শুধু আইন নয়, চাই মানসিকতার বদল!

বুধবার, ০৭ অক্টোবর ২০২০ | ১০:২৬ অপরাহ্ণ

শুধু আইন নয়, চাই মানসিকতার বদল!
apps

শুধু আইন নয়, চাই মানসিকতার বদল!
তবেই ধর্ষন মুক্ত হবে সোনার বাংলাদেশ।

রেপ/ধর্ষন যেটা এখন একটি স্লোগানে পরিনত হয়েছে।
বিশ্বের সব দেশেই ধর্ষন একটি নিন্দনীয় ঘটনা।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা ধর্ষন কি! শুধু শুধু স্লোগান নিয়ে নামি।

আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্যে!
আমরা বাঙালি জাতি কি স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি? নাকি নির্যাতিত,নিপেরিতভাবে বসবাস করছি।
আজ তো এই স্বাধীন দেশে আমার মা-বোনেরা সুরক্ষিত নেই।
আজ তারা কেন নিরাপদে নেই। তাহলে কি বোঝা যায় আমাদের স্বাধীনতা কি শুধু কাগজেই লিপিবদ্ধ নাকি কর্মক্ষেতে। কেন এই স্বাধীন দেশে ধর্ষন একটি স্লোগানে পরিনত হল?

দেশের পাগলিটাও আজ রক্ষা পায় না স্বাধীন দেশের ভদ্র সমাজের হাত থেকে।
বাজারে গেলে শোনা যায় বিউটি পাগলি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
বাহ্!
পাগলিটাকে অন্তঃসত্ত্বা করেছে কে?
কোনো পাগলে? নাকি ভদ্র সমাজের কেউ!
ছোট নাতনিটাও রক্ষা পায় না তার বৃদ্ধ নানার কাছ থেকে। ভাবি বাঁচতে পারে না তার দেবরের কাছ থেকে।
এই স্বাধীন দেশেই ধর্ষিত হয়েছিল বাবার মৃত্যুর দিন হীরামনি। তনু, মাজেদার কথা না হয় বাদ ই দিলাম। হীরামনি কি দোষ ছিলো?
সমাজের অনেক গুনীবানরা বলবে মেয়ের ইচ্ছা না থাকলে একটা ছেলে কিভাবে ধর্ষিত করে তাকে।

আরে গুনী ভাই, কোন মেয়ে আছে সমাজে যার বাবার মৃত্যুর দিন সে এরকম খারাপ কাজে লিপ্ত হবে? কোন মেয়ে আছে ৮০ বছরের বৃদ্ধ নানার সাথে খারাপ কাজ করবে?
উত্তর দিন?
উত্তর দাও জাতি!

স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েটি কি আজ রাস্তাঘাট ও তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ? ধর্ষণ কী সেটা বোঝার ক্ষমতাও যার হয়নি সে কেন ধর্ষিত? সুশীল সমাজ নিরব কেন?
জানি উত্তর পাব না আমরা?

তবে, একটা কথা বলি যে পতিতার মূল্যে ৩০০ টাকা। সে দেশে জোর করে ধর্ষন করার কি দরকার ভাই।
পতিতালয়ের তো কোনো অভাব নেই।

বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৪ জন নারী ধর্ষিত হয়। বিগত বছর গুলোর তুলনায় বর্তমানে ধর্ষনের হার দ্বিগুন। তাছারা এক বছরে যৌন নির্যাতন বেড়েছে প্রায় ৭০ ভাগ।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতি ১০ জন পুরুষের ১ জন পুরুষ জীবনের কোন না কোন সময় ধর্ষণ করেছে এবং তাদের ১০ শতাংশও আইনী ঝামেলা পোহায় নি। আমাদের বিচার ব্যাবস্থা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।

মিসর, সৌদি আরব, চিন, ইরান, গ্রিস, নর্থ কোরিয়াসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রের ধর্ষনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বাংলাদের দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী ধর্ষনের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ১০ বছরের উর্উর্ধ্বে কারাদণ্ড বা তদ্রূপ অর্থদণ্ড। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন -২০০০ এর ৯ ধারা অনুযায়ী ধর্ষনের শাস্তি যাবৎ জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ কতটুকু তা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

জানি আইনের বিধিমালা প্রয়োগ করলেও কাজ হবে না।
যতদিন মন মানসিকতা পরিবর্তন না হবে।
রুখে দাড়াতে হবে আমাদের।
যুদ্ধে বিজয় এমনিই অর্জন করেনি আমরা।
তেমনি প্রতিবাদ হয়ে জ্বলতে হবে আমাদের।
কে আছ নও-জোয়ান?
বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের মতো আবার ডাক দাও।
এবার নিজের মা-বোনের জন্য যুদ্ধ করতে হবে।
ভেঙ্গে দিতে হবে ঐ লুণ্ঠিতদের কালো হাত। ধর্ষিত বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশে পরিনত করতে হবে আবার।

আজ বীর বাঙালি নির্বোধ, জ্ঞানহীন;
সবাই ধর্ষণ কে তামিল মুভি মনে করে দর্শক হিসেবে তামাশা দেখছে!
ছি! জাতি ছি!
আমরা তো বাঙালি জাতি।
কিভাবে নিজের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে হয়;
তা, তো মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা শিখেছি।
তাহলে এই বাঙালি জাতির দ্বারা কেন দিন দিন ধর্ষিত হচ্ছে আমার মা-বোন?
স্পষ্টভাবে বাঙ্গালী জাতি আজ নির্বাক, নির্লজ্জ, লজ্জিত…
ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে এ জাতির অমানিশা,
আর কত দেখতে হবে অবুঝ শিশুর মৃত্যু,
আর কত শুনতে হবে গনধর্ষিত আমার মা-বোন।
বলো! হে জাতি বলো!
আজ ধর্ষিতা আমার মা-বোন নয়,
ধর্ষিত হলো এই নির্বাক,নির্লজ্জ জাতি।
যে জাতির বিবেকের দরজা বন্ধ।
এরপরেও তোমার বিবেক কি অন্ধ?
ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করো জাতি,
এই সোনার মাটিতে আর কোন ধর্ষিত মা-বোনের আর্তনাদ শুনতে চাই না।
আমার ধর্ষিত মা-বোনের আর্তনাদে আসমান পর্যন্ত থড়থড় করে কেঁপে উঠে,
তারপরেও এ জাতি চুপ কেন?
ধিক্কার জানাই এ জাতির নিরবতা কে!
কে আছ নও-জোয়ান?
এবার হাঁকাতে হবে ঘুমন্ত জাতির ভবিষ্যৎ।
কে কোথায় বাস করছো বাংলার দামাল ছেলেরা!
ছুটে আসো প্রতিবাদী হয়ে,
জ্বলে ওঠো সবাই।
একত্রিত হয়ে মহা-প্রলয়ের ডাক দিতে হবে এবার।
হে জাতি তোমার কি মনে নেই ১৯৭১ এর যুদ্ধের কথা!
মাত্র নয় মাসেই দেশ স্বাধীন করে ছিলাম আমরা।
এবার নিজের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার্থে আবার যুদ্ধ করতে হবে ঐ হিংস্র দানব, হায়নাদের উপর।
জাগো বাঙালি জাগো..
তুমি না জাগলে যে এই স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা পূর্নতা পাবে না।
মুক্তির সেই স্লোগান নিয়ে আবার রাজপথ রঞ্জিত করতে হবে।
একত্রিত হয়ে আবার ডাক দাও-
জয় বাংলা…
জাগো বাঙালি জাগো….
স্বাধীন দেশ থেকে ধর্ষকদের নির্মূল কর।

ধর্ষণের দ্রুত বিচার এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা খুব জরুরি। ধর্ষিতার চিকিৎসা ও পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেইসাথে সামাজিক মুল্যবোধ, নৈতিকতা ও দর্শনের উন্নয়ন করতে হবে এবং নারীর প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে জীবন পাল্টে যাবে। নারীকে ভোগ্যপণ্য নয়, মানুষ হিসেবে ভাবুন।

বাঙালিদের নিজেদের ভাগ্যের চাকা নিজেদেরকে ঘোরাতে হবে।
আজ যদি প্রতিবাদ ঘরে না তুলি। আজ রুখে না দাড়াই তাহলে কাল বা পড়শু শোনা যাবে ধর্ষনের ভুক্তভোগী আপনার বা আমার মা-বোন।
অনেক দেরী হয়ে গেছে আমার।
এবার রুখে দাড়াতে হবে।
পাথরের মতো শক্ত হয়ে মাঠে নামতে হবে কেউ যেন আমাদের সরাতে না পারে।

পাহাড় কিংবা সমতলে এবার লড়াই হবে সমানতলে।

লেখকঃ তাসফীর ইসলাম (ইমরান)
অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীঃ
বাসাই – রামমালা, কুমিল্লা
বিভাগঃ সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং
(১০৪ তম ব্যাচ)।

Development by: webnewsdesign.com