বরগুনায় এক সময় খেজুরের রসের জন্য বিখ্যাত থাকলেও কালের বিবর্তনে তা বিলুপ্তির পথে। প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বরিশালের খেজুরের রস ও গুড়ের কদর রয়েছে বেশ। পাটালি গুড় ভাঙলে কাচা রসের মদিরা গন্ধ এবং লাল-খয়েরী স্ফটিকের মতো রং আর অতুলনীয় স্বাদ, এই ছিল বরগুনার খেজুরের গুড়ের আদি আকর্ষণ। অথচ কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম থেকে খেজুর গাছ। লোভনীয় খেজুরের রস ও গুড় এক কথায় খেজুর গাছের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সচেতন মহল।
খেজুর গাছ একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। অন্যদিকে শীতের মৌসুমে মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও লোভনীয় খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে হরেক রকমের পিঠা খাওয়ার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।বরগুনার প্রতিটি গ্রাম মেঠো পথে এক সময়ে সারিবাঁধা খেজুর গাছ দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই অসংখ্য হারে দেখা যেত। খেজুর গাছের গ্রাম বাংলার নয়ানোভিরাম সেই পরিবেশ ও ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারীভাবে খেজুর গাছরে চারা রোপনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে নতুন করে ফিরে পেতে পারে বিলুপ্তি হওয়া ঐতিহ্য ও নয়ানোভিরাম সেই পরিবেশ। আর নতুন প্রজন্ম খুজে পাবে খেজুরে রস ও গুড়ের আসল গন্ধ। বর্তমান বাজারে যে সমস্ত খেজুরের গুড় পাওয়া যায় তার অধিকাংশই চিনি, ক্যামিক্যাল ও রং দিয়ে তৈরী।
গ্রামের বয়জষ্ঠ কর্মজীবী তুহিন খান বলেন, গ্রাম্য মেঠো পথে রাস্তার দুই পাশে আগে হাজার হাজার খেজুর গাছ ছিলো, সকাল হলে তাপাল ভরে সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করা হতো এখন আর তা দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, সরকারী উদ্যোগে খেজুরের চারা রোপন ও পরিচর্যার কর্মসূচি গ্রহণ করলে নতুন প্রজন্মের কাছে খেজুরের রসের পরিচিত থাকবে ।
শিংড়াবুনিয়া গ্রামের গাছি সহিদুল ইসলাম বলেন, আগে শীতের শুরুতেই গাছ কাটার কর্মজজ্ঞ শুরু হত। প্রচুর গাছ ছিলো। সকালে কলসভর্তি রস নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন আর গাছও নেই আর রসও নাই। তাই পেশা পরিবর্তন করে ব্যবসা শুরু করেছি।
বরগুনার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, খেঁজুর গাছ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যে এলাকায় খেজুর ও তাল গাছ যত বেশি সেই এলাকায় বজ্রপাতের সংখ্যা অনেক কম হয়। কারণ খেজুর ও তাল গাছ অনেক লম্বা হয়। ফলে বজ্রপাত মাটিতে আছড়ে পড়ার আগে গাছের মাথার সাথে আঘাত হানে এতে অনেকাংশে বজ্রপাত ধংস হয়ে যায় ফলে মানুষের তেমন কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয় না। আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামের-গ্রামবাসীকে খেজুর গাছের চারা রোপন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকি।
Development by: webnewsdesign.com