সিলেটের শাহপরান এলাকা থেকে ১৫৪৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালাম (৩৮) ও তার সহযোগী মিঠুন কুমার দাসকে (২০) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)’র সদস্যরা। গত শুক্রবার (৬ আগষ্ট) রাতে বোরহান উদ্দিন মাজার রোড সাদিপুর-২’র নয়াগাঁও এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আবুল কালাম সিলেটের জকিগঞ্জ থানার শাহিদাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের পুত্র ও মিঠুন কুমার দাস একই থানার আমুরশীদ গ্রামের তপন কুমার দাসের পুত্র।
র্যাবের প্রেসবিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, শুক্রবার রাত সোয়া ৭ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, সদর কোম্পানী (সদর ক্যাম্প, সিলেট) এর একটি আভিযানিক দল লেঃ কর্ণেল আবু মুসা মোঃ শরীফুল ইসলাম, পিএসসি, এএসসি (অধিনায়ক র্যাব-৯), মেজর মাহফুজুর রহমান এবং অতিঃ পুলিশ সুপার সামিউল আলম,এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্সসহ এসএমপি-সিলেট এর শাহপরান (রহঃ) থানার ফোরকান উল¬া রোড,নয়াগাঁও,বোরহান উদ্দিন মাজার রোড সাদিপুর-২ এর Mother’s Shadow ভিলার ২য় তলার দক্ষিণ পাশের্^র ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও মিঠুন কুমার দাসেকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৫৪৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার ও জব্দ করে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন; ২০১৮ এর ৩৬ (১) এর ১০ (ক) ধারায় মামলা দায়ের পূর্বক গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় ও জব্দকৃত আলামতসহ এসএমপি-সিলেট শাহপরান (রহঃ) থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে ।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আবুল কালাম উরফে ইয়াবা কালাম দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন কায়দা কৌশলে বেপরোয়া ভাবে মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে আসছিল। ইয়াবা কালাম অতি সু-কৌশলে বিভিন্ন পণ্যের ভিতরে বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ভেতরে তার মাদক এর চালান পরিবহনের কাজ করে থাকতো। আর এই কৌশলের ফাঁদে পাঁ দিয়ে অনেক নিরীহ লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন, যারা কিনা জানেইনা কালাম তাদের মাদক পরিবহনে ব্যবহার করছে। ইয়াবা কালাম নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে থাকতেন, কখনো সে সাংবাদিক, কখনো সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা বা বিভিন্ন প্রসাশনিক কর্মকর্তাদের সোর্স হিসেবে নিজেকে যখন যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে নিজের পরিচয় দিতেন।
তথ্য সংগ্রহের সময় আরো জানা যায়, ইয়াবা প্রচারের সময় গলায় স্বদেশ প্রতিদিন নামক একটি দৈনিক পত্রিকার আইডি কার্ড ঝুলিয়ে রাখতেন। সিলেট নগরীতে বর্ডার এলাকা হতে যতো প্রবেশদ্বার আছে সব জায়গাতেই আইন-সৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোষ্ট ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা হয়ে থাকে, এই বাঁধা কাটিয়ে উঠার জন্য নিজেকে সাথে সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অভিযান সংক্রান্ত প্রতিবেদনের নাম করে আইন-সৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের তালিকা থেকে বাঁচার এক দারুন ফঁন্দি পেতে ছিলেন আবুল কালাম উরফে ইয়াবা কালাম।
এছাড়াও নিজেকে সুশীল সমাজে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতো সে । সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় রংমহল টাওয়ারের ২য় তলায় ২০৩ নং দোকানে অ্যাক্টিভ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে অনুমোদনহীন ও সরকারীভাবে বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অবৈধ ভাবে বিদেশে মানব পাচারসহ সহজ সরল মানুষের সাথে পাসপোর্ট, ভিসা, বিমান টিকেট, মেডিকেল সার্টিফিকেট এর নামে অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার প্রতারণার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে গেলে তাকে সে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে মাদক দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দিবেন মর্মে ভুক্তভোগিদের হুমকি প্রদান করতেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতো।
সিলেট নগরীর লালদিঘীরপাড় সিটি সুপার মার্কেটে তার আরো দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর সেখান থেকেই খুচরা বিক্রয়সহ ইয়াবার চালান আদান প্রদান এর কাজ করতো বলে জানা যায়।
সিলেট নগরীর লালদিঘীরপাড় সিটি সুপার মার্কেটে অ্যাক্টিভ প্রিন্টিং প্রেস নামে আরো একটি দোকান রয়েছে যেখানে কিনা নামমাত্রভাবে প্রেস এবং প্রেসের কোন কার্যক্রম ও মিশিনপত্র নেই মাদক সেবনকারীদের কাছে মাদক সেন্টার হিসেবে পরিচিত।
খবর নিয়ে জানা যায়, এই প্রিন্টিং প্রেস এর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ছাড়পত্র এবং তথ্য মন্ত্রনালয় এর কোন অনুমতি পত্র নেই। আবার একই মার্কেটে আরো একটি নাম মাত্র ¯œ্যাকবার রয়েছে তার, যেখানে দিনের বেলায় ইয়াবা সেবন কারীরা বা ক্রেতারা তার ¯œ্যাক বারের সামনের পানের দোকান হতে অতি কৌশলে সিগারেটের প্যাকেটের ভিতরে ইয়াবা বিক্রয় করে থাকতেন।
এছাড়াও প্রবাসী দোকান মালিকের দোকান কৌঠা দখলের অভিযোগ আছে তার উপর। সিলেট নগরীর লালদিঘীরপাড় সিটি সুপার মার্কেটে তার প্রতিষ্ঠান অ্যাক্টিভ প্রিন্টিং প্রেস এর ঠিক উপরের বরাবরে প্রবাসী মনির হোসেন এর দোকান কৌঠা ২০১৯ সালে ভাড়া নিয়ে দু-মাস ভাড়া দিলেও দোকানের নির্ধারিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ করছে না এবং দখল ও ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন দোকান মালিক প্রবাসী মনির হোসেন।
দেশে আত্মীয় স্বজন না থাকায় এবং প্রবাসে অবস্থান করার কারনে তার বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তার বিরোদ্ধে সিলেটের কোতোয়ালী থানায় অস্ত্রের মামলা রয়েছে, যার মামলা নং- ৪৯, জি.আর-৪১৫, তারিখ-৩১ শে অক্টোবর ২০১৭ ও সিলেটের কোতোয়ালী থানায় আরো একটি মামলা, যার মামলা নং- ৫০, জি.আর-৪১৬, তারিখ-৩১ শে অক্টোবর ২০১৭ এবং সিলেট শাহপরাণ (রহঃ) থানায় সর্বশেষ র্যাব-৯ এর হাতে ইয়াবাসহ আটক হওয়ার মামলা নং-৫, জি.আর-১৯৩, তারিখ- ৬ আগষ্ট ২০২১ ইং।
Development by: webnewsdesign.com