রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো প্রাথমিকভাবে সচল রাখতে প্রয়োজন হবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বন্ধ চিনিকলগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে সচল করতে প্রয়োজন ১৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি পাট ও চিনিকলের শ্রমিকদের বকেয়া বাবদ প্রয়োজন সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এ দুই খাতে বরাদ্দের মাধ্যমে মিলগুলো চালু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিট নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পাটকল ও চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের উদ্যোগে ‘২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট: বাংলাদেশের মৌলিক শিল্প রক্ষায় বন্ধ সব পাটকল-চিনিকল চালু ও তার বিকাশে আমাদের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান জানানো হয়।
সেমিনারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৩০ জুন পাটকল বন্ধের সময় পাটমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করে তিন মাসের মধ্যে মিল চালু করা হবে। তবে পাঁচটি পাটকলের ৮ হাজার ৪৬৩ জন অস্থায়ী শ্রমিক একটি টাকাও পাননি। অবশিষ্ট ২০টি পাটকলের প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিকের বকেয়া অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় হলেও এখনো তারা পাননি। দুই মাসের জায়গায় দুই বছর অতিবাহিত হতে চললেও বকেয়া না পেয়ে এসব শ্রমিকের ৮০ শতাংশই এখন ভালো নেই।
সেমিনারে বক্তা ছিলেন টিইউসির সভাপতি শহীদুল্লাহ্ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন ও অধ্যাপক এমএম আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি।
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, পাটের মতো একটি সম্ভাবনাময় এবং কৌশলগত খাত বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে বেসরকারি মালিক নিশ্চিতভাবে মুনাফার দিকেই যাবে। তাই এ খাতকে সরকারি মালিকানাতেই থাকতে হবে। পৃথিবীতে পাটজাত শিল্পের চাহিদা দিন দিন বাড়বে। পাট শিল্প শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করালে গার্মেন্ট শিল্পের মতো অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হতে হতো না। পাটকে জাতীয় শিল্প হিসেবে দেখতে হবে শিল্পের স্বার্থ, শ্রমিকের স্বার্থের অংশ হিসেবে।
আসন্ন বাজেটে তিনি পাট শিল্পকে জাতীয় শিল্প হিসেবে দাঁড় করাতে পরিপূরক বাজেট বরাদ্দ রাখার দাবি জানান।
হিসাব দেখানো হয়, গত ৪৯ বছরে এ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে লোকসানের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে ২০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ সময় ক্রমাগত লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে যেখানে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ঠিক একই সময় তথা ১৯৮২ সালে গড়ে ওঠা বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা তত বেড়েছে। এখন বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৮১।
গতকালের সেমিনারে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও চিনিকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com