সাগরের বুকে ভাসল দুশতাধিক রোহিঙ্গার লাশ

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ৭:০০ অপরাহ্ণ

সাগরের বুকে ভাসল দুশতাধিক রোহিঙ্গার লাশ
apps

উত্তাল সাগরের বুক চিড়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়াটা রোহিঙ্গাদের কাছে যেন এক স্বপ্নের যাত্রা। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে গত একবছরে সাগরে ডুবে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০২০ সালেই এমন নির্মম পরিণতি ঘটে এসব শরণার্থীদের ভাগ্যে।

ক্যাম্পে থাকা বেশিরভাগ রোহিঙ্গাদের নজর থাকে মালয়েশিয়া। তাদের জন্য বৈধ পথে যাওয়ার কোন সুযোগ না থাকায় অবৈধ পথই বেছে নিচ্ছেন তারা। বিশেষ করে নারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। উন্নত জীবনের খোঁজে দালালের খপ্পরে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এই সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক যাত্রা’ অ্যাখা দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর বলছে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে যারা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বিপজ্জনক ভ্রমণ করেছেন তাদের বেশিরভাগ শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তাদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বিবিসি বলছে, এসব রোহিঙ্গাদের মেরে সাগরে ভাসিয়ে দিতে পারে দালালরা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কোভিড পরিস্থিতির সুযোগে যারা রাতের আঁধারে শরণার্থী ক্যাম্প ছেড়ে সাগরে দালালের নৌকায় গা ভাসিয়ে ছিল, অনাহারে তাদের মৃত্যু হয়েছে। অন্যথায় কোভিড পরিস্থিতিতে দেশগুলোর সীমান্তে কড়াকড়ি পাহাড়া বসানোয় চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই সাগরে মৃত্যু হয় তাদের।

অনেক শরণার্থী রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া অথবা অন্য কোন দেশে সাগর পথে অবৈধভাবে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এই সুযোগ নিয়ে দালালরা অন্যদের সহজেই প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হন।

বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে পালাতে গিয়ে দালালসহ বিভিন্ন সময় আটক হয়েছেন অনেক রোহিঙ্গা। ২০১৯ সালের মে মাসে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ থেকে ৫৫ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। এদের মধ্যে ৩১ নারী, ১৪ পুরুষ ও ১০ শিশু ছিল।

রাখাইন, শানসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের মুখে জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। টেকনাফ এবং উখিয়ায় ৩০টির বেশি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছেন তারা। কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে তাদের নারীদের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। দালালরাও রোহিঙ্গাদেরকেই টার্গেট করছে।

Development by: webnewsdesign.com