সিলেট-১ আসন থেকে লড়তে নারাজ বাবুল

বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৫:১৮ অপরাহ্ণ

সিলেট-১ আসন থেকে লড়তে নারাজ বাবুল
apps

দেশের সংসদীয় বিরোধীদল জাতীয় পার্টি সোমবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকাতে সিলেট-১ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুলকে। এর আগে বাবুল সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে শক্ত লড়াই করেছিলেন। কিন্তু সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে খুশি নয় নজরুল ইসলাম বাবুল।

তিনি দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি মাত্র ১টি মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। দলের অন্যরা একাধিক আসনে মনোনয়ন চাইলেও তিনি শুধুমাত্র সিলেট-৩ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু সোমবার বিকেলে দলীয় মহাসচিব জানালেন তার দল তাকে সিলেট-১ আসনে লড়তে টিকিট দিয়েছে। এতে তিনি নাখোশ হয়েছেন। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যথায় তাকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে বলে তিনি জানান। মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরে বিসিক শিল্পনগরীতে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এমন প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি বলেন, আমি এই সিলেটেরই সন্তান। দক্ষিণ সুরমায় আমার আদি নিবাস। সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের উন্নয়ন, সংস্কার এবং জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হই। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ব্যাপকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করি। কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মূলদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও জেলা কমিটি গঠন করি। বিগত মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সিলেটসহ গোটা জেলাতে জাতীয় পার্টির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলি।

নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করার পর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ২৮৯টি আসনে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন। এর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট-৩ আসনের অন্তর্গত তিনটি উপজেলার জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীবৃন্দ এবং দলমত নির্বিশেষ সাধারণ মানুষ আমাকে সিলেট-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনের অনুরোধ জানান। তাদের জোরালো অনুরোধে আমি শুধুই সিলেট-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

তিনি বলেন, এর আগে আমিও ব্যক্তিগতভাবে মেয়র নির্বাচনের আগে বিগত সংসদ নির্বাচনেও সিলেট-৩ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু পরে আমাকে মেয়র পদে অংশ নিতে বলা হল। দলের নির্দেশ মেনে মেয়র পদে লড়েছি।

শুধু রাজনীতি নয় ব্যবসায়িক কারণ এবং বাপ-দাদার আদি নিবাস সিলেট-৩ আসন উল্লেখ করে বাবুল বলেন, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ এই তিন উপজেলার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। তারা চান আমি যেনো তাদের জন্য কাজ করি। উপজেলাগুলোতে জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও চান আমি যেনো সিলেট-৩ আসনেই লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হই। তাদের এমন জোরালো দাবি ও অনুরোধে আমি শুধুমাত্র সিলেট-৩ আসনেরই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে সেটি জমা দিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সোমবার বিকেলে জানানো হলো আমি সিলেট মহানগর ও দক্ষিণ সুরমার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের প্রার্থী। বিষয়টি আমাকে অনেক ব্যথিত করেছে। আমি মনেকরি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে কোনোও একটি মহল ভুল বুঝিয়েছে।

বাবুল জানান, অজ্ঞাত কারণে সিলেট-৩ আসনের পরিবর্তে সিলেট -১ আসনে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত জানতে পেরে আমি সেদিনই দলের চেয়ারম্যান জি. এম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। আমি মনেকরি আমার নির্বাচনী এলাকা সিলেট-৩’র পরিবর্তে সিলেট-১-এ মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। তারা এখানকার অবস্থা সম্পর্কে অবগত না হয়েই এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যা দলের ভবিষ্যত এবং আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য চরমভাবে ক্ষতির কারণ।

বিগত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরির কারিগর নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমি বিগতদিনে সিটি নির্বাচনে লড়েছি। দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে সিলেটের জেলার প্রতিটি উপজেলাতে জাতীয় পার্টির হারানো জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছি। মাঠের রাজনীতি সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। কোন আসনে আমি যোগ্য সেটি আমি ভালোভাবেই জেনে-বুঝেই মনোনয়ন চেয়েছি। এখন অন্য আসনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া মানে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করা।

প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এ সময় মুজিবুল হক চুন্নু সিলেটের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করেন। সিলেটের প্রার্থীরা হলেন, প্রার্থীরা হলেন সিলেট-১ আসেন নজরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট-২ আসনে মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, সিলেট-৩ আসনে আতিকুর রহমান আতিক, সিলেট-৪ আসনে এটি এম তাজ রহমান, সিলেট-৫ আসনে সাব্বির আহমদ ও সিলেট-৬ আসনে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তবে মঙ্গলবার সিলেট-২ আসনে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। লামা অসুস্থ থাকায় সেখানে নতুন করে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী।

এছাড়া সিলেট জেলার অন্যান্য জেলার মধ্যে মৌলভীবাজারে জাপার মনোনয়ন প্রাপ্তরা হচ্ছেন মৌলভীবাজার-১ আসনে আহম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ আব্দুল মালিক, মৌলভীবাজার-৩ রুহুল আমিন। হবিগঞ্জে জাপার মনোনয়ন প্রাপ্তরা হলেন হবিগঞ্জ-১ এম.এ. মুনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ-৩ আব্দুল মুমিন চৌধুরী, হবিগঞ্জ-৪ আহাদ উদ্দিন চৌধুরী শাহীন। সুনামগঞ্জ-১ আসনে মো. আব্দুল মান্নান তালুকদার, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে নাজমুল হুদা হিমেল মনোনয়ন পেয়েছেন।

সূত্র : একাত্তরের কথা

Development by: webnewsdesign.com