ভোকাল কর্ডের সমস্যায় করনীয় 

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ | ২:৩৮ অপরাহ্ণ

ভোকাল কর্ডের সমস্যায় করনীয় 
apps

একে অপরের সঙ্গে কথা বলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ভোকাল কর্ড। বিভিন্ন কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থতা লাভ করা যায়।
কণ্ঠনালির নানা সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী।

আমাদের গলার সামনে ল্যারিংস বা শব্দযন্ত্র অবস্থিত। ল্যারিংস বা শব্দযন্ত্রে দুটি ভোকাল কর্ড থাকে। এই কর্ড দুটির কম্পনের মাধ্যমে শব্দ তৈরি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস থেকে প্রবাহিত বাতাস ভোকাল কর্ডে কম্পনের সৃষ্টি করে।কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় এই পরিমাণ প্রতি সেকেণ্ডে ১০০ থেকে ১০০০ বার।

একজন বয়স্ক মানুষের দিনে এক মিলিয়ন বার ভোকাল কর্ড দুটির সংস্পর্শ হয়। অতএব চিন্তা করুন ভোকাল কর্ডের ওপর আমরা কতটুকু নির্ভরশীল-কাজে, গৃহে ও সবসময় সবখানে। তাই কণ্ঠকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখা দরকার।

পারস্পরিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো কণ্ঠ বা কথা বলা। অথচ আমরা কণ্ঠস্বর সম্পর্কে তেমন সচেতন নই।একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব কেমন হবে তার অনেকটাই নির্ভর করে তার কণ্ঠের ওপর। তাই নিজের সুস্থ থাকার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো প্রতিদিন কণ্ঠস্বরেরও যত্ন প্রয়োজন। এজন্য দরকার কণ্ঠের পরিমিত এবং নিয়ন্ত্রিত সদ্ব্যবহার। কণ্ঠের অপব্যবহার থেকে সচেতন হয়ে কণ্ঠস্বরের যত্নে যা করা উচিত-

১. অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে। উচ্চস্বরে বা অনেক জোরে কথা বললে ভোকাল কর্ডে মাইক্রোহেমোরেজ নামক সমস্যা হয়। এতে হেমাটোমা, ফ্রাইব্রোসিস হয়ে অনেক সময় কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকবৃন্দ জোরে চিৎকার করে কথা বলে মনের অজান্তে ক্ষতি করে থাকেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনসভায়, মায়েরা বাচ্চাদের সঙ্গে, ফেরিওয়ালা, হকারসহ বিভিন্ন কণ্ঠ নিভর্রশীল পেশাজীবীরা। কণ্ঠের যত্নে জনবহুল জায়গায় শোরগোলের স্থানে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত।

২. ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান সরাসরি আক্রমণ করে গলার যে কোনো সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং জটিল করে তোলে। শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ কণ্ঠনালির ক্যানসার রোগী ধূমপায়ী।

৩. অত্যধিক ঠান্ডা পানি পরিহার করুন। অনেক সময় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসেই হুট করেই আমরা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করি, যা আমাদের গলার জন্য ক্ষতিকর। যাদের ঠান্ডা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তাদের বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। এ ছাড়াও ঘাম অনেকক্ষণ ধরে শরীরে থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, এর ফলেও গলা ভেঙে যায়।ঠান্ডা লেগে যদি গলা বসে যায়, তবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিতে হবে, এমনকি ফিসফিস করেও কথা বলা যাবে না। গলা ভাঙা উপশমে ভালো পদ্ধতি হলো গরম বাষ্প টানা (Steam inhalation)। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয়, তবে উপকার হবে। মেনথল ইনহেলেশনও ভোকাল কর্ডকে কিছুটা আদ্রতা দিয়ে থাকে।

৪. পানি পানে অনীহা নয়। পানিশূন্যতা (Dehydration) গলাভাঙার আরেকটি রিস্ক ফ্যাক্টর। অনেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন না। সারা দিন কথা বলছেন কিন্তু হয়তো পানি পান করছেন না-এসব কারণে কণ্ঠের ক্ষতি হয়। কণ্ঠের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে। কফি, চা, কোমল পানীয় শরীরের কোষে পানিশূন্যতা ঘটায়; তাই খেলে অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

৫.খাদ্যাভাসে এবং দৈনন্দিন জীবন-যাপনে দিতে হবে বিশেষ নজর। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি অভ্যাস হলো, আমরা অনেক দেরি করে রাতে খাই এবং খেয়েই শুয়ে পড়ি। এটিও কিন্তু কণ্ঠনালির জন্য ভালো নয়। হাইপার অ্যাসিডিটি আছে, এমন (ল্যারিঙ্গো ফ্যারিঞ্জাল রিফ্লাক্স ডিসিজ) রোগীদের গলার আশপাশে প্রদাহজনিত কারণে অনেক বেশি শুকনো হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে রাতের খাবার পর অন্তত দু’ঘণ্টা পরে শুতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ঘুমনোর সময় মাথা যেন শরীরের তুলনায় একটু উপরের দিকে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসিডিটির জন্যও গলা ভেঙ্গে যেতে পারে, তাই রোগীর কাছ থেকে রোগের ইতিহাস বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৬. কণ্ঠনালিরও বিশ্রাম দরকার। আমরা অনেক সময় বিরতি ছাড়া কথা বলে যাই; আমরা চিন্তা করি না স্বরযন্ত্রও একটি যন্ত্র। উদাহরণস্বরূপ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অনেক সময় একই রকমভাবে টানা কথা বলতে দেখা যায়। কণ্ঠেরও রেওয়াজ বা ব্যায়াম দরকার। এ ছাড়া শারীরিক ক্লান্তিও কণ্ঠস্বরের ওপর মন্দ প্রভাব বিস্তার করে।

৭. তিন সপ্তাহের অধিক গলা ভাঙা থাকলে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসকরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভোকাল কর্ড বা কণ্ঠনালি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-ইনডাইরেক্ট ল্যারিংগোস্কোপি/ ভিডিও ল্যারিংগোস্কোপি। কণ্ঠস্বরের পরিবর্তনে ব্যক্তির রোগের ইতিহাস, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে গলা ভাঙার কারণ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

Development by: webnewsdesign.com