মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজ সৃষ্টির শুরু থেকেই সামাজিক সমস্যাগুলো দেখতে পাই।সমাজ ও সামাজিক সমস্যা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আর সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার ও পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে পথশিশুদের নিয়ে সমস্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো আমাদের দেশ ও পথশিশু রয়েছে। কথায় আছে বন্যেরা বনে আর সুন্দর শিশুরা মাতৃকোলে। ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের কোল ছেড়ে পরিবার ছেড়ে শিশুরা যখন অজানা পথে পা বাড়ায় তখনই তার নাম হয় পথ শিশু।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু আমার রাস্তাঘাট, শপিংমল, বিমানবন্দর, রেইলস্টশন, গ্রামে, কিংবা শহরে অনেক জায়গাতেই পথশিশু দেখতে পাই। যেই সময়ে একজন শিশু বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা সেই সময়ে শিশুদের দেখতে পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে কাগজ কুড়াচ্ছে কিংবা ভিক্ষা করছে। পথশিশুরা একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুড়ে বেড়ায়। তাদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নেই। পথশিশুরা যেখানে খুশি সেখানে চলাফেরা করে বিশেষ করে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে, শাহাবাগ, ফার্মগেট, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অনেক পথশিশু দেখা যায়।
অবহেলা, অসহায় এই শব্দগুলো যেনো পথশিশুদের জীবনের সাথে জড়িত। তারা ঠিক মতো খেতে পারে না, ভালো কাপড়চোপড় পড়তে পারে নাহ,তাদের মধ্যে শিক্ষার কোনো আলো নেই। একজন মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই মৌলিক অধিকার গুলো পেয়ে থাকে।ভকিন্তু পথশিশুরা এই অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশ স্বাধীন দেশ। স্বাধীন দেশে পথশিশুদের ও মৌলিক অধিকারগুলোর সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেড়ে উঠার অধিকার আছে।
দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায় প্রতিটি শিশুর দ্বায়িত্ব কোন না কোন ভাবে রাষ্ট্র পালন করে থাকে। প্রত্যেক শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে পথশিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পথশিশুরা বেশির ভাগ অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত, যৌনরোগ, সবথেকে বেশি ভয়াবহ মাদকে আসক্তি। এর মূল কারন হলো পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার কোনো প্রসার নেই।
একজন পথশিশু চাইলেই কোনো পাঠশালায় যেতে পারে নাহ। তাই পথশিশুর শিক্ষার ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের ও সচেতন হতে হবে। পথশিশুদের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, চিওবিনোদন মূলক কার্যক্রম, অপসংস্কৃতিরোধ, মাদকের ভয়াবহতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
বিআইডিএস ও ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, আমাদের দেশে গ্রামে ও শহরে উভয় জায়গা মিলিয়ে ৯ লাখের মতো পথশিশু রয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে পথ শিশুর ৮৫ভাগ শিশু কোনো না কোনো ভাবে মাদকের নেশায় জড়িত। তার মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ইয়াবা বা ট্যাবলেট জাতীয়, ৮ শতাংশ ইনজেশন মাধ্যমে নেশা করে থাকে। বেশিরভাগ পথশিশু ১০-১৭ বছরের মধ্যেই বেশি মাদকাসক্ত হয়। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে ৩ লাখের ও বেশি পথ শিশু।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর তথ্য মতে, অন্য সব বিভাগের তুলনায় ঢাকা বিভাগেই মাদকাসক্ত ছেলের সংখ্যা ৩০ শতাংশ এবং মেয়ের সংখ্যা ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের পথশিশু নিয়ে ১৭টি এনজিও নানামুখী কাজ করে গেছে। তাছাড়া বেশকিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজ উদ্যেগে পথশিশুদের কল্যানে কাজ করে গেছে। সরকার পথ শিশুদের নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম নামে একটি কার্যক্রম পরিচালনা করে গেছে।
পথশিশুদের সঠিক তদারকি না করলে একটা সময় দেখা যাবে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়বে যা একটি দেশের সমৃদ্ধির জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়বে। পথশিশুদের নানা অধিকার ও সুরক্ষা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের উচিত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রতিটি পথ শিশুর অন্ধকারময় জীবন থেকে আলোকিত জীবনের প্রসার ঘটানো।
বিথী রানী মন্ডল
শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিচার, কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স
Development by: webnewsdesign.com