১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি নভেম্বরে বিশ্বজুড়ে GERD সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিতায় চলতি বছরও ২১ থেকে ২৭ নভেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও গলা-বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি নভেম্বরে বিশ্বজুড়ে GERD সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিতায় চলতি বছরও ২১ থেকে ২৭ নভেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও গলা-বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
এ নিয়ে লিখেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো: আব্দুল হাফিজ শাফী অনেক রোগী ডাক্তারদের কাছে গিয়ে বলেন-মাঝে মাঝেই টক ঢেঁকুর ওঠে বা মুখে তিতা লাগে, গলায় জ্বালাপোড়া করে, খাবার গিলতে কষ্ট হয়, খাবার অনেক সময় ওপরে উঠে আসে। কেউ কেউ আরও বলেন, গলায় মনে হয় কিছু আটকে আছে। অনেক সময় বুক জ্বালার সঙ্গে গলা ভাঙার উপসর্গ দেখা যায়। গলা-বুক জ্বালাপোড়ার এ উপসর্গগুলোতে হরহামেশাই লোকজনকে ভুগতে দেখা যায় এবং এটা রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের মানকে ব্যাহত করে।
এসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা গলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যখন কোনো ধরনের প্যাথলজি (ক্ষত) বা প্রদাহ পান না তখন একে GERD (Gastro Oesophageal Reflxu Disorder) বলে ডায়াগনসিস করে থাকেন। বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জন এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগের প্রকোপ বেশি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ রোগের ব্যাপকতা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। প্রতিরোধ সম্পর্কে কম জানার কারণে অনেককে নানা জটিলতায় ভুগতে হয় এবং বেশি বেশি ওষুধ খেতে হয়।
গলা-বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়
গ্যাস্ট্রো বলতে আমরা পাকস্থলীকে বুঝে থাকি আর ইসোফেগাস হচ্ছে খাদ্যনালি। আমাদের খাবার গ্রহণের পদ্ধতিটি একমুখী। খাবার খাদ্যনালি হয়ে পাকস্থলীতে যায়। কোনো কারণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তখন খাবার নিচের দিকে না গিয়ে ওপরে উঠে আসে। তখনই পাচক রস বা এসিড পাকস্থলী থেকে ওপরে চলে আসার কারণে গলা ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা তৈরি হয়।
জীবনযাত্রার কিছু ভুল পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু বিষয় রয়েছে যার কারণে এ রোগ সৃষ্টি হয় বা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। প্রতিরোধের জন্য জেনে নেই কারা গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি আছেন-
১. যারা ওজনাধিক্য বা স্থূলতায় ভুগছেন, ২. যারা ধূমপান করেন, ৩. যারা ঘনঘন অধিক পরমাণে খাবার খান, ৪. খাবার গ্রহণের পরপরই যারা শুয়ে পড়েন, ৫. যারা অধিক পরিমাণে পোড়া তেলে ভাজা খাবার (আমরা প্রচুর তেলেভাজা ও মসলাযুক্ত খাবার খেতে ভালোবাসি), ৬. যারা অধিক পরিমাণে কোমল পানীয় এবং অসময়ে কফি পান করে থাকেন, ৭. গর্ভবতীরা।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে গলা বা বুক জ্বালাপোড়াকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। অনেক সময় হৃদরোগের কারণেও বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। রিফ্লাক্স ডিজিজ GERD-এর কারণে হার্টবার্ণ হলে রোগীর বুকে অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া অনুভূতি বা ব্যথা হবে, যা রোগীর গলা পর্যন্ত যেতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের কারণে গলা-বুক জ্বালাপোড়া হলে এর সঙ্গে বাম হাত, বাম ঘাড় এবং চোয়ালে ব্যথা হবে, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বমি বমি ভাব, চরম ক্লান্তি, উদ্বেগ ইত্যাদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে।
প্রতিরোধ যেভাবে করবেন
* ক্ষুধা পেলে একবারে অনেকটা খেয়ে ফেলা আমাদের স্বভাব। একসঙ্গে অনেক খাবার খাবেন না। সারা দিনে অল্প পরিমাণ করে খাবারকে ভাগ করে খাবেন।
* খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। তাড়াহুড়ায় ভালো করে না চিবানোর ফলে খাবার ভালো করে হজম হয় না। এতে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটির প্রবণতা বাড়ে।
* রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগেই খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে। তা না হলে যদি শোবার ঠিক আগে আগেই খাবার খান, তাহলে ভরপেট অম্লরসকে খাদ্যনালি দিয়ে ঠেলে ওপরে তুলবে। এতে বুক জ্বালা করবে।
* মানসিক চাপে যেহেতু পাকস্থলীতে অম্লরস নিঃসরণ বাড়ে, তাই যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
* রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কোমরের বাঁধন শিথিল করে শোবেন অর্থাৎ ঢিলেঢালা কাপড় পরে ঘুমাবেন।
* ভরা পেটে কখনই ব্যায়াম করবেন না, বিশেষত পেটের ওপর চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম। শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সঠিক সময়ে শরীরচর্চার বিকল্প নেই।
* কোনো কোনো ওষুধ বুক জ্বালার সমস্যাটা বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন অ্যাসপিরিন/ব্যাথানাশক। এগুলো কখন কীভাবে খেতে হবে, তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন।
* যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা খাবার পর শোবার সময় মাথার দিকটা পায়ের দিকের তুলনায় উঁচুতে রাখবেন। এ জন্য মাথার নিচে অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে ঘুমাতে পারেন।
* প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করবেন।
চিকিৎসা
যদি বারবার এ সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায় অথবা ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে এ গলা এবং বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা কারও থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজনে মাত্রা অনুযায়ী ওষুধ দেবেন।
এ চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) দেওয়া হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগের চিকিৎসা কিছু দিন নিতে হয়, এটা হতে পারে মাস অথবা বছর। GERD বা গলা-বুক জ্বালাপোড়া সাধারণত কোনো মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করে না, যদি কেউ সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে থাকেন তাহলে এ রোগ মারাত্মক ও বিপজ্জনক হতে পারে।
Development by: webnewsdesign.com