লামায় জুম ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমাবেশ

শনিবার, ১৪ মে ২০২২ | ১২:১০ অপরাহ্ণ

লামায় জুম ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমাবেশ
apps

বান্দরবানের লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ মূল হোতাদের গ্রেফতার ও শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং লুন্ঠিত ভূমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ মে) বিকেল ৩টায় নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখা এ সমাবেশ করেছে।

এর আগে, ডিসি হিল হতে মিছিল করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ঘুরে এসে চেরাগী পাহাড় মোড়ে সংহতি সমাবেশে জড়ো হন তারা।সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, পার্বত্যবাসীদের ওপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

‘সমতলের জনগণ ও পাহাড়ি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমি রক্ষার লড়াই জারি রাখতে হবে। চট্টগ্রামের সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) ও পতেঙ্গা সি বিচ রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তাদের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানাই।’

সংহতি সমাবেশে ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, প্রশাসন আজকে বহু কথা বলেন। অথচ তাদের কাছ থেকেই লীজ নিয়ে লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কোম্পানি ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভূমি দখল করেছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে নিপীড়িত গোষ্ঠী হলো ম্রো জনগোষ্ঠী। তাদের ওপর যখন নিপীড়ন চালানো হয়, তখন আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যারা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করেন তারা কখনওই ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর এই দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়িয়ে বসে থাকতে পারেন না।

এ সময় আওয়ামী-বিএনপি যে সংগঠনই হোক না কেন, যারা তাদের এই আন্দোলনে সঙ্গে দাঁড়াতে পারবেন না তাদের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ডা. সুশান্ত।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়? যারা সমতলে অপরাধ করে তাদের! সরকারের এই বৈষম্য নীতি থেকে সরে এসে পার্বত্য এলাকায় যোগ্য আমলা, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভায় মোট ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- লামায় ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তার সাড়ে ৩০০ একরেরও অধিক জুমসহ প্রাকৃতিক বন, বনজ সম্পদ ও বাস্তুতন্ত্র আগুন দিয়ে ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার ও শাস্তি দিতে হবে। উক্ত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও তাদের জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ল্যাংকম পাড়া, রেংয়ঙ পাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়াবাসীদের জুমভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে এবং এরই মধ্যে বেদখলকৃত জমি ফেরত দিতে হবে। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য তাদেরকে বিনামূল্যে জুম ধানের বীজ ও বিভিন্ন ফলদ চারা সরবরাহ করতে হবে। লামা উপজেলাসহ বান্দরবানে রাবার বাগানের জন্য দেওয়া জমির লিজ ও ইজারা বাতিল করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি দিতে হবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাক। এ সময় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল পাঠচক্র ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা সত্যজিত বিশ্বাস, প্রগতিশীল চিকিৎসক ডা. সুশান্ত বড়ুয়া, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা প্রমুখ।

Development by: webnewsdesign.com