সরকারি দামের চেয়ে হাট-বাজারে মুল্য বেশি

সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২ | ৫:১৪ অপরাহ্ণ

সরকারি দামের চেয়ে হাট-বাজারে মুল্য বেশি
apps

রাজশাহীতে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদাম গুলোতে ধান ও গম সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে মাত্র দুটি উপজেলা নামমাত্র ধান সংগ্রহ করতে পারলেও গম সংগ্রহ শূন্যের কোঠায়।চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে হাট-বাজারে চালের দাম বেশী হলেও খুটিয়ে খুটিয়ে চাল সংগ্রহ হয়েছে এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ। চালকল মিল মালিকদের সাথে সরকারি চুক্তি থাকায় তারা পেছনে না হটতে পেরে খুবই ধীর গতিতে চাল সরবরাহ করছে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে এমনটাই বলছে খাদ্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা ।

রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৬৪ মে.টন। গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ২৬৪ মে.টন এবং চাল সংগ্রহ ১১ হাজার ৮৫৬.৫৯০ মে.টন।এর মধ্যে ধান সংগ্রহ শুধুমাত্র বাগমারা উপজেলা ৯ মে.টন এবং পুঠিয়া উপজেলা ২৫২.০০০ মে.টন সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। জেলায় বিন্দুমাত্রও গম সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। তবে চাল সংগ্রহ হয়েছে বরাদ্দের ৬০ ভাগ। এর মধ্যে বোয়ালিয়ায় ৯৮৯.১৯০ মে.টন, পবা উপজেলায় ২৫৬৯.৮৯০, মোহনপুর ৬৭৮.২১০, তানোর ৬৯৫.৩১০, গোদাগাড়ী ১৪২৪.৪৯০, বাগমারা ১৩৩.৬৮০, পুঠিয়া ৩৬৫.৮৮০ এবং দুর্গাপুর উপজেলা ১৮২.১৬০ থেকে মে.টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। বাঘা ও চারঘাট উপজেলা থেকে কোন চাল সংগ্রহ করতে পারেনি।

সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী চলতি মৌসুমে সরকার গত ২৮ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১০৮০ টাকা মন দরে ধান ও ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১১২০ টাকা মন দরে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করবে। তবে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চাইতে হাট-বাজারে দাম বেশী পাওয়ার কারণে সরকারি গুদামে ধান-গম দেয়নি কৃষকরা এমনটাই বলছে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে গম সংগ্রেহের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও মোটেই গম সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস।তবে কৃষকরা বলছে এবার বাজারে দাম বেশী আছে বলেই সরকারি খাদ্য গুদামে ধান-গম দেওয়া হ্েচ্ছা না তা পুরোপুরি সঠিক নয়। যখন হাট বাজারে দাম কম থাকে আর সরকার বেশী দামে ধান-গম সংগ্রহ করে তখন প্রকৃত কৃষকদের ধান-গম দেবার সুযোগ থাকে না। বাজারে বেশী দাম থাকলে ঝামেলামুক্ত ভাবে সেখানেই স্বাভাবিক নিয়মে ধান বিক্রি করবে কৃষকরা। খাদ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত নামমাত্র কৃষক ও রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন কৌশলে ধান দিয়ে থাকে। ফলে কৃষকরা ধান-গম দেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকরা ধান-গম বিক্রয়ের জন্য আবেদন তা যাচাই-বাছাই এবং কৃষকদের লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে। একজন কৃষক ১ মে.টন ধান-গম দিতে পারবে। তবে এবার কৃষক আবেদন করেনি বলছেন গোদাগাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।ধান সংগ্রহে কৃষকরা কৃষি অ্যাপে আবেদন করেছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম বলেন, আবেদন করেছিলো কিনা তা জানায়নি উপজেলা কৃষি অফিস। অপরদিকে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলছেন যতটুকু জানি খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে আমার সাথে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি।উপজেলার খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হাটবাজারে আমন ধান ও গমের দাম ভালো পেয়েছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-গম বিক্রির ক্ষেত্রে বেশি শুকানোসহ পরিশ্রম বেশি করতে হয় বলে হাট-বাজারে বিক্রিতেই আগ্রহ দেখিয়েছেন তাঁরা।

কৃষকদের অভিযোগ, এবার সরকারের চাইতে বাজারে দাম অনেক বেশী। রমক ভেদে ধান ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা মন ধরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমরা সেখানে ধান দিতে যাবো না। গমের বাজারও সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী। গম সরকার ২৮ টাকা কেজি দর দিয়েছে তবে হাট-বাজারে ৪০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।বাজরে যখন দাম কম থাকে তখন আমরা দিতে গেলে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তারা ধান-গমের নানান সমস্যা দেখিয়ে হয়রানি করে। অতচ কিছু রাজনৈতিক নেতা ও নামধারী কৃষকদের কাছে থেকে নানান কৌশল অবলম্বন করে ধান ক্রয় করে। অতচ ওই সব ধান-গম গুলো হয় মানহিন। খাদ্য গোডাউন গুলো এমন দুর্নীতিগ্রস্থ হওয়ায় কৃষকরা দাম দিতে আগ্রহ দেখায় না বলে মন্তব্য করেন কৃষকরা।গোদাগাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম বলেন, এবারের ধান-গম সংগ্রহ হচ্ছে না মূলত বাজারের চাইতে দাম কম হওয়ায়। কৃষকরা কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না ধান গম দিতে। ফলে আমাদের ধান-গম সংগ্রহ লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না। তবে এখনো কোন কৃষক যদি ধান দিতে আসে আমরা নিবো বলে জানান।

রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দিলদার মাহমুদ বলেন, সরকারি দামের চাইতে হাট-বাজারে ধান,গম ও চালের দাম অনেক বেশী থাকায় কোন কৃষক এসব দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে এবারে সরকারের বোরো সংগ্রহ লক্ষ অর্জন হচ্ছে না। জেলায় ধান সংগ্রহ এখন পর্যন্ত ২.৯৪ ভাগ এবং চাল ৬০ ভাগ সংগ্রহ হয়েছে। চালের দামও বেশী থাকায় চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকরা ৪০ টাকা কেজি দরে চাল দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে সরকারি চুক্তি থাকায় ধীর গতিতে সংগ্রহ অভিযান চলছে। এছাড়া গম সরকার ২৮ টাকা কেজি দরে মূল্য দিয়েছে তবে হাট-বাজারে ৪০ টাকা কেজি। ফলে সরকারি দাম চাইতে হাট-বাজারে মূল্য বেশী থাকায় তা সংগ্রহ সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।

Development by: webnewsdesign.com