শিশু মৃত্যুর যত কারণ রোগ-শোক ছাড়াই

সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ | ১:৫৯ অপরাহ্ণ

শিশু মৃত্যুর যত কারণ রোগ-শোক ছাড়াই
apps

বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার গত কয়েক দশকে কমলেও সমস্যাটি পুরোপুরি সমাধান হয়নি। নানা উন্নয়নমূলক উদ্যোগের কারণে সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, শিশু মৃত্যুর কারণ হিসেবে রোগ ছাড়াও সামাজিক ও পরিবেশগত অনেক বিষয় সামনে এসেছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু, অপুষ্টি, দুর্ঘটনা, নিরাপত্তার অভাব এবং সঠিক যত্ন না পাওয়ার মতো সমস্যাগুলো শিশুমৃত্যুর নতুন রূপ ধারণ করেছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অধিকাংশ শিশুর মৃত্যু সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ঘটে, যখন তারা বয়স্কদের তত্ত্বাবধানের বাইরে থাকে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং নদীভাঙনও শিশুমৃত্যুর হার বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যায় প্রায় ২০ লাখ শিশু বিপদাপন্ন অবস্থায় পড়ে, কারণ তারা জরুরি সেবা ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছিল।দুর্যোগের পরপরই সঠিক ত্রাণসেবা না পাওয়া এবং আশ্রয়স্থলগুলোর অপ্রতুলতা অনেক শিশুকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

অপুষ্টি

অপুষ্টিও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ। যদিও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে, তবু দরিদ্র পরিবারগুলোতে পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব রয়ে গেছে। ইউনিসেফের মতে, পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে শিশুরা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।এমনকি স্বাভাবিক অসুস্থতাও প্রাণঘাতী হতে পারে অপুষ্টির কারণে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু

সবচেয়ে বড় শত্রু বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর। প্রতিবছর গড়ে ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।বিশেষত গ্রামীণ এলাকাগুলোতে পুকুর, খাল এবং জলাশয়গুলো শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় এই সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়ছে।

পারিবারিক অবহেলা

শিশুমৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ হলো অভিভাবকদের অবহেলা ও অসচেতনতা। দরিদ্র পরিবারগুলোতে পিতামাতারা কাজের চাপে ব্যস্ত থাকায় শিশুদের পর্যাপ্ত নজরদারি করতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে অনিরাপদ পরিবেশে বড় হওয়া শিশুরা দুর্ঘটনার শিকার হয়। এছাড়া, অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের কারণে শিশুর প্রতি অবহেলা দেখা দেয়, যা তার জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

ইউরোপীয় ইস্তাম্বুলে কয়েকদিনইউরোপীয় ইস্তাম্বুলে কয়েকদিন

এছাড়াও হেলথ ও ইনজুরি সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ইনজুরি বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি শিশু প্রাণ হারায় আত্মহত্যা (১৪.৭ শতাংশ) করে। যার সংখ্যায় অধিক ১৮ বয়সের কম শিশু।

শিশুমৃত্যু কমাতে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমাতে শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা এবং জলাধারগুলোর চারপাশে সুরক্ষা বেষ্টনী স্থাপন অপরিহার্য। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং ঘরোয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Development by: webnewsdesign.com