দিনে দিনে দিন বদলাচ্ছে সৌদি নারীদের। পরিবর্তনের জোয়ারে ভাঙছে রক্ষণশীল দেয়াল। হাব-ভাব, আচার-আচরণ সব কিছুতেই হাওয়া বদলের দোল। শুরুর ঝাপটাটা প্রথম লাগে উনিশ সালে। গত এক বছরে আরও রঙিন হয়ে ওঠে সে ‘শিকল ভাঙা’ ঝড়। সৌদি নারীদের কথা উঠলেই সবার আগে স্মৃতিতে যে কালো আবায়া পরিহিত আপাদমস্তক চিত্র ভেসে উঠত, তাতে এখন রং লেগেছে। পোশাক-পরিচ্ছদে লেগেছে পশ্চিমা ফ্যাশনের তেজ। পায়জামা, আবায়া ও ড্রেসআপে এসেছে বিরাট পরিবর্তন।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) হাত ধরে ২০১৯ সালে আধুনিক পথচলা শুরু হয় সৌদি আরবের। নারীরা গাড়ি চালাতে, চাকরি ও ব্যবসা করতে পারেন। এমনকি স্বামী ও অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া হোটেলেও থাকতে পারেন। মিডলইস্ট আই, সালামগেটওয়ে ডটকম।
২০১৯-এর পরিবর্তন ২০২০ সালে আরও বিস্তার লাভ করেছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাদের পোশাকে। বিশেষত নিজের কাজের সঙ্গে ফিট ও রং-বেরঙের আবায়া সরিয়ে দিচ্ছে কালোর আবায়ার আধিপত্যকে।
পোশাকে নিজেদের স্বাধীনতার প্রমাণ দিচ্ছেন ফ্যাশন সচেতন সৌদি তরুণীরা। কালো থেকে বের হয়ে বিভিন্ন রং ও স্টাইলের দিকে ঝুঁকছেন তারা। দৈনন্দিন ব্যবহারের পোশাকেও এসেছে পরিবর্তন। আবায়ার ভেতর জিন্স-শর্টস পরা এখন স্বাভাবিক বিষয়।
নতুন স্টাইল জায়গা করে নিচ্ছে পার্টি ড্রেসেও। আবায়াকেই অনেকে করে নিয়েছেন ড্রেসের মতো। খোলামেলা আবায়া ও কাফতান আবায়ার চল শুরু হয়েছে। এসেছে শর্ট আবায়ারও প্রচলন।
কর্মজীবী নারীদের মধ্যে বেশি প্রিয় শর্ট আবায়া। এতে অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারে ও গাড়ির সিটে আটকে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকতে হয় না। সাধারণ মানুষের পছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজাইনাররাও তাদের ক্যানভাসে এনেছে নতুন নতুন ডিজাইন। আকিল নামের এক নারী বলেন, ‘আমি এখন যেটা দেখছি সেটা হচ্ছে আবায়া শিফটিং। বাড়তি পর্দা মনে না হয়ে সেগুলোকে এখন মনে হয় ড্রেস।
কাফতান, স্বল্পদীর্ঘ ও শর্ট স্লিভস আবায়া দেখে এখন আর সেগুলোকে ইউনিফর্ম মনে হয় না। এত বৈচিত্র্য এসেছে যে, সেগুলো দেখে আবায়া বা মেক্সি বলব, নাকি কোট বলব- দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়।’
মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম ফ্যাশন ইতিহাস আর্কাইভ ঝেই ইনিশিয়েটিভের সৌদি আরবের স্ট্রিট স্টাইল শিরোনামের ওয়েবিনারে আরেক নারী মোসাল্লি বলেন, ‘ফ্যাশন হচ্ছে মহান ইতিহাস কথক। এখন আমরা আমাদের ফ্যাশন বাছাই করতে সক্ষম। আমরা দেখি কিভাবে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসছে। সৌদি আরবের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও মজার। কারণ আমাদের আছে আবায়া। আপনি সহজেই পরিবর্তনটা ধরে ফেলতে পারবেন।’ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বানানো হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের আবায়া। পৃথক অনুষ্ঠানের জন্য পৃথক আবায়া পরিধানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালে।
গাউন স্টাইল, পশ্চিমা নারীদের কোটের মতো করে বানানো আবায়া রয়েছে পছন্দের তালিকায়। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বে নারীরা যেমন পছন্দের মানুষ বা তারকার ছবি সংবলিত টি-শার্ট পরেন, সৌদি নারীরা তেমনই পছন্দের মানুষের ছবি সংবলিত আবায়ার প্রতি ঝুঁকছেন। আবায়ার সঙ্গে মিল রেখে নেকাব/মাস্কেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।
মাস্ক স্টাইলের, পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের নেকাবের পাশাপাশি আগের হাত মোজার জায়গায় স্থান পেয়েছে গ্লাভস। এছাড়া নিত্যনতুন স্টাইল ও নতুন ধরনের কাপড়ও স্থান করে নিচ্ছে মানুষের পছন্দের তালিকায়। এতে অ্যাপারেল ও ফুটওয়ারে মুসলিম বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সৌদি। ২০১৯ সালে এ খাতে দুই হাজার ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন সৌদিরা।
Development by: webnewsdesign.com