সিলেটকাণ্ড ছাত্রলীগের কেউ নন বলে দাবি- লেখক

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

সিলেটকাণ্ড ছাত্রলীগের কেউ নন বলে দাবি- লেখক
apps

সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের পরিচয়ে নানা অপকর্ম করে এলেও তাঁরা আসলে ছাত্রলীগের কেউ নন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। গতকাল সোমবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যই একটি গোষ্ঠী ছাত্রলীগের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।

এমসি কলেজে ধর্ষকদের ছাত্রলীগ পরিচয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটা শুধু অভিযোগ। এরা যদি ছাত্রলীগের কোনো পদে থাকত তাহলে বুঝতাম। ছাত্রলীগে তাদের কোনো পদ নেই। এমনকি ছাত্রলীগ করতে হলে যে সাধারণ যোগ্যতাগুলো থাকা দরকার, সেগুলোও তাদের নেই। তাদের তো ছাত্রলীগ করার বয়সই নেই। তাহলে কী করে তাদের ছাত্রলীগের কর্মী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

ধর্ষকরা কিভাবে এত দিন ধরে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে আসছিলেন জানতে চাইলে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, সেটা আমারও প্রশ্ন। কলেজের শিক্ষক বলছেন ওরা ছাত্রলীগ করত। এখন ওই শিক্ষকের কাছে আমার প্রশ্ন-তাঁরা কি কখনো আমাদেরকে কিংবা স্থানীয় নেতাদেরকে বলেছেন যে ওই অপকর্মকারীরা ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে? তাঁরা কি কখনো আমাদের জানিয়েছেন যে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসে এগুলো করছে? একজন হোস্টেল সুপারের বাংলোতে কিভাবে জোর করে ওই ধর্ষকরা ছিল? এটা কিভাবে সম্ভব? এটা তো আমরাও পারি না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও তো এভাবে থাকতে পারি না।

এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ওখানে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। কমিটি দেওয়ার পরিবেশও নেই। ওখানে তো শিবিরের নেতাকর্মীরা কয়েক দিন পর পর প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে থাকে। কমিটি করার পরিবেশ নেই বলেই হয়তো বিগত দিনে যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিল, তারা উপযুক্ত কারণেই কমিটি বিলুপ্ত করেছে।

লেখক ভট্টাচার্য বলেন, একটা মানুষ, যাদের ছাত্রলীগ করার ভ্যালিডিটি নেই; তারা সারা জীবন যদি ওখানে বসে থাকে তাহলেও কোনো কমিটির নেতা হতে পারবে না। তাকে কী জন্য ছাত্রলীগ বানানোর চেষ্টা হচ্ছে? তিনি বলেন, ধর্ষকদের ছাত্রলীগের নাম দিয়ে চারদিকে সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু একটি সংগঠনের শীর্ষ নেতা ধর্ষণ করলেন। তাঁকে সেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো। কিন্তু তা নিয়ে কোনো লেখালেখি নাই।

এমসি কলেজে ধর্ষণে যুক্তরা ছাত্রলীগের কেউ নন বলছেন, তাহলে ওই ঘটনার দায় ছাত্রলীগের ওপর কেন আসছে-এই প্রশ্নের উত্তরে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর সব সময় দায় চাপানো হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় কলম সন্ত্রাসের শিকার হয়। তাদের যত দিন না বোধোদয় হবে তত দিন এ থেকে মুক্তি নেই। সত্যের বিপরীতে নানা অভিযোগ ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কারো অপকর্মের জন্য সংগঠনকে আক্রমণ করা কাম্য নয়। যে সংগঠনের হাত ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে, সেই সংগঠনের বিরুদ্ধে কিছু লেখার আগে নিশ্চিত হয়ে লিখতে হবে। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকদের লেখা উচিত।

লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যারা ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত এদের তো নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাই নেই। তারা যদি ধর্ষণ না-ও করত তার পরও নেতৃত্বে আসতে পারত না। অথচ তাদের ছাত্রলীগ বলে আপনারা কেন চালাচ্ছেন? আমাদের একটা নির্দিষ্ট চেইন আছে। এর বাইরের লোকের দায়িত্ব আমরা কেন নেব?

পদে না থেকেও ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছে, তাদের প্রসঙ্গে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা। সেখানকার কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এমন তো কোনো উদাহরণ নেই যে ওই সব অপকর্মকারীর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে, আর আমরা সেটার বিরোধিতা করেছি। যার ছাত্রলীগ করার যোগ্যতা নেই, তাদের ক্যাম্পাসে রাখতে তো আমরা কখনো সুপারিশ করিনি।

তিনি বলেন, ‘যারা ধর্ষণ করেছে তাদের জেল হলো কি ফাঁসি হলো তা নিয়ে মানুষের কিছু যায় আসে না। তাদের যায় আসে তারা ছাত্রলীগ করে কি না! এটা পরিকল্পিত আক্রমণ।

বছরখানেক আগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর সভাপতি হন আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক হন লেখক ভট্টাচার্য। দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কাজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘অনেক কাজ করে যাচ্ছি। বিগত কয়েক মাসে আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটি নিয়ে কোনো বিতর্ক ওঠেনি। পদধারী কেউ কোনো বিতর্কে নেই। যারা সংগঠনের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের ইতিমধ্যে আমরা বাদ দিয়েছি।

Development by: webnewsdesign.com