৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় মূলহোতা ঢাকা কলেজের এক ‘ছাত্রলীগ নেতা’

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৬:২১ অপরাহ্ণ

৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় মূলহোতা ঢাকা কলেজের এক ‘ছাত্রলীগ নেতা’
apps

শনির আখড়ায় দিনদুপুরে র‌্যাবের পোশাক পরে মাহমুদুল হাসান নামে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় জড়িত আরও দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন প্রাইভেটকার চালক আলমগীর খাঁ (৩৫) ও সোর্স মো. জাহাঙ্গীর ওরফে স্বাধীন। গত বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে ওই লুটের ঘটনায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী মাহমুদুল। ঘটনার ৪ দিন পর অর্থাৎ ২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় ছিনতাইয়ে জড়িত সংঘবদ্ধ ছিনতাইচক্রের দুই সদস্য-ঢাকা কলেজের ছাত্র মো. আশিক পারভেজ (২৪) ও মো. মেহেদী হাসানকে (২৫)। মামলার তদন্তে নেমে সংঘবদ্ধ এই চক্রের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পিবিআই’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা জানতে পারেন, র‌্যাবের পোশাকে টাকা লুটের ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত হালদার বাপ্পী।

গ্রেপ্তার আলমগীর ও জাহাঙ্গীর গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও ছাত্রনেতা বাপ্পির নাম উল্লেখ করেন। এর আগে গ্রেপ্তার ঢাকা কলেজের ছাত্র আশিকও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নেতা বাপ্পির নাম বলেন।

তারা সবাই জানায়, র‌্যাবের পোশাক পরে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনার আগে-পরে ঢাকা কলেজের মাঠে বসে বাপ্পি একাধিক বার তাদের সাথে টাকা লুটের ছক আঁকেন। র‌্যাবের পোশাক ও গাড়ি জোগাড় করেন মো. আলমগীর নামে একজন। ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে এসেও তারা বাপ্পির সাথে দেখা করেন। গ্রেপ্তার মেহেদীও একটি ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।

অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে গতকাল সন্ধ্যায় সুব্রত হালদার বাপ্পী আমাদের সময়কে বলেন, আমি নীতি ও আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। আমার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। তাহলে ওই লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্ন উঠে কী করে? আমি ঘটনা শুনেছি এক ছাত্রের (গ্রেপ্তার) মায়ের মাধ্যমে। ওই ছাত্র আমার গ্রামের প্রতিবেশী। রাজনীতি করি, অনেকের সাথেই পরিচয় থাকতে পারে। তাই বলে এ ধরনের একটি ঘটনায় আমাকে জড়ানোয় বিব্রত বোধ করছি। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালের বন্যার পরে গ্রেপ্তার গাড়ী চালক আলমগীর খাঁ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর টেম্পোচালক হিসেবে কাজ করেন। পরে প্রাইভেটকার চালানো শেখেন। ২০১৫ সালে রাকিব, সুমনসহ এই ছিনতাই চক্রের সাথে পরিচয় হয় তার। এরপর তাদের সাথে আগারগাও তালতলা এলাকায় একটি ডাকাতিতেও অংশ নেন আলমগীর।

ওই ঘটনার শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় এক বছর জেলেও খাটেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে একই চক্রের সাথে অপর একটি ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় পুলিশ চেকপোস্টে আটক হন। তখন ডিবির জ্যাকেট, ওয়াকিটকি ও পিস্তলসহ তাদের আটক করে পুলিশ। সেই ঘটনায় আবার গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস জেলে খেটেছেন আলমগীর।

কি ঘটেছিলো সেই দিন

গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ‘অনাবিল’ পরিবহনের একটি বাস যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ফুটওভার ব্রিজের নিচে এলে র‌্যাবের জ্যাকেটপরা পাঁচ-ছয়জন গাড়িতে ওঠেন। তারা মাহমুদুল হাসান নামে এক যুবককে জোর করে বাস থেকে নামান। মাহমুদুল রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে বাসে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন। পরে মাহমুদুলের কাছে থাকা মোবাইল এবং তিন লাখ টাকার একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাকে জোর করে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেটকারে তোলা হয়। প্রাইভেটকারে ওঠার পর মাহমদুল বারবার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন।

বাসের অন্য যাত্রী এবং পথচারীরা সবাই ঘটনাটি শুধু দেখছিলেন, কেউ এগিয়ে আসেনি। মাহমুদুলকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যখন তারা রওনা হচ্ছিলেন, তখন পাশে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন উবারচালক এসে দাঁড়িয়ে যান সামনে। র‌্যাবের পোশাকপরা ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশেই দায়িত্বে ছিলেন ট্র্যাফিক পুলিশের কনস্টেবল মো. মকবুল। গাড়ির ভেতরের চিৎকার শুনে দ্রুত এগিয়ে আসেন। র‌্যাবের জ্যাকেটপরা ওই দলটির সদস্যরা গাড়ি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যান। চালকও প্রাইভেটকারটি ফেলে রেখেই পালিয়ে যান। এরপর ট্র্যাফিক পুলিশের সহায়তায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ প্রাইভেটকারটি জব্দ করে।

Development by: webnewsdesign.com