বাংলাদেশে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে জোট সরকারের আমলে সাপ্তাহিক ছুটি একদিনের পরিবর্তে শুক্র ও শনি দু’দিন ছুটি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয় । তখনকার সরকারের মতে, এতে করে সরকারী কর্মচারীদের কাজে উদ্যম-স্পৃহা সৃষ্টি হবে, তাদের ব্যবহৃত টেলিফোন ও জ্বালানি বাবদ খরচের সাশ্রয় হবে।
কিন্তু ব্যবসায়ী মহল এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তাদের দাবীকে সরলীকরণ করলে দাঁড়ায়, শুক্র-শনিবার ছুটি ব্যবসার জন্য ব্যপক ক্ষতিকর, বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে তিনদিনের জন্য সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ফলে শনিবার ছুটির পরিবর্তন করে শুধু রবিবার করার ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেছিলেন।
তাদের ভাষায় শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশের ছুটি অন্যদিকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ছুটি রোববার হওয়ায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তিন দিনের একটা দুরত্ব তৈরি হয়। তাদের যুক্তি শুক্র-শনি দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি হলে বাংলাদেশ তিন দিনের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে গোটা অর্থনীতিতে। এর ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে যায়, ব্যাহত হবে উৎপাদন।
সপ্তাহে শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় সরকারী কর্মকর্তার প্রায় ১৪ লক্ষ জনবল অলস সময় পার করেন যার কারণে পিছু টানছে আরোও ১৭ কোটি জনগণের দৈনন্দিন কর্ম সুবিধা। কারণ সাপ্তাহে ২দিন বন্ধ থাকলে মাসে ৮দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারী অফিস ও দপ্তর গুলোর বিশেষ বিশেষ কার্যক্রম। বিশেষ করে কোর্ট-কাচারী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সেবা, ব্যাংকিং সেবা, সাবরেজিষ্টার সেবা, বিদেশগামী পাসপোর্ট সেবা, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা সহ সরকারী বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠান এর কর্মকর্তা ও কর্মচারী কতৃক প্রদানকৃত সেবা সমূহ।
বিশ্বের উন্নতশীল দেশ গুলো যদি সাপ্তাহ একদিন সরকারী ছুটি হিসেবে বন্ধ থাকে তাহলে বাংলাদেশে এর মতো নি¤œ আয়ের দেশ হিসেবে আমরা কি করে সাপ্তাহে দুই দিন ছুটি কাটাই। সপ্তাহে দুই দিন ছুটি না কাটিয়ে সপ্তাহে একদিন ছুটি কাটালেও সরকার আনুমানিক ১৪ লক্ষ সরকারী কর্মকর্তাদের অলস সময়ের বেতন ভুর্তিকি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সেবা আদায় করতে পারছে। যা বছর শেষে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অলস দিনের সেবা খাতে ভুর্তিকি থেকে রক্ষা পাবে এবং সেবা প্রত্যাশি নাগরিকও সপ্তাহে ১দিন বেশী বিভিন্ন সেবা উপভোগ করতে পারবেন এমনকি সরকার এসব বিভিন্ন সেবা থেকে আরো বেশী অর্থ-বছরের দিন হিসেবে রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
বর্তমান সময়ে আমাদের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সবারই অনেক সুখ ত্যাগ করে সৎ ইচ্ছা ও সৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ বর্তমানে পেট্রল ও ডিজেল এর সংকটের কারনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সেবা যেমন সংকট দেখা দিয়েছে তেমনি আর্থনীতির ও বেশ ভালো একটা সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার নানা ভাবে অর্থনীতির সংকট গোপন রাখার চেষ্টা করলেও দিন শেষে এ দেশের জনগন অর্থনীতির অবস্থান ঠিকই টের পাচ্ছেন।
দেশের এই অর্থনীতি সংকট সময়ে সবাইকে মিলিত ভাবে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে এবং অর্থনীতির সংকট মোকাবেলায় বিশেষ ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারী জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে দেশে টাকা বিদেশে পাচার রোধে কঠোর নজরদারী রাখতে হবে, দেশীয় কাঁচা মালে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে হবে, বিদেশী পণ্য ব্যবহারে ও বিলাশী জীবন যাপনে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন রাখতে হবে, দেশের মেধাবী জনশক্তিকে দেশের কাজে লাগাতে হবে, দেশ থেকে অন্য দেশে গ্যাস রপ্তানী না করিলে ভালো হয়, সরকারী অসাধু কর্মকর্তাদের উপর নজরদারী বাড়াতে হবে, এবং জনগণ ১ম-৯ম শ্রেনীর অনেক কর্মকর্তাদের কাছে যথাযত সম্মান ও কাংঙ্খিত সেবা দুটোই পাচ্ছে না।
উপরোক্ত বিষয়টি সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ ও গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিবেচনায় নিলে আমার মনে হয় বাংলাদেশ এই অর্থনীতি সংকট মোকাবেলায় আরো এক ধাপ সামনের দিকে অগ্রসর হবে এবং এদেশের মানুষ সোনার বাংলা বাস্তবায়নের রুপ বাস্তবে কিছুটা হলেও উপলব্দি করতে পারবে।
Development by: webnewsdesign.com