সোরিয়াসিস এই রোগের নামটা অনেকের কাছেই অপরিচিত লাগলেও ক্রমশ এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যে কোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। তবে ৪/৫ বছর বয়সের আগে নারী ও পুরুষ সমভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ সম্পর্কীয় কিছু (আবশ্যকীয়) তথ্য-
সোরিয়াসিস কী : এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদি, প্রদাহজনিত একটি রোগ যা শরীরের মূলত চামড়া, নখ, হাত বা পায়ের তালু, মাথার ত্বক ও কিছু অস্থিসন্ধি (জয়েন্ট)-কে আক্রান্ত করে। ত্বক আক্রান্ত হলে তা প্রকাশ পায় লালাভ চাকা বা ছোপ যা রুপালি আঁশ দ্বারা ঢাকা এবং উঠে গেলে বিন্দু বিন্দু রক্তক্ষরণ হয়।
বংশগত প্রভাব : পিতা বা মাতার যে কোনো একজনের এই রোগ থাকলে সন্তানদের ১/৪ অংশ এতে আক্রান্ত হতে পারে। আর পিতা-মাতা উভয়েরই এ রোগ থাকলে সন্তানদের ৫০ শতাংশ এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
লক্ষণ : ত্বকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাঁটু, কনুই বা কোমরে লক্ষণ শুরু হয় কখনো শুধু হাত ও পায়ের তালু আক্রান্ত হয়। শুরু হয় লালাভ গুটি বা পুরু ছোপ বা চাকা দিয়ে। অচিরেই আক্রান্ত স্থান পুরু হয়ে উঠে এবং মলিন রুপালি আঁশ দ্বারা ঢেকে যায়। মাছের আঁশের মতো এ পুরু খোসা সরালে তার নিচে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তবিন্দু দেখা যায়, যা সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। অনেক সময় চামড়ার নিচে পুঁজপূর্ণ সোরিয়াসিস দেখা যায় যাকে Pustular Psoriasis বলে।
কখনো কখনো রোগীর শরীরে প্রায় ৯০ শতাংশ চামড়া লাল বর্ণ ধারণ করে, পুরু চামড়া খসে পড়তে থাকে। গুরুতর এই অবস্থাকে erythrodermic psoriasis বলে। শরীরে বৃষ্টির ফোঁটার মতো ছড়ানো এক ধরনের সোরিয়াসিস হয় যাকে Guttate Psoriasis বলে। ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাথার ত্বক আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে খুশকির চেয়ে কম চুলকায় এবং কম তৈলাক্ত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন মানুষ ত্বকের কোনো লক্ষণ ছাড়াই শুধু মাথার সোরিয়াসিস নিয়ে সারা জীবন কাটায়। সোরিয়াসিস নখে হতে পারে। এক্ষেত্রে নখ দেখতে হয় ভঙ্গুর হলুদাভাব বা বাদামি। তবে সোরিয়াসিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।
কী কী কারণে রোগ বাড়ে : মানসিক দুঃচিন্তা, বিষণ্নতা, কিছু ওষুধ যেমন- বিটা ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, লিথিয়াম, স্টেরয়েড, টারবিনাফিন NSAID ইত্যাদির ব্যবহার, জীবাণু সংক্রমণ (গলা বা টনসিলের প্রদাহ), অতিরিক্ত সূর্যালোক, লাল মাংস (গরু, খাসি), ধূমপান।
রোগ নির্ণয়করণ : মূলত বাহ্যিক লক্ষণগুলো দ্বারা রোগটি নির্ণয় করা হয়। কখনো কখনো ত্বক কেটে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। অন্যান্য রোগের প্রভাব : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চ লিপিড, হৃদরোগ (high outp1ut cardiac failure)।
রোগের কারণ : পুরোপুরি জ্ঞাত নয়। তবে ত্বকের কোষগুলো এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধে নিয়োজিত কোষকলা ও অন্যান্য নিয়ামক এ রোগের সূচনা করে।
চিকিৎসা ও জীবনব্যবস্থা : সাধারণ উপদেশের মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ডেটল-স্যাভলন বা কোনো ধরনের কেমিক্যাল আক্রান্ত স্থানে কখনোই ব্যবহার না করা, আক্রান্ত স্থানে ইমোলিয়েন্ট বা ময়েশ্চারাইজার পুনঃ পুনঃ ব্যবহার করা, Tar যুক্ত সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করা। এছাড়া ত্বকে ব্যবহারের ওষুধের মধ্যে রয়েছে কটিকোস্টেরয়েড (সর্বোচ্চ প্রথম ২ সপ্তাহ) যা পরে tacrolimus জাতীয় ওষুধ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, স্যালিসাইলিক এসিড (১০ শতাংশ-২০ শতাংশ), ইউরিয়া, ভিটামিন ডি ৩ এনালগ, লিকুইড প্যারাফিন, ভিটামিন এ ডিরাইভেটিভ, টার বা আলকাতরা, UVB radiation. মুখে খাওয়ার ওষুধের মধ্যে রয়েছে এন্টিহিস্টামিন, মেথেট্রেক্সেট, এসিট্রেটিন, সাইক্লোস্পেরিন, বায়োলজিক্স ও চটঠঅ থেরাপি। মনে রাখবেন, সোরিয়াসিস কখনোই নিরাময়যোগ্য নয়।
তবে সঠিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়মকানুন মেনে চললে দীর্ঘদিন এ রোগ থেকে ভালো থাকা যায়।
লেখক : সাইন্টিফিক সেক্রেটারি, সোরিয়াসিস এওয়ারনেস ক্লাব, ঢাকা
Development by: webnewsdesign.com