‘ভাতের কষ্ট কী তা আমি জানি। আমার আব্বা একজন চায়ের দোকানি ছিলেন। নিজেদের সামান্য জমিও নেই। সেই পরিবারে থেকে চিকিৎসক হওয়াতো দূরের কথা, মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়াই সম্ভব ছিলো না। তবে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমি এমবিবিএস পাস করেছি। আর এর পুরো কৃতিত্বের ভাগিদার একজন শামসুদ্দিন স্যার।’ এভাবেই দারিদ্রতাকে পেছনে ফেলে নিজের সাফল্যের কথা বলছিলেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মেয়ে মোছা. শিউলি আক্তার।
জানা গেছে, শিউলি সম্প্রতি বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি এই মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করতে একজন শিক্ষার্থীর অন্তত ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন পড়ে। তবে একটি টাকাও তাকে দিতে হয়নি সেখানে লেখাপড়া করতে। অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে শিউলিকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন বারিন্দ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন।
স্ট্রাগলের দিনগুলোর কথা তুলে ধরে মেধাবী শিউলি আক্তার জানান, চারঘাট উপজেলার সরদহ ট্রাফিক মোড়ে তার বাবার একটি চায়ের দোকান ছিল। সেই দোকানের আয়েই খুঁড়িয়ে চলতো তাদের পাঁচ ভাইবোন নিয়ে বাবা-মায়ের সংসার। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সেই দোকানটিও পুড়িয়ে দেয় স্থানীয় দৃর্বৃত্তরা। এরপর তার বাবা স্ট্রোক করেন। এতে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয় তাদের পরিবার। ভাইদের কোনো রকম আয়ে চলছিলো তাদের সংসার। এর মধ্যে ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে শিউলি বৃত্তি পান। তার এই ভালো ফলাফল করতে সবসময়ই তার উৎসাহ দিতেন। তার মা তাকে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে পড়াশুনায় মনোযোগী হতে বলতেন।
এরপর ২০০৯ সালে ৯ম শ্রেণিতে থাকতে শিউলির বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। বাবা-মায়ের সংসার ছেড়ে এসে শিউলি ভেবেছিল হয়তো স্বামীর সংসারে অন্তত ভাতের কষ্ট থাকবে না। তবে নিয়তি সেখানেও নিষ্ঠুর। দারিদ্রতার পাশপাশি শ্বশুর-শাশুড়ি তার লেখাপড়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর মাঝে বাবা-মায়ের বাড়িতে থেকে ২০১১ সালে শিউলি এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পায়। এরপর শিউলিকে নিয়ে পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশ হয়, শিরোনামটা ছিলো ‘অর্থের অভাবে ফুটবে না শিউলি!’। সংবাদটি মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের নজরে আসে। আর সেই থেকে আজ অবধি শিউলির পুরো দায়িত্বভার গ্রহণ করে চলেছেন তিনি। শামসুদ্দিনের আশীর্বাদেই শিউলি আজ চিকিৎসক হতে পারছেন। এমবিবিএস ডিগ্রির অংশ হিসেবে আর একটি বছর হাসপাতালে ইন্টার্নি করতে হবে তাকে।
শামসুদ্দিন শুধু শিউলিকে লেখাপড়া করিয়েছেন তাই নয়, শিউলির স্বামীকে বারিন্দ মেডিকেল কলেজে চাকরি দিয়েছেন। শিউলির সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। অভিভাবক হিসেবে এ পর্যন্ত পুরো সংসারের ব্যয়ভারও বহন করে চলেছেন তিনি। শিউলির আর্থিক অনটনে ও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সামনে এগিয়ে যেতে সবসময় উৎসাহ ও সাহস দিয়েছেন বারিন্দ মেডিকেলের এমডি ও পিতৃতুল্য মোহাম্মদ শামসুদ্দিন। তার আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী ৬ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের পিতা।
উল্লেখ্য, শুধু শিউলি নয়, বাঘা ও চারঘাট উপজেলাসহ রাজশাহীর অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীকে মোহাম্মদ শামসুদ্দিন নানাভাবে সহযোগীতা করেছেন। যাদের কেউ বর্তমানে পুলিশের সার্জেন্ট, এ্যাকাউন্স অফিসার, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কেউবা পড়ছেন বুয়েটে। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে সহযোগীতা, অসহায় ও দুস্থদের অর্থ ও পণ্য দিয়ে নিভৃতেই সহযোগীতা করে চলেছেন তিনি।
Development by: webnewsdesign.com