হিলি মাদ্রাসার জমি গোপনে কম দামে বিক্রি হচ্ছে

সোমবার, ২০ জুন ২০২২ | ৩:৫৬ অপরাহ্ণ

হিলি মাদ্রাসার জমি গোপনে কম দামে বিক্রি হচ্ছে
apps

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বাংলাহিলি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আল আজিজিয়া আনওয়ারুল উলুম মাদরাসার পৌনে ৫৪ শতাংশ জমি কম দাম দেখিয়ে গোপনে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। গত আড়াই মাস আগে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এটিএম আনিছুর রহমান গংয়ের কাছে ১ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। ফলে দ্বীনিশিক্ষা এই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকৃত বাজার দরের চেয়ে কমমূল্যে জমি বিক্রি করা হয়েছে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বায়নানামা দলিল বাতিল করে প্রকাশ্যে জমি বিক্রির দাবী তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চন্ডিপুরের স্থানীয় দানশীল ব্যক্তি গুড়ি হোসেন মন্ডল গত ৪০ বছর আগে মাদরাসার উন্নয়নে ৭০ শতাংশ জমি দান করেন। এরপর থেকে দানের জমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিজেদের দখলে নিয়ে অন্যকে লীজ দেওয়া আবার কখনো নিজেরা চাষাবাদ করে আসছিলেন। এরফলে জমির আয় দিয়ে মাদরাসার ব্যয় মেটানো হচ্ছিল।

জমি বিক্রির বায়নানামা দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উপজেলার হাকিমপুর মৌজার এসএ খতিয়ান নং ২৩১, খারিজ নং ৪৪৯, হোল্ডিং নং ৪৪০, মাঠ খতিয়ান নং ৫২৬ ও ১১১২, সাবেক দাগ নং ১০৪, হাল নং ৬২৩ দাগে ধানী ৬৬ শতাংশের মধ্যে ৩১ শতাংশ এবং সাবেক দাগ নং ১০৪, হাল নং ১১১৬ দাগে ধানী ৬৬ শতাংশের মধ্যে পৌনে ২২ শতাংশ জমি মোট পৌনে ৫৩ শতাংশ জমি বাংলাহিলি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আল আজিজিয়া আনওয়ারুল উলুম মাদরাসার নামে রয়েছে। জমির মালিক মাদরাসার মুহতামিম (অধ্যক্ষ) আলহাজ¦ শামছুল হুদা খান।

তিনি চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ ওই মাদরাসার শিক্ষক ও পাশের পাঁচবিবি উপজেলার বাসিন্দা এটিএম আনিছুর রহমান গংয়ের কাছে বায়নামুলে ১ কোটি টাকায় বিক্রি করেন। এর মধ্যে নগদ বায়না দলিলের দিন মাদরাসার মুহতামিম আলহাজ¦ শামছুল হুদা খান নগদ ৪৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যার দলিল নং ৮৪৭/২২ আগামী ৪/৫ মাসের মধ্যে বাকী ৫৫ লাখ টাকা পরিশোধের শর্তে দলিল করে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, থানা রোড থেকে ২০০ গজ পূর্বে এবং আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের পশ্চিমের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে জমিটির অবস্থান। আবার দক্ষিণ পাশে পৌরসভার কার্যালয়। জমির আশ-পাশে সরকারের আরও দুই কার্যালয় সহ সুউচ্চ দালানঘর গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ওই এলাকাটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য হওয়ায় জমির দাম হিলির অন্য এলাকার চেয়ে বেশি।

স্থানীয় ভাবে জমি বেচা-কেনায় সংশ্লিষ্ট সারোয়ার হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এলাকা হিসেবে জমির দাম কম-বেশি হয়। কিন্তু মাদরাসার জমিটি যে দামে বিক্রি করা হয়েছে তা অনেক কম। ওই এলাকায় বর্তমানে প্রতি শতাংশ জমি ১০ লাখের উপরে। তবে মাদরাসার জমি থানা রোড থেকে ২০০-২৫০ গজ ভিতরে। একারণে ৫ লাখের নীচে হবে না।

জমির পাশে কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, যে জমিটি কিনেছে, সেই লোক আমাদের এসে বলে জমিটি প্লট আকারে বিক্রি করব। আপনারা নিতে চাইলে প্রতি শতাংশ ৪ লাখ পড়বে। হলে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। আমরা এবিষয়ে কোন মন্তব্য করিনি।

এবিষয়ে হিলি আল-আজিজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক শামসুল হুদা খানের নিকট জমি বিক্রির বিধান জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং বলেন, তোমরা কে? কেন তোমাদের নিকট জমির বিক্রির বিষয়ে বলবো? তোমাদের কাছে এবিষয়ে কিছুই বলবো না। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, জমিটি এক কোটি টাকার প্যাকেজ করেছি। এক জন এই প্যাকেজটি ক্রয় করেছেন, তার নিকট বায়নাপত্র হয়ে গিয়েছে। তবে তিনি কার নিকট এক কোটি টাকা দিয়ে জমিটি বিক্রয় করছেন, তা আড়াল করে রাখেন।

Development by: webnewsdesign.com