টানা তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর তালা ভেঙে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধার করেছেন পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমসহ পুলিশের সদস্যরা। এ সময় আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের সামনে জড়ো হয়। এ সময় কোষাধ্যক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ৫টা ১০ মিনিটের দিকে কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যান। কোষাধ্যক্ষ ভেতরে ঢোকার জন্য আন্দোলনকারীরা তালা খুলতে যাওয়ার মুহূর্তে পেছনের দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশের সদস্যরা। পরে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে পুলিশ আন্দোলকারীদের ধাওয়া করলে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ২৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বলে জানা যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছোড়েন পুলিশ সদস্যদের ওপর।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তাকিয়া গুলিবিদ্ধ হন, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরে সুমাইয়া আক্তার, স্থাপত্য বিভাগের আল ইমরান, ইংরেজি বিভাগের তানহা তাহসীন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মিত্রা সংঘ, সজল কুন্ডু, বিভাগের নাম পাওয়া যায়নি এমন শিক্ষার্থী হলেন, মেহজাবিন পর্ণা, সজল কুণ্ডু, সাজেদুল ইসলাম সিজন, তাকিয়া ইসলাম, জুনায়েদ ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, মসিউর ইসলাম, ইরফান, রায়হান আহমেদ, মুনির হোসেন তালুকদার, সেলিম এবং তমাল, সিফাত আকাশ, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব, হুমায়ূন কবির অপূর্ব সহ আরো অনেকে আহত হন।
বর্তমানে আহত শিক্ষার্থীরা সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, মাউন্ড এডোরা হসপিটাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও ছাত্র উপদেশ ও নিদের্শনা পরিচালকসহ প্রায় ৫-৭ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এদিকে আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষকদের পেছনে অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে পুলিশ তাদেরকেও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এতে ছাত্রলীগের ১০-১২ জন কর্মী আহত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, পুলিশ ছাত্রলীগের এক সদস্যকে পুকুরে ফেলে দেন। পরে তাকে বেধড়ক মারধর করেন পুলিশের সদস্যরা। এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পরে ৫টা ৫০ মিনিটের সময় তালা ভেঙে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের তৃতীয় তলার ৩৩৩ নম্বর কক্ষ থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করে পুলিশ।
উপাচার্যকে উদ্ধারের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আজ বাহার বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করলে আমরা তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিই। এ বিষয়ে এসএমপি উপকমিশনার আবদুল ওয়াব বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরকে এ বিষয়ে একাধিকবার কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করে আছেন।
Development by: webnewsdesign.com