করোনার কারণে চাহিদায় ধাক্কা তো ছিলই। তার সঙ্গে জোট বেঁধেছে চড়া মূল্যবৃদ্ধি। আর রোজায় সেই মূল্যবৃদ্ধিতে যেন আগুনে ঘি ঢালার পরিস্থিতি হয়েছে। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের খাদ্যপণ্য ক্রয়ে এগিয়ে এসেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ১ রোজা থেকে রাজধানীর ১৫টি স্পর্টে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করছে মন্ত্রণালয়টি। এটি গত ২ বছর ধরে চলছে, শুধু রাজধানীতে। জেলা কিংবা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছাতে পারেনি এ কার্যক্রম।
শনিবার সকালে রাজধানীর সচিবালয়সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড এলাকায় বিশেষ ভ্যানে খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছিল। পিকআপ ভ্যান ঘিরে লম্বা লাইন। পাশের বেসরকারি অফিসের প্রহরী মিলন মিয়া বলছিলেন, লাইনে দাঁড়িয়েও মাংস কিনতে পারেননি। রোজার শুরুতে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পেরেছিলেন। ওই সময় গ্রাম থেকে বড় ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এসেছিলেন। এখন পরিবারের সদস্যরা মাংস খেতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়েও মাংস পাননি। পাননি মুরগির মাংসও, সব বিক্রি হয়ে গেছে। বাজারে গরুর মাংস প্রায় ৭০০ টাকা কেজি, আর ভ্যানে বিক্রি হচ্ছিল ৫৫০ টাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য বললেন, পরিবার থাকে গ্রামে। অনেক সময় মাংস খেতে ইচ্ছে করে, পরিবারের জন্যও কিনতে মন চায়। ভ্যানে যদি বেশি পরিমাণে পণ্য বিক্রি করা হতো, তাহলে দরিদ্র মানুষ খেতে পারত। নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হওয়ায় মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। খামারবাড়ি গোল চত্বরে ভ্যান ঘিরেও বেলা ১১টায় সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল। এক কেজি মুরগির মাংস ও ১ হালি ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন রিকশা চালক হিরু মিয়া। জানালেন, বাজারের চেয়ে মূল্য কম থাকায় পণ্য কিনেছেন তিনি। মাংস দিয়ে সেহরি খাবেন। ফল বিক্রেতা মামুন মিয়া বললেন, ভ্যান আসার মুহূর্তেই ভিড় লেগে যায়। বিক্রয় কার্যক্রম শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। ভ্যানের সংখ্যা বাড়িয়ে খাদ্যপণ্য বাড়ালে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতেন। এখানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসা উচিত, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। বিশেষ করে রোজার দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলে সবচেয়ে ভালো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় কর্মী বলেন, হুড়োহুড়ি লেগে যায়, কার আগে কে কিনবে। কম খাদ্যপণ্য থাকায় মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় বিক্রয় কার্যক্রম। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে, প্রশ্ন ছুড়ে দেয়-এত কম পণ্য কেন আনা হয়। ঝর্ণা আক্তার নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, করোনায় পুঁজি হারিয়েছেন। এখন রাস্তার পাশে শরবত বিক্রি করেন। সীমিত আয়ে ভালোমন্দ খাওয়া যায় না। তাই ভ্যান থেকে মুরগি কিনতে এসেছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে এসে কিছুই পাননি। বিক্রেতারা জানান, ২৮ রোজা পর্যন্ত এ দুটি স্পট ছাড়াও জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, মিরপুরের কালশি এবং যাত্রাবাড়ীতে ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থা চালু থাকবে। প্রতিটি পিকআপ ভ্যানে বর্তমান পণ্যের দ্বিগুণ পণ্য বিক্রি করা গেলে, অন্তত প্রথমে যারা লাইনে দাঁড়ায় তারা পণ্য কিনতে পারবে। বিষয়টি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ইচ্ছে থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারছে না তারা। মাংস, ডিম ও দুধ তারা কিনে এনে নিজস্ব লোক দ্বারা সুলভ মূল্যে বিক্রি করছেন। রাজধানীর ১৫টি স্পটে এ কার্যক্রম চলছে। চাহিদা অনুযায়ী এ পণ্য খুবই কম স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি আগামীতে আরও খাদ্যপণ্য বাড়িয়ে স্পটও বাড়াব। এ বিষয়ে স্যারের (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী) সঙ্গে আলোচনাও হচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, খাদ্যপণ্যগুলো বিক্রয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। এখানে বিশেষ করে রোজার সময় খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমন বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ অন্তত রোজার সময় ভালো কিছু খেতে পারবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে গত রমজানসহ ২০২০ ও ২০২১ সালে মোট ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় বিক্রি করা হয়েছে। এ কার্যক্রম বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্টার কাউন্সিল সম্পৃক্ত রয়েছে। বিশেষ ভ্যানে দুধ ৬০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম জানান, গত দুই বছর ধরে আমরা এ কাজটি করছি। করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কর্মকর্তা-সংশ্লিষ্ট লোকজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের সহকর্মীও মারা গেছে। রোজার সময় আমরা সুলভ মূল্যে এ খাদ্যপণ্যগুলো বিক্রি করছি। আমাদের মতো করে অন্যসব মন্ত্রণালয়ও বিশেষ করে রোজার সময় সুলভ মূল্যে এমন পণ্য বিক্রি করতে পারে। আমাদের লোকবল, গাড়ির স্বল্পতা রয়েছে। আগামীতে এ খাদ্যপণ্য বিক্রয় বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণে আমরা নিজ উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহণ করছি সংশ্লিষ্ট খামারিদের নিয়ে।
Development by: webnewsdesign.com