউ মুখ দেবে না। সেই শাপেই জন্ম হয়েছে তিতাসের ? তাহলে তিতাসের পানি তিতা হল না কেন !
তিতা হল তিতাস অববাহিকার গ্যাস। নদীর উপকূলে প্রাপ্ত গ্যাসক্ষেত্রটি তিতাস গ্যাসক্ষেত্র নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৬৪ বর্গ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত এই গ্যাসক্ষেত্র বাংলাদেশের গ্যাসের অন্যতম যোগানদাতা। তিতাসের উপর একের পর এক সেতু নির্মিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও একে এখন খাল বলে ভ্রম হয়। আগেকার প্রমত্ত তিতাস এখন শুধু বর্ষায় মেলে। অন্যসময়ে এই নদী পাখির সঙ্গে উড়ে যায়।
Development by: webnewsdesign.com