সম্প্রতি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। দেশটির এমন ঘোষণার পরদিন থেকেই দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়। দুইদিনের মাথায় কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে দেশিয় জাতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সোমবার থেকে তারা দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন, যা এই সপ্তাহেও স্থিতিশীল রয়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হলে দাম আরও বাড়ার শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। তবে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।
রাজধানীর খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ এনে আমাদের বিক্রি করতে হয়। বাজারে দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াই, কমলে দাম কমিয়ে বিক্রি করি। আমাদের সীমিত লাভ থাকে। শুধু তাই নয় দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পেঁয়াজের বিক্রি অনেকাংশ কমে গেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে মিরপুরের খুচরা আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করেই কেজিতে ২০-৩০ টাকা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় মোকামে দাম বেড়েছে। এই কারণে আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারত রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরদিন দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়বে এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখানেও কারসাজি চক্র সক্রিয় রয়েছে। চাল, ডাল, তেল, মরিচের মত সিন্ডিকেটরা দাম বাড়িয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানালেন মিরপুরের কাজীপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ব্যর্থ করে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। জনগণকে জিম্মি করে এক একটি পণ্য থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার জন্যই এমনটি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাতারাতি যে কোনো পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা ভোক্তারা অসহায় হয়ে খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনছি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে জানালেন পরিবহন শ্রমিক আনিস। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ কবে কিনে খেয়েছি মনে নেই, বিদেশি পেঁয়াজই কিনি। তবে দামের কারণে পরিমাণ কমিয়ে নিতে হচ্ছে। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন করি সকালে বাজারে গেলে মাথা আর ঠিক থাকে না। প্রতিটি পণ্যই পরিমাণ কমিয়েও নিতে পারি না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত একমাসে দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকা বেড়ে ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ২৪ আগস্ট ৯ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। চীন, মিশর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পেঁয়াজ আনা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর (২০২১-২২) পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। অথচ আমাদের বাৎসরিক চাহিদা ২৮ লাখ টন। সে হিসাবে অন্তত আট লাখ টন পেঁয়াজ বেশি উৎপাদিত হয়েছে। উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। গত দুই অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়লেও ঘাটতির কারণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে।
তবে কৃষকের আগ্রহের কারণেই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। দাম বাড়ার প্রবণতা বন্ধে ও আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে, সরকার পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চাইছে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে ইতোমধ্যে ১৬ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ প্রণোদনার আওতায় নিবন্ধিত একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় এক কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি এমওপি সার ও নগদ দুই হাজার টাকা পাবে। স্থানীয় পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারকে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাজারকে মুক্ত রাখতে হবে। আর তা না হলে ভোক্তারা এর সুফল পাবে না।
Development by: webnewsdesign.com