তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপির একদল নেতা হুট করেই সংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে তকমা পেয়েছিলেন ‘সংস্কারবাদী’ হিসাবে। তখন অনেকেই ছাঁটাই হলেও দলে এখন পর্যন্ত টিকে থাকা নেতাও তাদের মাঝে কম না। আবারও তেমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত আছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সম্প্রতি এই আশঙ্কায় দলের বেশকিছু নেতাকর্মীর উপর চলছে নজরদারি। এমনকি তাদের সাথে বেশ দহরম মহরম চালানো ঐক্য ফ্রন্টের কিছু নেতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেশ সন্দেহের নজরে রেখেছে বিএনপি। এমন কাটাকুটি সময়ের মাঝেই দলের গুরুত্বপুর্ণ দুই ভাইস-প্রেসিডেন্টপকে নোটিশ পাঠিয়ে শোকজ করেছে দলটি।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গণমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাই কমান্ড সন্দেহ করছে দলে কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চালাচ্ছে। দল ভেঙে আল্টিমেটলি দলকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জানান, শওকত মাহমুদ ও মেজর হাফিজের আচরণে দল বেশ বিব্রত অবস্থায় আছে। তাই তাদেরকে শোকজ করে অন্যদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে। এখন তারা যদি পজেটিভ আচরণ করে ভালো। নয়ত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই দুই নেতার নাম না প্রকাশের শর্তে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, দলের বাইরে গিয়ে কোনো আচরণ বরদাস্ত করা যাবে না। সেটা করলে সেভাবেই হ্যান্ডেল করা হবে। তবে দুই এক জনের ছন্নছাড়া আচরণে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না।
এর আগে গত সোমবার দলকে না জানিয়ে রাজধানির একটি পয়েন্টে সরকার পতনের আন্দোলন ডাকা হয়। সেখানে বিএনপির কিছু কর্মীর পাশাপাশি জামাতের কিছু নেতাকর্মীকেও দেখা যায়। ওই বিক্ষোভে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট শওকত মাহমুদ। তবে তার উপস্থিতির বিষয়েও কেন্দ্র কিছু জানেনা বলা দাবি করেছিল।
ওই বিক্ষোভে শামিল না হলেও কাছাকছি স্থানেই ছিলেন ‘সংস্কারপন্থী’ নেতা ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি সেনা শাসনের আমলে খালেদা জিয়া ও তারক রহমানকে বাদ দিয়ে দল্কে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন,
দলের চভেয়ারপারসন দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড পাওয়ার পরেও এখন বিশেষ বিবেচনায় বাইরে আছেন। এই মুহুর্তে দলটি আন্দোলন করে সরকারের সাথে সাপে-নেউলের সম্পর্ক করতে চাচ্ছেন না।
তবে তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে বেশ পরিচিত ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বারবার বিএনপিকে তাগিদ দিচ্ছেন আন্দোলনে আসার। অতর্কিত ও বিএনপির কাছে বিতর্কিত ওই আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেলেন তারা সবাই জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে এর কিছু সময় পূর্বে প্রেসক্লাবে একটি সভা শেষ করে গিয়েছিলেন। ওই সভায় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও সম্প্রতি সুর মিলাচ্ছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে।
ওই বিক্ষোভের পরে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে লোক পাঠিয়ে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বিষোয়টিকে নিয়ে দলের হাই কমান্ড জটিল এক ধাঁধায় পড়ে গিয়েছেন । এমনকি লন্ডনে বসে স্কাইপে দল পরিচালনা করা তারেক রহমানও বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানা গেছে। তিনি দলের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টির পেছনে কাদের হাত আছে তা খতিয়ে দেখতে।
দলের দুঃসময়ের কান্ডারী হিসাবে পরিচিত রুহুল কবির রিজভী জানান, আমরা এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেইনি৷ জানিও না আমরা। দল থেকে এমন কোনো ইঙ্গিতও আসেনি। যারা সেখানে গেছেন, তারা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে গেছেন। তারা যদি বিএনপির নাম ব্যবহার করে দলকে বিব্রত করতে চায়, নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। সেটা অন্য আলাপ
শোকজ পাওয়া হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, আমি সব জবাব আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব। এখন কিছু বলতে চাইনা। তিন/চার দিন সময় লাগবে।
দল থেকে পদত্যাগের কথা ভাবছেন কি না- এমন প্রশ্নে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘তিন/চারদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে জানাব সব।’
তবে শওকত মাহমুদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে সে সময়ের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া দলে আলাদা কমিটি গঠনের চেষ্টায় ছিলেন। তারা পরিচিত হয়ে উঠেন সংস্কারপন্থি অংশ হিসেবে। তবে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দুই বছরেও সফল হননি তারা। বরং মান্নান ভুঁইয়াসহ তার সহযোগীরা দল থেকে ছিটকে যান। যদিও ওই ঘটনা দলে স্থানীয় বিভেদ রেখা তৈরি করে দিয়েছে।
মান্নান ভুঁইয়ার অনুসারীদের বড় অংশই এক পর্যায়ে বিএনপিতে ফিরে এলেও দলে তাদের অবস্থান দুর্বল।
সূত্র-নিউজবাংলা।
Development by: webnewsdesign.com