সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চলতি নদের সদরগড় থেকে ডলুরা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে খননযন্ত্র ও বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। অবাধে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সবকিছু জানার পরও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
সুনামগঞ্জের বালু-পাথর ব্যবসায়ী সমিতি চলতি নদ থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে।
বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা বলেন, চলতি নদের সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা অংশে ধোপাজান বালুমহাল। জেলা প্রশাসন থেকে এটি ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে তিন বছর ধরে এই বালুমহাল ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্ত থেকে বালু ও পাথর সংগ্রহ করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এতে পরিবহন ব্যয় বেশি পড়ছে।
ধোপাজান বালুমহালটি ইজারা না হলেও একটি মহল সেখান থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে। সম্প্রতি উত্তোলনের পরিমাণ আরও বেড়েছে। চক্রটি প্রথমে খননযন্ত্র ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করে তা নৌকা, বাল্কহেডে উঠিয়ে নেয়। পরে নদের তীরে স্তূপ করে রাখে। উত্তোলন করা বালু-পাথর থেকে অল্প কিছু অংশ প্রশাসনের লোকজনের সহায়তায় ‘লোক দেখানো’ নিলামে তোলা হয়। নিলামে ওই চক্রের লোকজনই অংশ নিয়ে সেগুলো কিনে নেন। এরপর নিলামের কাগজ দেখিয়ে কেনা বালু-পাথরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বালু-পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, এভাবে অবৈধ বালু-পাথর জব্দ ও নিলাম নাটক সাজিয়ে প্রতিদিন চলতি নদ থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু লুট হচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশের কাছে এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ধোপাজান মহালে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন চক্রের সঙ্গে প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যুক্ত রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে লাভবান হয়ে অবৈধভাবে এই বালু-পাথর উত্তোলনে সহযোগিতা করছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাতেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এরপরও অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ বালু-পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সাজুল মিয়া বলেন, জেলার ব্যবসায়ীরা এখন অসহায়। তাঁদের দেখার কেউ নেই। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরাও বিপাকে পড়েছেন। ধোপাজানে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি নদের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশেরও। কিন্তু এসব বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেছেন, তাঁরা অভিযোগ পেলেই নদে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান। নদ থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করে রাখা বালু-পাথর প্রশাসন একা নিলামে তোলে না। এটা পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স বিভিন্ন সময় নিলামে তোলে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় চলতি নদের ধোপাজান বালুমহাল ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করে। আর নিলামের সুযোগে অতিরিক্ত বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
Development by: webnewsdesign.com