এবার আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের অশিক্ষার্থীমূলক বাজে বললেন শাবির শিক্ষক-শিক্ষিকা

বুধবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৬:২৮ অপরাহ্ণ

এবার আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের অশিক্ষার্থীমূলক বাজে বললেন শাবির শিক্ষক-শিক্ষিকা
apps

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা ছয়দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তাদের দাবি ছিলো একটি হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের। কিন্তু সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত এসে ঠেকে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন।

তবে এবার পাল্টা আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের অশিক্ষার্থীমূলক বাজে মন্তব্য আর আচরণের প্রতিবাদে তারা বুধবার (১৯ জানুয়ারি) মাঠে নেমেছেন। শাবির ৩০-৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ক্যাম্পাসের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান।

এসময় তাঁদের হাতে ‘স্টপ ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট ওমেন টিচার্স’ ‘শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করছি’ ‘শাবিপ্রবির নারী শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই’ শীর্ষক প্লেকার্ড ছিল।

প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন, অধ্যাপক ড. চন্দ্রানী নাগ, সহকারী অধ্যাপক ফাহমিদা সুলতানা, শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, ‘আমরা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলছি না। আমরা বলছি, এই যে শিক্ষার্থীরা, যারা আন্দোলন করছেন, তারা আমাদের সন্তান। আমার সন্তান কখনোই আমার সম্পর্কে কটূক্তি বা কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলতে পারে না। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাই করছে। এর প্রতিবাদে আমরা এখানে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা তাদের শিক্ষক, মা-বাবা সমতুল্য। তারা আমাদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না। আমরা এমন শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবো না’

তারা আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর আসলে আক্রমণ। শিক্ষার্থীদের যেসব মন্তব্য, তা অপমানজনক। এর প্রতিবাদে এখানে আমাদের দাঁড়ানো। আমাদের সাথে সকল শিক্ষকই আছেন, তাঁরাও এখানে এসে দাঁড়াবেন।’

ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন করতেই পারে। আমরাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। আমরাও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছি, কিন্তু আমাদের আন্দোলন ছিলো শান্তিপূর্ণ এবং নৈতিকতার মধ্যে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বর্তমান আন্দোলনে তারা যে ধরনের কথাবার্তা বলছে, তা আমরা আশা করি না, গ্রহণ করতে পারি না। আমরা তো তাদের শুধু একটি কাগুজে সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য পড়াই না। আমাদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।’

উল্লেখ্য, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত শনিবার আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন রবিবার সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। এতে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে উত্তুঙ্গে ওঠে আন্দোলন।

এদিকে, গত রবিবার পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সিসিক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান। ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান বলে জানান। তাঁরা উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে আন্দোলন থেকে সরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছে এবং আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’

 

 

Development by: webnewsdesign.com