যদিও ৪০ বছর বয়সে সবার বিশেষ কোনো ধরনের অসুস্থতা দেখা যায় না তবুও রোগ প্রতিরোধের জন্য সতর্ক হওয়া দরকার। মানবজীবনে বেশ কয়টি কাল যেমন শিশু, কিশোর, যৌবন ও প্রৌঢ়তা। যৌবনকাল সাধারণত ২০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় ও শেষ ধরা হয় ৬০ বছরকে। কাজেই বর্তমান সময়ে যৌবনকাল তার শীর্ষে পদার্পণ করে ৪০ বছর বয়সে। আপনার শরীরে কী ধরনের জড়তায় আক্রান্ত হবে তা আবার নির্ভর করে আপনার বংশগতি ধারার ওপর। যেমন বলছি একটা আম গাছের কথা, এ গাছটির আম কেমন হবে তা কিন্তু নির্ভর করে কোন গাছটি থেকে কলম লাগানো ছিল। সেই গাছের আমের সঙ্গে অনেকাংশেই তার মিল থাকবে।
আপনি যদি বংশগতিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চান, তবে এখন থেকেই আপনাকে এসব সমস্যা শনাক্ত করে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জানতে পারলে আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন। বংশগতির সমস্যা ছাড়া পরিবেশগত কারণকে রোগ সৃষ্টিকারী কারণ বলে মনে করা হয়। মানে আম গাছটি আপনি কোথায় লাগিয়েছেন, রাজশাহীতে নাকি হাওর এলাকায় তার ওপর আমের গুণাগুণ (স্বাদন্ডবর্ণ-ঘ্রাণ) কেমন হবে, তা ওই এলাকার রোগ/পোকা ও মাটির ধরন, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। মানুষ বংশগত ধারার বাইরে পরিবেশগত কারণে অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আপনি শিশুকালে কী কী রোগ-বিশুককে মোকাবিলা করেছেন, মানে আপনি কোন কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সে ধরনের রোগ-বিশুক আপনার শরীরে সহজে বাসা বাঁধতে পারবে না।
আরও হাজারও পরিবেশগত কারণ মানুষের অসুস্থতার জন্য দায়ী। কারও কারও ক্ষেত্রে দুই-এ দুই-চার হয়ে যায়। ধরুন যে কারও শ্বাসকষ্টের সমস্যা খুবই অল্প ছিল, তার ট্রাফিক পুলিশে চাকরি নেওয়ার জন্য রাস্তার গাড়ির ধোঁয়া-ধুলায় থাকতে থাকতে গুরুতর শ্বাসকষ্টের সমস্যা পতিত হতে পারেন। তবে আপনি যে-ই হোন না কেন আপনার বয়স ৪০ হলে বেশ কিছু বিশেষ অসুস্থতার প্রাথমিক উপসর্গগুলো জানতে হবে এবং যদি তা বিদ্যমান থাকে তবে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপণ্য হওয়াই ভালো। বয়সজনিত কারণে বেশ কিছু অসুস্থতায় অনেককেই আক্রান্ত হতে দেখা যায়, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ বা হার্টের অসুস্থতা, এসব অসুস্থতাকে জীবনধারাজনিত অসুস্থতা বলা হয়। আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তবে প্রাথমিক অবস্থায় অত্যধিক ক্ষুধা লাগা, বারবার প্রস্রাব হওয়া, খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটলেও ওজন কমে যাচ্ছে, এসব উপসর্গ দেখা দেবে।
তবে শুধু ব্লাড সুগার পরিমাপ করে আরও অনেক আগে থেকেই ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যায়। তাই আপনি অন্তত ছয় মাসে একবার রক্তের সুগার চেক করে নেবেন। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হলে তেমন কোনো উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় না, তবে উচ্চরক্তচাপের জটিলতার কোনো অর্গান যেমন ব্রেইন, হার্ট, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তার উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়। এখন থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর আপনার রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করা দরকার। হার্টের অসুস্থতার কোনো একক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না।
বরং হার্টের অসুস্থতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। অনেকেই বুক ব্যথায় আক্রান্ত হন, বুকের মাঝখানে চাপা ব্যথা অনুভূত হয়, কেউ বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন, তাড়াতাড়ি/ঘন ঘন শ্বাস নিতে হয়, কারও কারও বুকের ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট একত্রে হতে পারে। কারও বুকে প্রচ চাপ অনুভূত হয়, মনে হয় যেন কেউ বুকের ওপর পা চেপে ধরেছে, এসব সমস্যা পরিলক্ষিত হওয়ার আগেই হার্টের অসুস্থতা বা হৃদরোগ নির্ণয় করার জন্য মেডিকেল সাইন্স অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছে। যেমন ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাম, টিএমটি (ইটিটি) বুকের এক্স-রে, রক্তের কোলেস্টেরলসহ আরও অনেক উন্নত ধরনের ইনভেস্টিগেশন করার সুযোগ আমাদের দেশেই বিদ্যমান। তবে হার্টের অসুস্থতা যাচাইয়ের জন্য কোন ধরনের ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন তা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বা হার্ট স্পেশালিস্টের পরামর্শ মতেই করা দরকার। প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো জিনগত ডিফেক্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। এক হাজারটি জিনের মধ্যে গড়পড়তায় আটটি জিন ডিফেক্টিভ থাকবে। সুুতরাং আপনি কোনো না কোনো জিনগত ডিফেক্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।
Development by: webnewsdesign.com