ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলারডুবিতে মৃত্যু.......

ব্যারিস্টার সুমনের দাবি ‘২-৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ’

রবিবার, ২৯ আগস্ট ২০২১ | ২:৪৮ অপরাহ্ণ

ব্যারিস্টার সুমনের দাবি ‘২-৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ’
apps

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌ দুর্ঘটনায় নিহত ২২ জনের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ দাবি করেন।

লাইভের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটিতে চম্পক নগর ইউনিয়ন বিজয়নগর উপজেলা। চম্পক নগর ঘাট থেকে নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে আমি আপনাদের সামনে কথা বলছি।’ নিজের হাতে থাকা একটি ঘড়িতে সময় দেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, গতকালকে (শুক্রবার) এ রকম একটি সময়ে নৌকা ছেড়ে যায়।

এই নৌকাতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন ছিল বলে ওনারা বলছেন। সেখানে ২২ জনের মতো মানুষের লাশ এই পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আমি এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মনে হলো যে, কী এমন কারণ ২২ জনের মতো মানুষের লাশ পাওয়া গেলো। জানি না, আরও কত লাশ পাওয়া যাবে।’

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা জাননে যে, বিভিন্ন কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আলোচিত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মারামারির ঘটনা শোনা যায়। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েরাই কিন্তু দেখা যাচ্ছে ফুটবলে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিভিন্ন কারণে সম্মানিত, আবার বিভিন্ন কারণে সমালোচিতও।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে নৌকাতে করে ৫০-৬০ মানুষ শেষ উদ্দেশে রওয়ানা দিলেন। এইখান থেকে সামনে গিয়েই তারা একটি বালুর নৌকার সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্ট করার কারণে ২২ জনের সলিল সমাধি হয়েছে।’ এসময় তিনি স্থানীয় একজনের কাছে জানতে চান, আপনি কি একটু কারণটা বলবেন? এখান থেকে নৌকাগুলা ছেড়ে কোথায় কোথায় যায়। আর কী কী কারণে এই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে, একটু বলতে পারবেন কি?’ এসময় স্থানীয় ব্যক্তি দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।

দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে জানতে চাইলে অপর এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। দুর্ঘটনার খবর পাওযার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসক (ডিসি) আসেন। মরদেহ উদ্ধার করার পরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার ২০ হাজার টাকা করে পাবেন।’

এ পর্যায়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘যারা যারা মারা গেলেন তাদের ২০ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে একটা হিসাব করে দেখা গেছে যে, তাদেরকে যদি আর কোনো টাকা না দেওয়া হয়, ২০ হাজার টাকা করে ২২ জনের দাম পড়ে চার লাখ ৪০ হাজার টাকা।’

তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, রাস্তারতো কিছু বেহাল দশা আছে, আপনারা জানেন এখন নদী পথেরও যে কী পরিমাণ বেহাল দশা। বাংলাদেশে যদি আপনি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে যান, এজন্য ৩০২-এ আপনার ফাঁসি হবে। কিন্তু যদি আপনি অ্যাক্সিডেন্টে মরেন তাহলে না ড্রাইভার বা এই নৌকার মালিকরে দিয়ে তো আর কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই নৌকার মালিক আর ক্ষতিপূরণ কী দেবে। কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না।’

ব্যারিস্টার সুমন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে শুধু এটুকু দাবি জানাইতে চাই, এখানে অস্বাভাবিক মৃত্যু যেটার জন্য সরকারের দায়িত্ব আছে, এইখানে ২৫ হাজার আর ২০ হাজার টাকা কেন? প্রতিটা পরিবারকে কেন দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হবে না। আমরা তো অভাবি না। আমাদের তো হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে। তাহলে যে পরিবারের মানুষ মারা যাচ্ছে, সেই পরিবার জানে তাদের সংসার চালাইতে কত কষ্ট হবে।

এখানে ২০ হাজার টাকা না দিয়ে যেহেতু নৌকার মালিকরা এক টাকাও দিতে পারবে না। বালুর নৌকাওয়ালা যে আছেন তার পক্ষেও এক টাকা দেওয়া সম্ভব না। তাহলে যারা মারা গেছে তাদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া অনেক কম হয়। আমি মনে করি তাদেরকে মিনিমাম দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিলে কোনো অংশেই, কোনো কিছুতেই রাষ্ট্রের কম হবে বলে আমার মনে হয় না।

তারপরও সবার কাছে দাবি থাকবে, এখন নৌকার মৌসুম, এই সময়ে যতটা সম্ভব নিরাপত্তা নিয়ে চলবেন। আর সন্ধ্যার দিকে গেলে তো এখানে বেশিরভাগ নৌকার লাইট-ই নাই।’

ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি নৌপরিবহনের যারা যারা আছেন, তারা যদি আরও একটু সচেতন হন, এই ধরনের দুর্ঘটনা আরও মোকাবিলা করতে পারবেন।

এর আগে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার লইছকা বিলে যাত্রাবাহী ট্রলারের সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, ঘটনার সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

Development by: webnewsdesign.com