‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ ক্যাম্পেইন ভারতে সাড়া ফেলে এক বছরেরও বেশি আগে। আর এই আন্দোলন ভারতে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করে যখন বলিউডের একাধিক তারকা তাদের সাথে হওয়া যৌন হয়রানির ঘটনা তুলে ধরতে শুরু করেন।
বলিউডে মি টু আন্দোলনের সূত্রপাত হয় যখন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত তার সাথে দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক যৌন হয়রানির অভিযোগ সামনে নিয়ে আসেন। একটি সিনেমার শুটিং চলাকালীন সহ-অভিনেতা নানা পাটেকারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন তনুশ্রী।
যদিও নানা পাটেকার সেসময় দাবি করেছিলেন যে তনুশ্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এই অভিযোগের বিরুদ্ধে কী আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে, তা খতিয়ে দেখছেন তিনি। তার পর থেকে বলিউডের সাথে অন্তত ৬০ জনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
তনুশ্রী দত্তের অভিযোগের পর বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা শিল্পী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করা শিল্পীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তবে যারা নিজেদের ঘটনা মিডিয়ার সামনে আনতে শুরু করেছিলেন শুধু তাদের পক্ষেই নন, যেসব নারীরা সামাজিক চাপ এবং কাজ না পাওয়ার আশঙ্কায় চুপ থেকেছেন, তাদের সমর্থনেও কথা বলেন অনেক অভিনেতা ও অভিনত্রেী।
“যেসব নারীরা তাদের সাথে হয়ে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশে সাহস পান না, তাদের প্রতিও পূর্ণ সহানূভুতি রয়েছে আমার”, বলেন অভিনেত্রী রাধিকা আপ্টে।
“কারণ খুব একটা পরিচিত নন এমন অনেক শিল্পীই দ্বিধা করেন এই ভেবে যে, ‘আমি এই বিষয় নিয়ে মুখ খুললেই বা কতটা পরিবর্তন আনতে পারবো।'”
আর চাকরি হারানো বা পেশাগত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে অধিকাংশ নারী এ ধরনের বিষয় প্রকাশ করতে চান না বলে মনে করেন রাধিকা আপ্টে।
হলিউডে মি টু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার পর ভুক্তভোগী নারীদের সমর্থনে তাদের পুরুষ সহকর্মীরা যেরকম অবস্থান নিয়েছিলেন, বলিউডেও সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে আন্দোলন আরো সফল হতো বলে সেসময় মন্তব্য করেছিলেন রাধিকা আপ্টে। তবে বলিউডের পুরুষ তারকাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই তাদের নারী সহকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন।
‘মি টু’ আন্দোলন সমর্থন করা অভিনেতা ফারহান আখতার মনে করেন, নারীরা এসব বিষয়ে যত বেশি সাহসী হয়ে মুখ খুলতে শুরু করবেন, তত দ্রুত নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনা মোকাবেলা করা সহজ হবে। তবে তারকাখ্যাতিতে অনেক এগিয়ে থাকলেও অনেক নারীই এ ধরণের ঘটনা জনসম্মুখে আনার ক্ষেত্রে নানা ধরণের সঙ্কোচে ভোগার কারণ ব্যাখ্যা করেন অভিনেত্রী ও মডেল কাল্কি কোয়েচিন।
“আমি যদি এখন একাট যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলি, তখন সাথে সাথেই হয়তো সেটি বড় একটি হেডলাইন হবে। কিন্তু একই সাথে পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষ আমার চরিত্র নিয়ে কাঁটাছেড়া শুরু করবে বা উল্টো আমাকেই দোষারোপ করবে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংখ্য কমেন্ট, ট্রল, কানাঘুষা দেখতে হবে আমার। একটা নারীর জন্য এরকম পরিস্থিতি সত্যিই অস্বস্তিকর।”
পরিস্থিতির কী কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
প্রযোজক ভিন্তা নন্দা গত বছর অভিযোগ তোলেন যে ১৯৯৯ সালে অভিনেতা অলক নাথ তাকে ধর্ষণ করেছিলেন।
অলক নাথের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন তিনি। জবাবে অলক নাথও অভিযোগ অস্বীকার করে মানহানির মামলা করেন ভিন্তা নন্দার বিরুদ্ধে। তবে অলক নাথকে গ্রেফতার না করেই জামিন মঞ্জুর করে আদালত। জামিন দেয়ার সময় বিচারক মন্তব্য করেন যে তাকে ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে।
ভিন্তা নন্দা মনে করেন মি টু আন্দোলনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছিল এবং এখনও সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিকই আছে। এটিকে আইনি স্বীকৃতি দিতে এখনও অনেক কাজ করতে হবে।
যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার কারণে অনেকেই কাজের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অভিনেতা ও পরিচালক কঙ্কনা সেন শর্মা।
“অপেক্ষাকৃত কম তারকাখ্যাতি সম্পন্ন বা কম ক্ষমতাশালী এমন অনেক নারীই আছেন যাদের অভিযোগ তোলার পর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে হাস্যরসের শিকারও হয়েছেন।”
কঙ্কনা বলেন, “এক্ষেত্রে আপনি কতটা ক্ষমতাশালী বা কতটা ক্ষমতাশালী মানুষের সাথে আপনার যোগাযোগ রয়েছে, তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার ভবিষ্যত কী হতে যাচ্ছে।”
তবে শীর্ষ পর্যায়ের শিল্পীরা এই আন্দোলন নিয়ে সোচ্চার হলেই কেবল এর সফলতা লাভ সম্ভব বলে মনে করেন ভিন্তা নাথ।
“বলিউডের শীর্ষ সারির শিল্পীদের অর্থ বা সম্মান হারানোর ভয় নেই। যেদিন অন্তত একজন শীর্ষ সারির শিল্পী এই আন্দোলনের সমর্থন করবে, আমি বলবো যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে।”
সূত্র : বিবিসি
Development by: webnewsdesign.com