মোহনপুরে স্বামী-শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা, স্বামী গ্রেপ্তার

রবিবার, ১৫ আগস্ট ২০২১ | ৫:২২ অপরাহ্ণ

মোহনপুরে স্বামী-শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা, স্বামী গ্রেপ্তার
apps

রাজশাহীর মোহনপুরে যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূকে মারধর করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর মোহনপুর থানায় নারী শিশু আইনে তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে মামলা করেছেন।

ওই গৃহবধূর নাম খাদিজা খাতুন (২০)। তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামে। গৃহবধূ খাদিজার ভাষ্য, প্রায় চার বছর আগে উপজেলার মৌগাছি গ্রামের ফজলুর রহমান মাষ্টারের ছেলে নিজাম উদ্দিন (২৮) সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তাঁর স্বামীকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার দেওয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের জন্য তাঁকে ফের চাপ দিতে থাকেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন।

যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি প্রায়ই তাঁকে মারধর করতেন। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে তাঁকে শারীরিক নির্যাতনও করা হতো। সংসার করার কথা ভেবে এত দিন তিনি সব মুখ বুজে সহ্য করতেন। এখন তাঁর সহ্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

মামলার এজাহার ও পরিবার সূত্র জানায়, খাদিজার স্বামী নিজাম উদ্দিন ঢাকা চাকুরি করেন। কোরবানি ঈদের পর থেকে খাদিজা খাতুন তাঁর বাবা বাড়িতে ছিলেন। গত শুক্রবার শ্বশুর ফজলুর রহমান মাষ্টার বেড়াবাড়ি বাবার বাড়ি থেকে খাদিজাকে মৌগাছি গ্রামে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওইদিন স্বামী নিজাম উদ্দিন ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে আবারও খাদিজার কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন।

বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে স্বামী নিজাম উদ্দিন খাদিজাকে ধাক্কা মারে। এতে তাঁর মাথার পেছনে কেটে যায়। এমন পরিস্থিতিতে তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়ে নিজাম উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের লোকজন খাদিজাকে বাড়িতে আটক করে রাখেন।

গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোককন খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধারে চেষ্টা করে ব্যথ হন। নিরুপায় হয়ে তাঁরা জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করলে মোহনপুর থানা পুলিশ গিয়ে আহত অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি বিভাগে ভর্তি করান। চিকিৎসা শেষে বাবার বাড়িতে ওঠেন তিনি।

গত শনিবার রাতে খাদিজা বাদী হয়ে স্বামী নিজাম উদ্দিন (২৮), শ্বশুর ফজলুর রহমান মাষ্টার (৬০) ও শাশুড়ি নিলুফা বেগম (৪৫) নামে নারী শিশু আইনে থানায় মামলা করেন। মামলার পর রাতেই স্বামী নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক রয়েছে।

খাদিজার বাবা মোনতাজ আলী বলেন, ‘যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েটাকে প্রতিনিয়ত মারধর করা হয়। বিয়ের সময় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার দিয়েছি। এখন আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে মারধর করেছেন নিজাম উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন।’

এ বিষয়ে খাদিজাতুল বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমাকে মারধর করত তারা। শ্বশুর-শাশুড়ির কথা মতো স্বামী যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করত। তাদের ৩ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সংসার ও পুত্র সন্তানের করার কথা চিন্তা করে অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আমি এখন এর উপযুক্ত বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য নিজাম উদ্দিনের বাবা ফজলুর রহমান মাষ্টারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহম্মেদ বলেন, মামলার পর রাতেই স্বামী নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়িকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার পর রাতেই স্বামী নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Development by: webnewsdesign.com