চড়-ই পাখির কন্ঠে কিচির মিচির গান, আকুল করে প্রাণ, মুখরিত আকাশ আর বাতাস। সকাল সন্ধ্যায় পাখির কন্ঠের গান এ তো চির সবুজ বাংলার চিরন্তন রূপ। শুনিয়া পাখির কন্ঠের গান আকুল হয় না প্রাণ, এমন বাঙ্গালী খোঁজে পাওয়াই ভার। রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট এলাকার বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনের আম গাছের ডালে ওকি দিয়ে আছে চড়–ই পাখির ঝাঁক। প্রকৃতিতে তখন গোধুলী বেলা।
এরই মাঝে শুরু হয়ে যায় এদিক-ওদিক ওড়াউড়ি ও কিচিরমিচির শব্দ। এক ঝাঁক উড়ে যায় তো আরেক ঝাঁক এসে বসে। এভাবে কিছুক্ষণ ছুটাছুটির পর আশ্রয় নেয় আম গাছের ডালে আর পাতায়। আম গাছের ডাল ও পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধু পাখি আর পাখি।
উপজেলার সাওঘাট বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনের চারদিকে যানবাহনের ভেঁপুর প্যাঁ পোঁ শব্দর মধ্যেও গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলকাকলিতে মুখরিত করে তুলেছে এই এলাকা। বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনে তেল ও গ্যাস নিতে আসা গাড়িগুলোর চালকদের পাশা-পাশি শত ব্যস্ততার মাঝেও চড়ুইগুলোর এমন দুষ্টুমির দৃশ্য দেখে লোভ সামলাতে পারেন না যাত্রীরাও।
এতেই প্রশান্তি আসে ক্লান্ত মানুষগুলোর মনে। সাওঘাট বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনে কর্মরত থাকা এক ব্যক্তি জানায়, গত কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে এই আম গাছটিতে কিছু চড়ুই পাখি এসে আশ্রয় নেয়। নিরাপদ ভেবেই এখানে আস্তে আস্তে পাখি বাড়তে থাকে। কেউ তাদের বিরক্ত করে না। উল্টো কেউ যেন পাখিগুলোর কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখেন তারা।
তিনি আরো বলেন,সন্ধ্যা নামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পাখিদের এমন দুষ্টুমিতে একটুও অতিষ্ঠ হন না বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনে আসা যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এই পাখিগুলো দেখতে কখনো কখনো যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার মোবাইল দিয়ে ছবিও তুলে নিয়ে যায়। সাওঘাট বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনে গ্যাস নিতে আসা এক সিএনজি চালক আমির হোসেন জানায়, সন্ধ্যা নামলেই আশপাশের বিদ্যুতের তার, আর গাছগাছালি পাখিতে ভরে যায়। শুরু হয় এদিক-ওদিক ওড়াউড়ি।
ঝাঁক বেঁধে পাখিদের ওড়াউড়ির দৃশ্য আর কিচিরমিচির শব্দে মন ভরে যায়। আড়াইহাজার উপজেলার বান্টি এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আরমান আলী (৪৯) বলেন, প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি (আগস্টের শুরু) চড়ুই পাখিগুলো বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয়। মাস তিনেক থাকার পর আবার চলেও যায়। এগুলোর হইহুল্লোড় আর চেঁচামেচি মনকে প্রফুল্ল করে তুলে। আমি প্রতিদিনই এখান দিয়ে যাতায়াত করি। এই পাখিগুলোর অভূতপূর্ব দৃশ্য সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।
সাওঘাট এলকার বাসিন্দা আজগর আলী জানান, সাওঘাট এলাকার বিস্মিল্লাহ্ ফিলিং ষ্টেশনের আম গাছটির অনেক পাতা। গাছে পাতা ও ডালপালাও অনেক বেশি।
সন্ধ্যা হলে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই এই গাছে এসে আশ্রয় নেয়। এই পাখিগুলোর হইহুল্লোড় আর চেঁচামেচিতে আমাদের পুরো এলাকা মুখর হয়ে উঠে। অনেকে সখের বসে দেখতেও আসে। পাখিদের কলরব ও চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে সবাই মুগ্ধ হন। আমি নিজেও চড়ুই পাখির কিচিরমিচির রেকর্ড করে মোবাইলে রিং টোন হিসাবে অনেক দিন ব্যবহার করেছি। ইন্টারনেট দুনিয়া ঘুরে জানা যায়, পৃথিবীতে মোট ৪৮ জাতের চড়ুই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে মাত্র দুই জাতের চড়ুই বেশি দেখা যায়। জীব বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এদের আদি নিবাস ইউরেশিয়া অঞ্চল এবং আফ্রিকা মহাদেশ ছিল। কৃষিকাজ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
চড়ুই হলো একমাত্র পাখি যার বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। আদুরে প্রকৃতির এই পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। এ জন্যই এদের ইংরেজী নাম ‘হাউস স্প্যারো’ অর্থাৎ‘ গৃহস্থলি চড়ুই’। খড়কুটো, শুকনো ঘাস পাতা কড়িকাঠে কার্নিশে বাসা বেঁধে এরা বসবাস করে। এরা মাটি থেকে পোকামাকড় ও শস্য খুঁটে খায়। চড়ুই একাধিকবার প্রজনন করে। প্রতিবার ৪ থেকে ৬ টি ডিম দেয়। ডিম থেকে ছানা প্রায় ৭০ ভাগ বেঁচে থাকে। আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে চড়ুই মানুষের সান্নিধ্যে আসে। মানববসতির আশে-পাশে সহসাই চড়ুইয়ের দেখা মিলে। যে কোনো পরিবেশে এরা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যে মানিয়ে নিতে পারে।####
Development by: webnewsdesign.com