ফলোআপ...........

সিলেটে ২ বোনের উদ্ধার হওয়া লাশের রহস্য ৩দিনেও উদঘাটন হয়নি

বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৬:৪৭ অপরাহ্ণ

সিলেটে ২ বোনের উদ্ধার হওয়া লাশের রহস্য ৩দিনেও উদঘাটন হয়নি
apps

সিলেট নগরীর মজুমদারি এলাকার কোনাপাড়া ৩১ নম্বর বাসার ছাদ থেকে দুই বোনের উদ্ধার হওয়া লাশের রহস্য ৩দিনেও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে ধারণা করা হলেও রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার সকালে ওই বাসার ছাদ থেকে রানী বেগম (৩৮) ও ফাতেমা বেগম (২৭) নামের আপন দুই বোনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা কোনাপাড়া ৩১ নম্বর বাসার ৩১নং বাসার কলিম উল্লাহর মেয়ে।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৬ টার দিকে আশপাশের লোকজন জানালা দিয়ে দুই বোনের লাশ বাসার ছাদের রডে ঝুলতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দুই বোনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে রাতে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত দুই বোনের মধ্যে রানী বেগম বড় ও ফাতেমা বেগম ছোট। এর মধ্যে রানী বেগম নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা এবং ফাতেমা বেগম অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এই বাসায় তাদের মা, দুই ভাই ও তারা তিন বোন থাকতেন। এক বোন বিয়ের পর যুক্তরাজ্যে চলে যান। প্রবাসী ওই বোনের টাকায় চলতো তাদের সংসার।

স্থানীয়রা জানান, তাদের পরিবারের সব সদস্যই চাপা স্বভাবের ছিলেন। তাদের সঙ্গে আত্বীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের যোগাযোগ কম ছিল। তাছাড়া তাদের পরিবারে কলহ লেগেই থাকতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম বলেন, দুই বোনের লাশ উদ্ধারের পর প্রতিবেশী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে যেটুকু জানা গেছে, তাতে বিয়ে শাদি নিয়ে তাদের মধ্যে একটা হতাশা থাকতে পারে। তাদের অনেক বয়স হলেও বিয়ে হচ্ছিল না।

আজবাহার আলী শেখ আরও বলেন, তাছাড়া, তারা নানা কারণে অনেকটা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। দু’বোনের মৃত্যুর পেছনে ভূমি সংক্রান্ত কারণও থাকতে পারে। তবে, আমরা এখনই কোনো বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত প্রয়ােজন।
এদিকে, রানী ও ফাতেমার লাশ উদ্ধারের পর তাদের ভাই শেখ রাজন বলন, বিয়ের আলাপ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ‘রাগ ও ক্ষোভ’ থেকে এই চূড়ান্ত পথ বেছে নিতে পারেন তারা। এর মধ্যে রাণীর প্ররোচণায় ফাতেমা আত্মহত্যা করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রানী ও ফাতেমা ঘরে দরজা লাগিয়ে শুধু ক্রাইম পেট্রলসহ বিদেশি টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো দেখতেন এমনটি উল্লেখ করে রাজন বলেন, একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল গত রবিবার। বরের বয়স একটু বেশি, পঞ্চাশ। লন্ডনি, দুই বাচ্চার বাবা। সে (রানী) বিয়েতে রাজি নয়, ঘরে ঝগড়া করছিল। আমরা তাকে বলি- বিয়ের প্রস্তাব মাত্র এসেছে, বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি। আস্তে আস্তে কনে দেখাবো হলে হলো, না হলে নাই।

রাজন বলেন, এ নিয়ে সে ঝগড়া করে মায়ের সাথে। বোনের সাথেও ঝগড়া করে। গত সোমবার ঝগড়া করে সে চাচার বাসায় (একই এলাকায়) চলে যায়। প্রায়ই ঝগড়া হলে এভাবে চাচার বাসায় চলে যায়, সেখানে থেকে আসে। আমরা ভেবেছি, চাচার বাসা থেকে সে সকালে আসবে। এই পর্যন্ত আমাদের শেষ।

তিনি আরও বলেন, সোমবার ভোর ৫টায় পাশের বাসা থেকে ডাকাডাকি করে বলে, আমাদের ছাদে মানুষ লটকে আছে। তখন আমরা দৌড়ে ছাদে যাই। গিয়ে দেখি দুজনের ঝুলন্ত মরদেহ। আমি মরদেহ নিচে নামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই বলেন, পুলিশ আসুক।

এক প্রশ্নের জবাবে রাজন বলেন, তারা রাগ করে এমন কাজ করেছে। আমার যে বড় বোন রানী, তার খুব বেশি রাগ। তার মাথায় সমস্যা আছে। সে ভালো মানুষ এলেও ঝগড়া করে, আত্মীয়স্বজন এলে ঝগড়া করে। ডাক্তার বলেছে তার মাথায় সমস্যা, তাকে নিয়ে কেউ কোথাও যেও না। সে (রানী) আমার আরেক বোনকে (ফাতেমা) নিয়ে মরার কথা বলেছিল। সে বলেছিল, মরবো যখন গা-ঘর জ্বালিয়ে মরবো। বিয়ের আলাপ আসায় তার হিংসে ঢুকেছে যে, আমি বিয়ে করবো কেন। তার মাথা গরম হয়ে যায়। সে নিজে নিজে ফাঁসি লাগিয়ে আমার বোনকে নিয়ে মরেছে।

গতকাল বুধবার এসএমপি’র এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা হয়নি। তবে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে কাউকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসতে পারে। তবে তিনি বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com